নারাযণগঞ্জ শহরে পুলিশ কর্মকর্তা খালাতো ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের নাটক সাজাতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন এক ব্যক্তি। আর পুলিশ কর্মকর্তা নিজেকে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা তেকে রক্ষা করতে বলছেন, “এ ব্যাপারে তিনি ওই ব্যক্তির (খারাতো ভাই রাসেলের) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। এ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের ২নং রেল গেইট সংলগ্ন ডাচ বাংলা ব্যাংকের পিছনে সনাতন পাল লেন কালি মন্দির এলাকায় ছিনতাইয়ের ওই নাটক মঞ্চস্থ হয়। নাটক রচিয়তা রাসেলের খালাতো ভাই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাশেদ। মূলত তারা দুই ভাই মিলেই এই নাটক মঞ্চস্থের চেষ্টা চালিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
তবে, ওই ঘটনার সঙ্গে রাশেদ নিজের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করলেও রাসেল তার খালাতো ভাই হোন তা স্বীকার করেন।
সূত্র জানিয়েছে, এদিন দুপুরের দিকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের পেছনে সনাতন পাল লেন কালি মন্দিরের সামনে চারজন ছিনতাইকারি রাসেল নামক এক ব্যক্তিকে মারধর করে বিশ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এমন দাবি খোদ ওই ব্যক্তি নিজে করেন এবং আহাজারি করেত থাকেন। কিছুক্ষণ পরেই সদর মডেল থানার এএসআই রাশেদ ঘটনাস্থলে আসেন এবং ব্যাগটি উদ্ধার করেন। এ ব্যাপারে বিশ থানা অভিযোগ দেওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা।
তবে, থানায় অভিযোগ দেওয়ার পূর্বেই তাদের দুই খালাতো ভাইয়ের গোমর ফাঁস হয়ে যায়। সাংবাদিকদের হাতে চলে আসে একটি সিসি টিভির ফুটেজ। এতে দেখা যাচ্ছে, সনাতন পাল লেন কালি মন্দির গলি ধরে একটি কালো রঙ ব্যাগ নিয়ে হাঁটছেন এক ব্যক্তি। স্থানটি জনমানব শূন্য হতেই তিনি তার হাতের ব্যাগটি একটি প্রাচিরের উপর দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেন। তার আগে ব্যাগটি হাতে টেনে ছিড়েন তিনি। এবং ব্যাগ ফেলার পর নিজেই নিজের পরনের শার্ট ছিড়ে ফেলেন। এবং চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। এসময় ঘটনাস্থলে অনেক লোক এসে জমে যায়। এর একটু পরই আসেন সদর থানার এএসআই রাশেদ। তিনি কথিত ছিনতাই হওয়া ব্যাগটি উদ্ধার করেন। কিন্তু সে ব্যাগের ভিতরে কিছুই ছিলো না।
এদিকে সূত্র জানায়, রাসেল খানপুর হাসপাতালের সামনে ফার্মেসির ব্যবসা করেন। ধারণা করা হচ্ছে, কাউকে ফাঁসাতে এবং টাকা আত্মস্যাৎ করতেই তিনি ও তার খালাতো ভাই পুলিশ কর্মকর্তা ছিনতাইয়ের ওই নাটক সাজানোর চেষ্টা করছিলেন। যে কারণে ঘটনাস্থলে এএসআই রাশেদ ছুটে এলেও তিনি বিষয়টি থানাকে অবহিত করেননি।
অন্যদিকে ছিনতাইয়ের ঘটনার খবর পেয়ে সাংবাদিকেরা থানায় ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত হতে চাইলে থানা পুলিশ জানিয়েছিলো, এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের কাছে কোনো খবর নেই।
এদিকে এ ব্যাপারে সদর মডেল থানা পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাশেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে কোনো বক্তব্য দিতে চাননি। এই প্রতিবেদককে জানান, রাসেল আমার খালাতো ভাই। সে আমাকে ফোন করে জানায়, চারজন ছিনতাইকারি তাকে মারধর করে বিশ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিছে। এমন খবর পেয়ে এসে দেখি তার শার্ট ছেড়া। তল্লাশি করে তার ব্যাগটি উদ্ধার করি। তবে, ছিনতাইয়ের কোনো আলামত পায়নি। পরে রাসেল আবারও জানায়, বিশ লাখ নয়, তার বারো (১২) লাখ টাকা ছিলো। রাসেলকে ছিনতাইকারীরা কিছু খাইয়ে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে ।
ভিডিও ফুটেজে নাটক মঞ্চস্থ করার বিষয়টি জানিয়ে রাশেদ জানান, ফুটেজটি আমিও দেখেছি। তাকে থানায় এসে অভিযোগ দিতে বলেছিলাম। তিনি আসেননি। মিথ্যা নাটকের কারণে তার বিরুদ্ধে আমি থানায় অভিযোগ করবো বলে নিজেকে ছিনতাইয়ের ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চেষ্টা চালাচ্ছে এএসআই রাশেদ ।
এদিকে, রাসেলের ছিনতাইয়ের নাটকের সাথে পুলিশের এই কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ত নেই। আমি ফোন পেয়ে এসেছি। সে কেন এটা করেছে তা আমি জানি না।” তবে, রাশেদ ঘটনাস্থলে আসার সময় থানা পুলিশ কিছুই জানতো না। তিনি জানানওনি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি থানাকে জানিয়েছি। ঘটনাস্থলে তদন্ত (ওসি) মাসুদ আসছিলেন।
প্রত্যাক্ষদর্শী অনেকেই আরো বলেন, পূর্ব থেকেই এই দারোগা ২নং রেল গেইট এলাকায় অবস্থান করতে দেখা গেছে । ছিনতাইয়ের নাটক মঞ্চায়নের পর দ্রুত পুলিশ পোষাকে সনাতন পাল লেন এলাকায় এসেই এএসআই রাশেদ পুরো এলাকাবাসীকে কোমড়ে দড়ি বেধে টেনে থানা নিয়ে পিটানোর হুমকিও দেয় । এমন ঘটনায় এলাকাবাসী নিজেদের ক্লোজ সাকিট ক্যামেরা ফুটেজ দেখে বের করে নাটকের প্রকৃত চিত্র।
এ বিষয়ে সোমবার বিকেল ৪ টায় নারায়ণগঞ্জ মডেল থানার ডিউটি অফিসার আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, শহরের ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের কোন ঘটনা কোন পুলিশ কমমকর্তাকে পাঠানো হয় নাই । আমাদের থানায় কেউ জানে না এমন ঘটনা ।
নারায়ণগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান গণমাধ্যমকে বলেন, কোন ছিনতাইয়ের খবর তাদের জানা নাই ।









Discussion about this post