শীতলক্ষ্যা নদীতে ‘এমভি সাভিত আল হাসান’ নামে অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহী লঞ্চটি ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেওয়া কার্গো জাহাজটি আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া এলাকা থেকে জাহাজটি আটক করা হয়। পরে পুলিশ প্রহরায় বিকেলে জাহাজটি নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ঘাটে আনা হয়। সেখানেই এখন নোঙর করা আছে জাহাজটি।
ওই সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৪ জনকে। তারা হলো মাস্টার অহিদুর জামান (৫০), ইঞ্জিন ড্রাইভার মজনু মোল্লা ( ৩৮), সুকানী মো. আনোয়ার মল্লিক (৪০), মো. নাজমুল মোল্লা (৩০), গ্রীজার হৃদয় হাওলাদার (২০), গ্রীজার মো. ফারহান মোল্লা (২৭), লস্কর রাজীবুল ইসলাম (২৭), মো. আব্দুল্লাহ (২০), মো. নূরুল ইসলাম (৩৫), মো. সাকিব সরদার (২০), মো. আফসার (১৮), মো. সাগার হোসেন (১৯), আলিফ শেখ (১৯) ও বাবুর্চি আবুল বাশার শেখ (৩৮)।
নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশ সুপার (এসপি) মিনা মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোস্টগার্ড কার্গো জাহাজটি সহ ১৪জনকে আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। লঞ্চ ডুবে যাওয়ার সময় ১৪জনই এ কার্গো জাহাজে ছিল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। কার্গো জাহাজটি নরসিংদীর একটি ডকইয়ার্ড থেকে মেরামত করার পর মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার দিকে যাচ্ছিল। মূলত যাওয়ার পথেই কার্গো জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে লঞ্চটি ডুবে যায়। জাহাজটি সার্ভে সনদ ছিল না। ফলে সনদ ছাড়া নদীতে চলাচলে তাদের কোন অনুমতি নেই।
এমন দূর্ঘটনার পর দ্রুত ৩৪ লাশ উদ্ধারের পূর্বেই কার্গো জাহাজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতো পুরো জাহাজটির রঙ পরিবর্তন করে ফেলে । রঙ পরিবর্তন হলে কেউ আর এই জাহাজের খোজ পাবে না এমন চিন্তা থেকে রঙ পরিবর্তন করে বলে জানায় জাহাজ থেকে আটককৃতরা । এরপর যখন ঘাতক জাহাজটির নাম, মালিকের নাম ও সকল তথ্য প্রকাশ পেয়ে যায় তথন ক্ষমতাসীনদের বিতর্ক এড়াতে আটক করে কার্গো জাহাজ টি।
তারপরও তারা জাহাজ নিয়ে যাচ্ছিল। এ ১৪ জনকে মামলায় অর্ন্তভুক্ত করা হবে। তাদের আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
রোববার সন্ধ্যার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিআইডব্লিউটিএ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল সাবিত আল হাসানকে শহরের কয়লাঘাট এলাকায় কার্গো জাহাজ এসকেএল-৩ পেছন থেকে ধাক্কা দিলে ডুবে যায়। লঞ্চের অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও নিখোঁজ থাকেন অনেকে। পরে ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
প্রসঙ্গত গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে সৈয়দপুর কয়লাঘাট এলাকায় কার্গো জাহাজ ধাক্কা দিয়ে ‘সাবিত আল হাসান’ নামে লঞ্চটি অর্ধশতাধিক যাত্রীসহ ডুবিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় সাঁতরে ১৫ থেকে ২০জন তীরে উঠতে পারলেও নিখোঁজ ছিল ৩৬জন। পরে রোববার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ৩৪জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। যার মধ্যে এখনও নিখোঁজ রয়েছে দুইজন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
তদন্ত কমিটিকে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এ ঘটনায় ৬ এপ্রিল রাতে বন্দর থানায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।









Discussion about this post