মোঃ শাহজাহান কবির,
আড়াইহাজার (নারায়নগঞ্জ) প্রতিনিধি :
ছেলে জেএসসি পরীক্ষার্থী। ছেলে তার বাবাকে দোকান থেকে কলম কিনে আনতে বলে। আর ছেলের জন্য দোকানে কলম কিনে আনতে গিয়ে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি মটর সাইকেলের চাপায় মো: ইসলাম মিয়া (৪৫) নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে।
ছেলের জন্য কলম কিনে আর বাসায় ফিরে যেতে পারেনি। কলম আনতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন। আর বাবার মৃত্যুর সংবাদে জেএসসি পরীক্ষার্থী নাফিজ (১৪) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর ছেলে নাফিজ বাবার মৃত্যুতে পরীক্ষা না সিদ্ধান্ত নেয়।
বাবার লাশ বাড়িতে রেখে কিছুতেই পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করতে রাজি নয় নাফিজ। এমন সংবাদে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সোহাগ হোসেন দ্রুত তার নিজের গাড়ী দিয়ে নাফিজকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের কেবিনে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করানো হয়।
সোমবার (৪ নভেম্বর) সকালে এমন ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়া এলাকায়। নিহত লেপ তোসক ব্যবসায়ী মো: ইসলাম মিয়া ঐ এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে।
এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আড়াইহাজার উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়া এলাকার ইসলাম মিয়ার ছেলে নাফিজ আড়াইহাজার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সোমবার হলো তার ইংরেজী পরীক্ষা। সকাল ৮টার দিকে তার বাবাকে বলে দোকান থেকে কলম কিনে আনার জন্য। ছেলের জন্য বাবা কলম কিনে বাসায় ফেরার পথে বাড়ির সামনের রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে আসা একটি মটরসাইকেল চাপা দিলে ঘটনাস্থলে ইসলাম মিয়া মারা যায়। ছেলের জন্য কলম নিয়ে বাসায় যাওয়া হলো না। কিন্তু গেলো লাশ হয়ে। আর বাবার মৃত্যুর সংবাদে পরিবারের অন্যান্য সদস্য কান্নাকাটি করলেও বাবার জন্য ছেলে নাফিজের কষ্টটা একটু বেশি ছিলো।
সে কান্নাকাটি করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আর পরীক্ষার সময় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বাড়িতে বাবার লাশ রেখে ছেলে পরীক্ষার কেন্দ্রে যেতে চাইছে না। এক পর্যায়ে নাফিস অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এমন এক মর্মান্তিক ঘটনার সংবাদ পেয়ে নাফিজের বাসায় ছুটে যায় আড়াহাইহাজার উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহাগ হোসেন। তখন তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং হাসপাতালের কেবিনে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। পরে তিনি নাফিজকে হাসপাতালে ভর্তি করে এক ঘন্টা চিকিৎসা করিয়ে একটু সুস্থ্য করে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করেন। আর হাসপাতালের কেবিনের ভাড়া ফি করার ব্যবস্থা করেন স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাবিব ইসমাইল ভূইয়া ।
ইউএনও সোহাগ হোসেন বলেন, ঘটনার সংবাদ পেয়ে দ্রুত জেএসসি পরীক্ষার্থী নাফিজের বাসায় গিয়ে তার পরিবারকে শান্তনা দিয়ে অসুস্থ্য নাফিজকে হাসপাতালে ভর্তি করে সেখানে তাকে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। হাসপাতালে একজন শিক্ষক ও পুলিশ গার্ড দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নাফিজ তার বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেছে। তার লেখাপড়ার সকল কিছু ফ্রি করে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্কুলের যত খরচ রয়েছে তা ফ্রি ভাবে লেখাপড়া করবে। আর নাফিজের বাবাকে যে মটরসাইকেল চাপা দিয়েছে সেই মটরসাইকেল চালক রাসেলকে আটক করা হয়েছে ।









Discussion about this post