নারায়ণগঞ্জ শহরের অধিকাংশ ব্যবসায়ী সরকারি আইন মোতাবেক ভ্যাট প্রদান না করে নানাভাবে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে । এমন অভিযোগের পর এবার শহরের মার্ক টাওয়ারে অভিযান চালায় ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের বিশাল টিম । আর এমন ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন ব্যবসায়ীরা । কোন প্রকার নোটিশ কিংবা প্রজ্ঞাপন না দিয়েই হঠাৎ করে মার্কেটে প্যাকেজ ভ্যাটের পরিবর্তে নতুন আইন প্রয়োগ করায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে সটকে পরেন ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ।
এরপর ব্যবসায়ীরা জানায়, জোর করে আইন প্রয়োগ করলে দোকান বন্ধ করে আন্দোলনের হুশিয়ারী দিলে সটকে পরে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অভিযানকারী দল ।
৩০ মে রোববার সকালে চাষাঢ়ায় মার্ক টাওয়ারে বাংলাদেশ ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল নতুন আইন প্রয়োগে প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই বাছাই করতে চাইলে ব্যবসায়ীরা অসম্মতি প্রকাশ করেন। পরে মার্কেট কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারী সহ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভ্যাটের দলের কয়েক ঘণ্টা বৈঠক হয়। ওই সময় তথ্য সংগ্রহে গণমাধ্যমের কর্মীরা সেখানে গেলে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা দ্রুত সটকে পরেন।
বিগত সময়ের মতো এবারো তারা গণমাধ্যমকে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন মার্ক টাওয়ার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. তানভীর, সেক্রেটারী শেখ জামাল সহ মার্কেটের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা।
নাম প্রকাশে না করে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের দলের প্রধান বলেন, ‘নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আমরা পর্যবেক্ষেনে এসেছিলাম। এসময় প্রতিনিধি দলের ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য ছিলেন।
মার্ক টাওয়ার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. তানভীর বলেন, ‘ঢাকা থেকে ভ্যাট অধিদপ্তরের যেসব লোক এসেছে এবং তাদের দুর্ব্যবহারে আমরা কোন ভাবেই সন্তুষ্ট না। শনিবার ছুটির দিনেও আনঅফিসিয়ালী তারা আসছে। তাদেরকে আমরা বলেছি যে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে আমাদের দুটি অভিভাবক সংগঠন আছে নারায়ণগঞ্জে। এর একটি চেম্বার অব কমার্স এবং আরেকটি জেলা দোকান মালিক সমিতি। আপনারা তাদের নোটিশ করেন তারা আমাদের কল করুক। আমরা সহ ৪টি মার্কেটের প্রতিনিধিরা যাবে হয় চেম্বারে না হয় ভ্যাট অফিসে মিটিং হবে তারপর সমাধান হবে। এর পরও আজকে ঢাকা কাস্টমস এর প্রতিনিধিরা এসে বলছেন যে ভিন সার্টিফিকেট নিতেই হবে। সরকারের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। যদি এটা সরকারের নিয়ম হয়ে থাকলে তাহলে অবশ্যই আমরা সেটা করবো।’
তিনি বলেন, ‘এজন্য কিভাবে কি করতে হবে। এর বিনিময় কি হবে। ব্যবসায়ীদের দিকে সরকারের দেখতে হবে। ওনারা যেভাবে জোর করছেন যে এখনই ভিন সার্টিফিকেট নিবেন পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে বিক্রয়ের উপর কর জমা দিবেন। এখানে আমরা কয়টা ব্যবসায়ী মাসে মাসে লাভ করে আছি, ক্ষতিতে আছি আর কয়টা ব্যবসায়ী আমরা ধার কার্য করে চলছি আদৌকি সেটা সরকার, ভ্যাট অফিস বা কাস্টমস বা গোয়েন্দা সংস্থা তাদের নজরদারীতে আছে। আমাদের সকল ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন একটাই। তারা আসবে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো। কিন্তু আমাদেরকে তাদের দেখতে হবে।’
এ কর দেওয়া হলে কি সমস্যা ? জবাবে তিনি বলেন, ‘চেম্বার অব কর্মাস ও জেলা দোকান মালিক সমিতির সভায় মিলে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছিল ২০ হাজার টাকা প্যাকেজ ভ্যাট। সেটা দুই থেকে তিন দোকান যৌথভাবে মার্কেটের বেচাকেনার উপর নির্ভর করে সমন্বয় করে দিয়ে আসছি। ২০০৫ সালে ১২০০ টাকা থেকে শুরু করে বেড়ে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমরা ২০ হাজার করে টাকা পরিশোধ করেছি। যার সকল কাগজপত্র আছে। কিন্তু তারা সেটা মানতে রাজি না।’
তিনি বলেন, ‘একটা দোকানে বছরে ২০ হাজার টাকা আয়কর কিভাবে হয়। ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা যদি আমি মাসে সরকারকে পরিশোধ করি তাহলে আমি লাভ করি কয়টা ? দোকান ভাড়া কয়টা, কর্মচারীর বেতন কত টাকা, বিদ্যুৎ খরচ কয় টাকা, সেটা কি তারা খবর রাখে ?
তিনি আরো বলেন, ‘তারা অন্যান্য বছর না ধরে চালাকি করে কর সময় ধরেছে ২০২০ ও ২০২১ অর্থ বছর। এ কোভিড সময়ে আমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করা সেটা তো আরো বেশি অন্যায় করেছে। মার্কেটই বন্ধ ছিল। তারপর বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পদচারণা করার পরেই আমরা শেষের দিকে কিছুদিন ব্যবসা করতে পেরেছি এ রোজায়। তারপরও ম্যাজিস্ট্রেটের ভুক্তভোগী আমরা। রাত ৮টার মধ্যে দোকান বন্ধ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন প্যাকেজ ভ্যাট নেই তারা আমাদের নোটিশ দিবে ও প্রস্তাব দিবে। আর প্রস্তাব নোটিশ না দিয়ে তারা ফোর্স নিয়ে মার্কেটে ঢুকে যেকোন দোকানদারের সঙ্গে যেকোন ধরনের ব্যবহার করবে এটা তো আমরা মেনে নিবো না। সেক্ষেত্রে আমরা গত লকডাউনে আমরা প্রেসক্লাবের সামনে যেভাবে মানববন্ধন করেছি এবারও মার্কেট বন্ধ করে আমরা মাঠে নামতে বাধ্য হবো। যদি তারা আমাদের সহায়তা না করে।
আইন করার পর কেন দুই বছর পর তারা আইন প্রয়োগে এসেছে ? এ নিয়ে কোন সভা হয়েছে ? জবাবে তিনি বলেন,‘এটা নিয়ে আমরা বসে কথা বলছিলাম। যখন গণমাধ্যমের কর্মীরা আসছে তখনই তারা দ্রুত চলে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোন চিঠি পাইনি। ভ্যাট অফিস থেকে আমরা কোন কিছু পাইনি। বরং এরা ঢাকা থেকে এসে জটিলতা সৃষ্টি করেছে।’
আজকে তারা কি চেয়েছিল ? তিনি বলেন, ‘তারা চেয়েছিল দোকান মনিটরিং করবে। মার্কেটে কয়টা দোকান আছে সেগুলো তালিকা করে নিয়ে যাবে। আর এ তালিকা মানেই হলো, দোকানের নাম, পরিচালকের নাম, মোবাইল নাম্বার। আর এটা ভিন সার্টিফিকেট তৈরির জন্য যথেষ্ট। তারা সার্টিফিকেট প্রিন্ট করে নিজ খরচে দোকানে ঝুলিয়ে দিয়ে যাবে। পরে মাসে মার্কে ভর্তুকিটা আমরা গুনবো। এটা হতে পারে না। এটা আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে নিতে পারবো না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের উপর যদি ভ্যাট নিতেই হয় তাহলে এর জন্য ক্রেতাদের জানাতে হবে পুরো বাংলাদেশ। যে আমরা একটা প্রজ্ঞাপন জারি করলাম, আপনারা যেই মার্কেটে যাবেন সেখান থেকে শতকরা দিয়ে পণ্য কিনতে হবে। এ মার্কেটটা ভ্যাটের আওতাধীন। সেই দোকানদার ভ্যাট না দিলে ব্যবস্থা নিবো। এর প্রক্রিয়া আছে শুধু বললেই চলবে না।









Discussion about this post