ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগর এলাকার মো. মোস্তফার দ্বিতীয় ছেলে দ্বীন ইসলাম (৪১)। তিনি একজন ফুচকা বিক্রেতা। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে কানাইনগর পশ্চিমপাড়া এলাকায় তার বসবাস। সহজ-সরল বিনয়ী দ্বীন ইসলাম ফুচকা বিক্রি করে এলাকার ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেছেন। রাজনীতি কিংবা ঝগড়া বিবাদে না জড়ানো এবং মুখে সদা হাসি লেগে থাকায় ছোট বড় সবার প্রিয় দ্বীন ইসলাম।
দ্বীন ইসলাম এবার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মেম্বার (সদস্য) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রাত পোহালেই ১১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার পদে অংশ নিয়েছেন এই ফুচকা বিক্রেতা।
তার প্রতীক টর্চলাইট। তবে দ্বীন ইসলামের অভিযোগ, নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা অনেক চেষ্টা চালিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তারা সফল হতে পারেননি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টিনের দুচালা ঘরে দুই মেয়ে এবং স্ত্রী নিয়ে বসবাস দ্বীন ইসলামের। ঘরে তেমন আসবাবপত্র নেই। টিনের ছোট ছিদ্র দিয়ে ঘরে ঘরে রোদের আলো প্রবেশ করছে। পাশে রয়েছে একচালা টিনের একটি গোয়ালঘর, বাথরুম ও টিউবওয়েল।
আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকা সত্ত্বেও কেন নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, এমন প্রশ্নে কিছুটা বিব্রত হলেও নমনীয় স্বরে স্পষ্ট ভাষায় দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘করোনায় লকডাউনের শুরুতে আমার ফুচকা বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। তাই সাহায্য-সহযোগিতার জন্য স্থানীয় মেম্বারদের কাছে যাই। কিন্তু তারা কোনো সহযোগিতা করেননি। এমনিভাবে আরও অনেকেই সাহায্য না পেয়ে ফিরে গেছে। তাই আমি প্রতিজ্ঞা করেছি মেম্বার নির্বাচন করবো। এসব অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াবো যাতে কাউকে না খেয়ে থাকতে না হয়। এজন্য আমি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি।’
দ্বীন ইসলাম প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আর বিকেলে প্রসন্ননগর ও কালীনগর এলাকায় ঘুরে ফুচকা বিক্রি করেন। ফুচকা বিক্রি করেই তার সংসার চলে। ফুচকা বিক্রি করে জমানো টাকা দিয়ে বাবার জমিতে পাঁচ বছর আগে ঘরে তুলে বসবাস করছেন।
দ্বীন ইসলাম সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘আমার কেউ নাই কিন্তু আল্লাহ আছে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমা দেওয়া ও প্রচারণা সব আমি একাই করছি। দশ জনে দশ রকমের কথা বলে। কেউ সমর্থন করে আবার কেউ অবহেলা করে। মূলত ফেরিওয়ালা মেম্বার প্রার্থী হয়েছি দেখে অবহেলা করে। টাকা থাকলে কেউ এটা করতো না।’
‘এ ওয়ার্ডে আমিসহ পাঁচজন মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। কয়েকজন প্রার্থী চেয়েছেন এলাকার মাতব্বর ও মুরব্বিদের দিয়ে আমাকে বসিয়ে দিতে। তারা আমাকে নানান কথা বলেছেন। আমাকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। কিন্তু আমি সরে যাইনি। আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবো। জয়-পরাজয় আল্লাহর হাতে। আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফুচকা বিক্রি করি। যে কারণে নারীরা আমাকে চেনে। আশা করি আমি জয়লাভ করবো’—যোগ করেন ফুচকা বিক্রেতা এ প্রার্থী।
দ্বীন ইসলামের স্ত্রী রোজিনা বেগম বলেন, ‘প্রথম দিকে আমি তাকে অনেকবার বলেছি নির্বাচন করার দরকার নেই। কিন্তু তিনি আমার কথা শোনেননি। এখন আর বাধা দেই না। আমি নিজেও বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ভোট চাচ্ছি। আমার স্বামীর মনটা ভালো। আল্লাহ রহমত করলে সে পাস করবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব বলেন, ‘ফুচকা বিক্রি করার কারণে তার প্রতি অনেকেই অনীহা দেখান। তবে লোক হিসেবে দ্বীন ইসলাম ভালো। তার উদ্দেশ্যও ভালো। সে হিসাব করে যদি মানুষ তাকে ভোট দেয় তাহলে সে মেম্বার পদে পাস করবে। আর পাস করতে পারলে সে আর যাই হোক না কেন একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত হবে।’









Discussion about this post