নারায়ণগহ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত দখল মুক্ত করায় হকার ও তাদের চাঁদাবাদ নেতাদের উস্কানীতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবারের (৯ মার্চ ) ঘটনায় হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশের উপর হামলা, সরকারি কাজে বাধাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২৮০ হকার ও নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ ৷
বুধবার (১০ মার্চ) সকালে সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়৷ এই মামলায় জেলা হকার্স সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আসাদুল ইসলামসহ তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে৷
মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্রেফতার আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে৷ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে ৷
মঙ্গলবার ৯ মার্চ বিকেলে বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে বসার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জের অভিযোগে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ, যানবাহনে ভাঙচুর, পুলিশের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে হকাররা। হকারদের এই তান্ডব চলে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত। এতে পুরো শহরে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিকেলেই ঘটনাস্থল থেকেই হকার নেতা আসাদুল ইসলামকে আটক করে সদর মডেল থানা পুলিশ। পরে তাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় তদবির করতে গেলে রাতে সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলামকেও আটক করে পুলিশ। যদিও ঘন্টাখানেক আটক রাখার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়৷
এদিকে সদর মডেল থানার পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ওই ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২০০-২৫০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন৷ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশের উপর হামলা, আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে যানজট সৃষ্টিসহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় থানার ওসি শাহ্ জামান, পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান, এসআই নুরুজ্জামান (বাদী) সহ ১১ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ পুলিশ পাঁচটি বাঁশের লাঠি, একুশ টি ভাঙা ইটের টুকরো, এগারোটি কাঠের তৈরি ডাশা (লাঠি) ও দু’টি লোহার রড জব্দ তালিকায় উল্লেখ করেছে ৷
পুলিশের এমন আচরণের ঘটনায় বুধবার সকালে হকার নেতা আসাদুলসহ অন্যান্যদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হকাররা ৷ চাষাড়ায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ সমাবেশে নেতৃত্ব দেন সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান টিপু, জিটিইউসি’র সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন৷ শুরুতে সমাবেশে বাধা দিলেও পরে অনুরোধের প্রেক্ষিতে সমাবেশ করতে দেয় পুলিশ৷ সমাবেশ শেষে শহীদ মিনার থেকে মাইক খুলে নিয়ে যায় পুলিশ ৷ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়৷ দুপুর একটা পর্যন্ত শহরের চাষাঢ়ায় জলকামান, সাঁজোয়া যানসহ বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ ৷ ধারাবাহিক এমন আন্দোলনের পর চাঁদাবাজ আসদ গ্রেফতার ও মামলা দায়েরের খবরে বুধবার বিকেল থেকে আর হকারদের আন্দোলনের নামে নাশকতার কোন খবর পাওয়া যায় নাই ।
তবে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, অসাধু নেতা, পুলিশ ও বিশেষ পেশার নামধারী উচ্ছিষ্টভোগিদের চক্রান্তে আবারো নারায়ণগঞ্জ শহরে নাশকতার আশংকা রয়েছে । শহরের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অবণতি ঘটাতে শাসক দলের একটি চক্রের পাশাপাশি উচ্ছিষ্টভোগিদের দৌড়াত্ম এখনো চলমান রয়েছে । পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে আন্তরিক না হলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হবেই । কারণ থানা পর্যায়ের প্রায় সকলেই কোন না কোন ভাবেই এই হকারদের চাঁদা থেকে প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে ও প্রতি মাসে নানাভাবে উচ্ছিষ্টের ভাগ গ্রহণ করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর যাবৎ ।









Discussion about this post