সারাদেশে একের পর এক খবর বেড়িয়ে আসার পর এবার তোলপাড় সৃষ্টি করছে পাপিয়ার পাপের নানা কান্ড নিয়ে । এই পাপের অশিংদার হবে না নারায়ণগঞ্জ, তা কি করে সম্ভব ? নানা বড় ধরণের অপকর্ম – অঘটনের নেপথ্যে নারায়ণগঞ্জের কারো না কারো নাম জুড়েই থাকে । আর পাপিয়ার এমন সারাদেশ তোলপাড় করা কান্ডের অনেক দিন পর বেড়িয়ে আসলো নারায়ণগঞ্জের দুই অপরাধীর নাম। যাদের পাপের টাকায় নারায়ণগঞ্জে অনেক অপরাধ সংঘঠিত হওয়ার পর এবার পাপিয়ার পাপের সাথে জড়িয়ে গেলো নারায়ণগঞ্জে বহু পাপে পাপিষ্ঠ চিনি চোরা ফজলুর রহমান ও সাবেক মন্ত্রী রেজাউল করিমের ভাই বজলুর রহমান ও অসংখ্য অপরাধের হোতা নারায়ণগঞ্জের আরেক ব্যবসায়ী জিএম হায়দার আলী ( বাবলুর নাম ) নাম । বিএনপি ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় বজলু, ফজলু, রেজাউল, জিএম হাায়দার আলীসহ এই চক্রের অপরাধীদের নানা কেলেংকারীর তথ্যও উঠে আসছে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ……! যা নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনার ঝড় চলছে নারায়ণগঞ্জ জুড়ে ।
ওয়েস্টিন হোটেলে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) ফুটেজ ও পাপিয়ার মোবাইল ফোনের ভিডিও পর্যালোচনা করে এক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। শামীম নূর পাপিয়ার আস্তানায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল শীর্ষ পর্যায়ের এমন ব্যক্তিদের তালিকাটি করেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। ওই তালিকায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও সংসদ সদস্যসহ ক্ষমতাসীন দলের একাধিক শীর্ষ নেতা রয়েছেন।
গোয়েন্দা সংস্থার ওই তালিকা অনুযায়ী, পাপিয়ার আস্তানায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল অন্তত ২১ জনের। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এই ব্যক্তিত্বদের বাইরে গত এক মাসের ভিডিও ফুটেজে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের আরও ৫ জনকে কয়েক দফা ঐ আস্তানায় যেতে দেখা গেছে।
এদিকে, পাপিয়ার ডেরায় নিয়মিত যাতায়েত এর তালিকায় নারায়ণগঞ্জের দুই জন শীর্ষ ব্যবসায়ীর নাম আসায় ব্যপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এদের একজন বিএনপি আমলের এক প্রতিমন্ত্রীর ভাই ও অপরজন একটি শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের সহ-সভাপতি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ওয়েস্টিন হোটেলের যে ‘প্রেসিডেনশিয়াল স্যুট’ ভাড়া নিয়ে পাপিয়া তার ‘পাপের’ আস্তানা গড়ে তুলেছিলেন। গোয়েন্দা সংস্থাটি তার আশপাশে থাকা সিসি ক্যামেরার গত এক মাসের ফুটেজ সংগ্রহ করে। এসব ফুটেজ পর্যালোচনায় বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়ার আস্তানায় যাতায়াত ছিল এমন ৫ জন সচিব, ১০ জন সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক দুই নেতা, দুই জন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। এছাড়া তালিকায় আছেন ছাত্রলীগ সাবেক এক সভাপতি এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক এক শীর্ষ নেতা। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওই নেতা পদ হারিয়েছেন।
ইতিমধ্যেই ওই তালিকাসহ একটি প্রতিবেদন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দাখিল করা হয়েছে। অন্যদিকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি পাপিয়া ও তার স্বামী সুমনসহ অপর দুই সঙ্গীকে গ্রেফতারের দিনই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা এক শীর্ষ কর্মকর্তা পাপিয়াকে ১৭ বার ফোন করেছিলেন বলে গোয়েন্দা সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
অন্য দিকে একটি তালিকা স্যোশাল মিডিয়াতে বেশ ভাইরাল হয়েছে গত দুই দিন ধরে। ওই তালিকার ১০ নম্বরে দেখা যাচ্ছে ব্যবসায়ী বজলুর রহমানের নাম। যিনি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই এর পরিচালক।। এছাড়া বজলুর রহমানের ভাই রেজাউল করীম সোনারগায়ের সােবেক এমপি ও বিএনপি আমলে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
ভাইরাল হওয়া তালিকার ২০ নম্বরে দেখা যায় নারায়ণগঞ্জের আরেক ব্যবসায়ী জিএম হায়দার আলীর নাম। যিনি বাংলাদেশ নিট ডাইং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি।
তবে, নারায়ণগঞ্জের এই দুইজন এখনও এ বিষয়ে মুখ খুলেননি।
পাপিয়ার মোবাইল ফোনের কললিস্ট থেকে এসব তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। সূত্রটি জানিয়েছে, ওই কর্মকর্তা ‘ভয়াবহ বিপদের’ কথা জানিয়ে পাপিয়া দম্পতিকে দ্রুত দেশ ছাড়ার পরামর্শ দেন। এর পরই পাপিয়া দম্পতি দুই সহযোগীকে নিয়ে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান।
তবে তার আগেই এ খবর পৌঁছে যায় র্যাবের অনুসন্ধানকারী দলটির কাছে। বিমানবন্দরে বোর্ডিং কার্ড সংগ্রহের সময় সাদা পোশাকে র্যাবের ওই দলটি তাদের ঘিরে ধরে। পরে র্যাব সদস্যরা তাদের আটক করে।
এদিকে পাপিয়ার আস্তানায় যাতায়াতকারীদের নামের তালিকা চেয়ে ওয়েস্টিন হোটেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার বিকালে দুদকের পরিচালক কাজী শফিকুল আলম স্বাক্ষরিত এ চিঠি পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, কারা ওই আস্তানায় যাতায়াত করত তাদের নামসহ পদ-পদবি উল্লেখ করে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে দুদকে ফেরৎ পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতারের পর আলোচনায় এলে পাপিয়ার অবৈধ সম্পদের খোঁজে নামে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক শাহিন আরাকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেয়া হয়।
গোয়েন্দা সংস্থার জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে যাদের নাম পাওয়া গেছে সেই তালিকাসহ পাপিয়াকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তার আলোকে একটি প্রতিবেদন তৈরির পর সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দাখিল করা হয়েছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। ওই কর্মকর্তা বলেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তার আস্তানায় আসা ব্যক্তিদের গোপন ভিডিও সংগ্রহ করে তা প্রকাশের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকাসহ বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে নিতেন।
পাপিয়ার নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ছায়া তদন্তের দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা সংস্থাটি তার রাজনীতিতে আসা, উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে একটি প্রোফাইলও তৈরি করেছে। ওই প্রোফাইলের তথ্যানুযায়ী, ২০০৬ সালে কলেজে পা রাখার পর থেকেই উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে জড়িয়ে পড়েন পাপিয়া।
একপর্যায়ে নরসিংদী সরকারি কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের একটি রুমে অপকর্মের আস্তানা গড়ে তোলে। সেখানে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বহিরাগত মেয়েদের এনে দেহব্যবসা করাতেন। ওই সময় মেয়র লোকমানের খুব কাছের হিসেবে সবাই তাকে চিনত এবং লোকমান তাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতেন।
আর এসব করতে গিয়ে একটি ক্যাডার বাহিনীও গড়ে তোলেন পাপিয়া। পাপিয়ার প্রোফাইল থেকে জানা যায়, নরসিংদী কলেজে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকাবস্থায় লোকমানের আরেক ঘনিষ্ঠ কর্মী সুমনের সঙ্গেও পাপিয়ার পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা হয়। ঘনিষ্ঠতার একপর্যায়ে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সুমন তা প্রত্যাখ্যান করেন। এ নিয়ে পাপিয়া ও সুমন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। পরে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে পাপিয়া এক প্রকার জোর করেই সুমনকে বিয়ে করেন।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, আটকের পর পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে যেসব ভয়ঙ্কর তথ্য পাওয়া গেছে এখনও সেসব তথ্যের যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারের পর পাপিয়ার অপরাধ জগতের বিস্তারিত তথ্য জানতে তিন মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামী সুমনকে ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। বর্তমানে তারা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।









Discussion about this post