এবার বোমা ফাটালেন অ্যাডভোকেট সুমন মিয়া। স্পষ্টভাষী হিসেবে পরিচিত সুমন মিয়ার ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনার, বিশ্লেষণ । অনেকেই বলেছেন, প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের এই দূর্গন্ধ অনেক দূরে ভেসে যায়
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট সুমন মিয়া তার স্ট্যাটাসে লিখেছেম, বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের মধ্যে অভিযোগ রয়েছে নির্বাচন হলে কেউবা নারাণগঞ্জ ক্লাবে ৩০১ নং রুমে প্যানেল বিক্রি করে দেয়। আবার কেউ বা নিজ পরিবারের সদস্যদের নারায়ণগঞ্জ জেলার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ওসমানদের ছাড় দেয়।
৪ নভেম্বর তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টসে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ সকল কথা উল্লেখ করেন।
ওই স্ট্যাটাসে অ্যাডভোকেট সুমন মিয়া উল্লেখ করেন, নারাণণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের রাজনীতিতে দুই বলয়ের গ্রুপিং স্পষ্ট। গত এক যুগ যাবত আইনজীবী সমিতিতে বিএনপি পন্থী আইনজীবীর সংখ্যা অধিক হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনে ভরাডুবি হয়।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের মধ্যে অভিযোগ রয়েছে নির্বাচন হলে কেউবা নারাণগঞ্জ ক্লাবে ৩০১ নং রুমে প্যানেল বিক্রি করে দেয়। আবার কেউ বা নিজ পরিবারের সদস্যদের নারায়ণগঞ্জ জেলার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ওসমানদের ছায় দেয়। এবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি পন্থী আইনজীবীরা স্যার, ভাইয়ের বলয়কে পরিহার করতে চায় এবং বিএনপিকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে নির্বাচনে ভোটদানের মাধ্যমে ফোরামের নেতা নির্বাচন করতে চায়।
বিএনপিন্থী আইনজীবীদের একটি সূত্রে জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার শীর্ষ আইনজীবীরা নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে একটি মিটিং করেন। ওই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির, অ্যাডভোকেট রাকিবুল ইসলাম শিমুল, অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান শাহীন সহ আরও কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী।
মিটিংয়ের শেষাংষে তাদের সাথে এসে যোগ দেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। আর তাদের সকলের একটা আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন ফোরামের সভাপতি পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির।
ওই মিটিংয়ের মূল ভূমিকায় ছিলেন অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস। মূল আলোচ্য বিষয় ছিল নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি। আর ফোরামে কমিটি প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসের বক্তব্য ছিল, অন্যান্য জেলাগুলোতে ফোরামের সম্মেলন হলেও নারায়ণগঞ্জে সম্মেলন করা যাবে না। যদি সম্মেলনের মাধ্যমে ফোরামের কমিটি হয় তাহলে নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বিলীন হয়ে যাবে।
আর তাই সকলের সাথে সমন্বয় করে সম্মেলনের বাইরে গিয়ে ফোরামের কমিটি করতে হবে। আর এক্ষেত্রে ফোরামের কমিটি নিয়ে সরব থাকা সভাপতি পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির ও অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাষানীর মধ্যে আব্দুল হামিদ ভাষানীকে সভাপতি হিসেবে মেনে নিবেন। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় থাকা অ্যাডভোকে আজিজ আল মানুম ও আবুল কালাম আজাদ জাকিরের মধ্যে জাকিরকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গ্রহণ করবেন।
প্রয়োজনে তারা বিএনপির অভিভাবক খ্যাত অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের সাথে কথা বলবেন। কিন্তু এই প্রস্তাবনা অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির কোনোভাবেই মানবেন না। তিনি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের উপর আস্থাশীল না।
অপরদিকে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জাকিরের নাম আসার গুঞ্জনে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় তীব্র অনিহা রয়েছে। আবুল কালাম আজাদ জাকিরকে বিএনপিপন্থী সাধারণ আইনজীবীরা মেনে নিবে না। কারণ তার বিরুদ্ধে সরকারী দলের নেতাকর্মীদের সাথে আঁতাতের অভিযোগ রয়েছে। সেই সাথে তিনি বিগত সময়ে জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস বলেন, কমিটি নিয়ে যারা পদপ্রার্থী তারা এসব বিষয় নিয়ে বলতে পারবেন। আমি শুধুমাত্র ওই মিটিংয়ে একজন সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। যারা শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আছেন তারা এসকল বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।
সূত্র বলছে, অনেকদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী ফোরামের কমিটি আটকে রয়েছে। সবশেষ ২০১৭ সালের ৭ জুন অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবিরকে সভাপতি এবং অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মোল্লাকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৮৭ বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়ছিল। কিন্তু এই কমিটিকে মেনে নেননি আইনজীবীদের একাংশ। ওই বছরের ১৮ জুন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের হানিফ খান মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে এ কমিটিকে ‘অগণতান্ত্রিক ও বে-আইনি’ আখ্যায়িত করে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে ১৪০ জন আইনজীবী পদত্যাগ করেন।
তারপরেও নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালত পাড়ায় সেই কমিটির কার্যক্রম চলে আসছিল। পরবর্তীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সকল জেলা কমিটি বাতিল করা হয়। যার ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটিও বাতিল হয়ে গিয়েছিল।
এরই মধ্যে ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আর এই কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকেই সারাদেশেই সরব হয়ে উঠে আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দরা। যার ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়াতেও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দরা সরব হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ও প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া থেমে যায়। এবার করোনা ভাইরাসের সংক্রমন কমে আসায় আবারও নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় কমিটি নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।









Discussion about this post