কিন্তু এই সর্ম্পক মেনে নিতে পারেনি নিহত পাপিয়ার ভাই লিঙ্গান্তর হওয়া সাইদুর রহমান ওরফে (সাম্মি)। সাম্মি আরিফুল ইসলামকে পাওয়ার জন্য পাপিয়ার সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি করত ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের পাপিয়া হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিকেশন (পিবিআই)।
ত্রিভুজ প্রেমের দ্বন্দ্বের জের ধরে (দুই বোন এক ছেলেকে পাওয়া নিয়ে) পাপিয়ার আপন ভাই লিঙ্গান্তর হওয়া সাইদুর রহমান ওরফে সাম্মির হাতে খুন হয় পাপিয়া। খুনের পর পুলিশী ঝামেলা এড়ানোর জন্য বাবা, ভাই ও কথিত প্রেমিক মিলে পরিকল্পনা করে লাশ গুমের জন্য।
এমনই ক্লু লেস একটি মামলার রহস্য উদঘাটন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিকেশন (পিবিআই) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।
তিনি জানান, চলতি বছরের ২৮ মে আড়াইহাজার থানার শিমুলিয়া এলাকায় অজ্ঞাত এক তরুনীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই সময় পিবিআই অজ্ঞাত তরুনীর ফিঙ্গার প্রিন্ট (আঙ্গুলের) ছাপ সংগ্রহ করে। পরবর্তীক্ষণে তদন্তের মাধ্যমে তারা জানতে পারে, নিহতের নাম পাপিয়া। বাবা জয়নাল মিয়া। বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানার হলদিয়া গ্রামে।
কিছুদির পর মামলাটি পুলিশ হেড কোয়াটার্সের মাধ্যমে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পিবিআই মামলা তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তৌহিদুল ইসলাম আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় গত ১৮ নভেম্বর পাপিয়ার কথিত প্রেমিক আরিফুর ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আরিফুল ইসলাম হত্যার দায় স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওছার আলমের আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন।
আরিফুল ইসলাম জানান, পাপিয়া নগরীর একটি গার্মেন্টে এবং সে ফকির গার্মেন্টে কাজ করার সুবাধে তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে তাদের মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। পরে এক পর্যায়ে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বিয়ের আগেই আরিফুর রহমান তার নিজের ভোটার আইডি কার্ড দেখিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের মুক্তিনগর এলাকায় স্বামী স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন।
কিন্তু এই সর্ম্পক মেনে নিতে পারেনি নিহত পাপিয়ার ভাই লিঙ্গান্তর হওয়া সাইদুর রহমান ওরফে (সাম্মি)। সাম্মি আরিফুল ইসলামকে পাওয়ার জন্য পাপিয়ার সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি করত।
ঘটনার (২৭ মে) দিন পাপিয়া, প্রেমিক আরিফুর রহমান ও লিঙ্গান্তর হওয়া সাম্মি একই বাসায় অবস্থান করছিলো। ওই দিন তাকে নিয়ে দুই বোনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। এ নিয়ে আরিফ রাগ হয়ে বের হয়ে পাশের বাড়িতে অবস্থান নেয়। দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর ওই ঘরে গিয়ে দেখেন পাপিয়ার নিথর দেহে খাটের মধ্যে পড়ে আছে।
এ সময় সাম্মি আরিফুলকে বলে পাপিয়া বেঁচে আছে। পরে তারা দুজন মিলে একজন ডাক্তার ডেকে এনে নিশ্চিত হয় পাপিয়া মারা গেছে। সাম্মির মাধ্যমে তারা বাবা জয়নাল মিয়া পাপিয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে। কিন্তু করোনার দুযোর্গের সময় লকডাউন চলায় পাপিয়ার বাবা আড়াইহাজারের স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহযোগীতা চেয়ে লাশ মাটি দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা জানান, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ছাড়া লাশ গ্রামে ঢুকতে ও মাটি দিতে দেওয়া হবে না।
মাটি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পাপিয়ার বাবা জয়নাল মিয়া, ছেলে মামুন , মেয়ে সাম্মি ও প্রেমিক আরিফুর ইসলাম মিলে পরিকল্পনা করে লাশ ভৈরব ব্রিজে নিয়ে নদীতে ফেলে গুম করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয় একটি অ্যাম্বুলেন্স। পথে পুলিশের একাধিক চেকপোষ্ট থাকায় পরিকল্পনা থেকে কিছুটা সড়ে এসে আড়াইহাজারের শিমুলিয়া এলাকায় রাস্তার পাশে লাশ ফেলে দিয়ে সবাই পালিয়ে যায়।
পিবিআই পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, প্রকৃত হত্যাকাণ্ড কে ঘটিয়েছে তা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া না গেলেও লাশ গুমের সঙ্গে জড়িতরা শনাক্ত হয়েছে। লাশ গুমের অভিযোগে আরিফুল ইসলাম ও পাপিয়ার বাবা জয়নাল মিয়াকে পিবিআই গ্রেপ্তার করেছে। মুল আসামি তীতৃয় লিঙ্গে স্থানান্তর হওয়া সাম্মি, সাম্মির ভাই মামুন ও অ্যাম্ব্যুলেন্সের চালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।









Discussion about this post