শহরের বঙ্গবন্ধ সড়কের হকারদের দৌড়াত্মে হাজারো অঘটনের পর এবার প্রাণ গেলো এক হকারের । নেপথ্যের কারণ প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি । শহরের পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশসহ রাজনৈতিক দলের নেতা, বিশেষ পেশার নামদারী অপরাধীদের ম্যানেজ করতে মহানগরীর চিহ্নিত নির্লজ্জ একটি চক্রকে নিয়মিত মোটা অংকের মাসোয়ারা প্রদান করতে কুখ্যাত চাঁদাবাজ আসাদ বছরের পর বছর যাবৎ ফুটপাত দখল করে চাঁদাবাজির মহোৎসব চালিয়েই যাচ্ছে ।
মাসোয়ারা আদায়কারী, রাজনীতিবিদ, বিশেষ পেশার অপরাধী, নাসিকের গোবিন্দ ও পুলিশের অসাধু কর্মকর্তারা ধর্ম – কর্মের দোহাই দিয়ে কোন ধরণের মাসোয়ারা নেন না বলে জোড় গলায় মন্তব্য করলেও থানা কম্পাউন্ডের দোতলায় শহরের সকল লাইনম্যান (চাঁদাবাজদের) মাস শেষে লাইন ধরে ওই সকল অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে অজ্ঞাত কারণে সাক্ষাৎ করতে দেখা যায় । পুলিশের ওই সকল কর্মকর্তা ছাড়াও বিশেষ পেশার অনেকেই প্রতি মাসের ১ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে লাইনম্যানদের সাথে সাক্ষাৎ করে ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত মাসোয়ারা গ্রহণের কারণে পুরো শহরবাসীকে জিম্মি করার সাহস করে যাচ্ছে চাঁদাবাজরা । একই সাথে শহরের প্রায় ১৮/২০ জন লাইনম্যানের কাছ থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশনের কর্মচারী গোবিন্দ মাস শেষে প্রত্যেক লাইনম্যানের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে মাসোয়ারা আদায় করার দৃশ্য এখন ওপেন সিক্রেট ।
এমন চাঁদাবাজির অভিযোগ ছাড়াও শহরের এক পিঠা বিক্রেতা নরীর কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা মাসোযারা গ্রহণ করেন থানার এক কর্মকর্তা । মাসোয়ারা না দিলে তাকে (ওই নারীকে) উচ্ছেদ করে মোটা অংকের অগ্রিম টাকা নিয়ে অন্য এক নারীকে ফুটপাতে বসানোর চেষ্টাও করে অপর একজন । ফলে বাধ্য হয়ে সংসার টিকাতে ৫ হাজার টাকা মাসোয়ারা দিয়েই ওই নারী তার পিঠার দোকান টিকিয়ে রাখেন। এমন চাঞ্চল্যকর অপরাধের পরও হকার জুবায়ের হত্যাকান্ডের ঘটনার ২৪ ঘন্টা না পেরুতেই আবার একই কায়দার খোদ ওসির নাম ভাঙ্গিয়ে চলছে ১৮/২০ জন লাইনম্যানের প্রকাশ চাঁদাবাজি । যা দেখার কেউ নাই । ‘এই শহর মগের মুল্লু’কে পরিণত হয়েছে বলে চাউর রয়েছে শহরবাসীর মুখে
নারায়ণগঞ্জে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে সাধু পৌলের গির্জা সংলগ্ন মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসের পাশ্ববর্তী বলাকা পেট্রোল পাম্পের সামনে ফুটপাতে দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে হকার জুবায়েরকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় হকার নেতাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিনগত গভীর রাতে নিহত জুবায়েরের মা মুক্তা বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে সাধু পৌলের গির্জা সংলগ্ন মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসের পাশ্ববর্তী বলাকা পেট্রোল পাম্পের সামনে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ফুটপাতে দোকান বসানো নিয়ে বিরোধে হকার জুবায়েরকে (১৮) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
জুবায়েরকে উদ্ধার করে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। নিহত জুবায়ের ফতুল্লার উত্তর মাসদাইরের আমজাদ হোসেনের পুত্র।
ওই ঘটনায় নিহত জুবায়েরের মা মুক্তা বৃহস্পতিবার দিনগত গভীর রাতে বাদি হয়ে হকার নেতাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫ জনকে আসামী করে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলো, আসামী ইকবাল ওরফে ডাক্তার (৩০), হকার নেতা আসাদ (৪০), স্বপন (৩২), সায়মন (২১), হাসান (১৯), সানি (২৩), রাসেল (২৪), মহসিন (৬০) সহ অজ্ঞাত ৪/৫ জন।
মামলায় মুক্তা উল্লেখ করেন, শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে সাধু পৌলের গির্জার সামনে ফুটপাতে সাদেকের জুতার দোকানে চাকুরী করতো জুবায়ের। ফুটপাতে দোকান বসানো নিয়ে স্বপনের সঙ্গে ঝগড়া হয় জুবায়েরের। পরে জুবায়েরকে বলাকা পেট্রোল পাম্পের সামনে নিয়ে চর থাপ্পড় মারতে থাকে স্বপন।
এসময় হকার নেতা আসাদের হুকুমে মামলার প্রধান আসামী ইকবাল মহসিনের দোকান থেকে ধারালো চাকু এনে জুবায়েরকে কুপিয়ে জখম করে। সায়মন মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জুবায়েরের হাতের রগ কেটে দেয়। অপর দুই আসামী হাসান ও সানি লোহার রড ও কাঠের ডাসা দিয়ে পিটিয়ে হাড়ভাঙ্গা জখম করে। রাসেল ও মহসিনসহ অজ্ঞাত আসামীরাও মারধর করে জুবায়েরকে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে জুবায়েরকে উদ্ধার করে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। মামলায় বাদি উল্লেখ করেন পূর্ব পরিকল্পিত তার ছেলে জুবায়েরকে হত্যা করা হয়েছে।
ঘন্টাব্যপী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
এদিকে জুবায়ের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ফতুল্লার মাসদাইরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
শুক্রবার ১৫ অক্টোবর বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত প্রায় এক ঘন্টা ফতুল্লার মাসদাইর এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কে লাশ রেখে বিক্ষোভ করা হয়। বিক্ষোভে নারী পুরুষসহ প্রায় এক পাঁচ শতাধিক লোক অংশ নেয়। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের উর্ধ্বতনরা দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিয়ে অবরোধ সরিয়ে নেয় বিক্ষোভকারীরা।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (‘ক’ সার্কেল) নাজমুল হাসান বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের সাধু পৌলের গির্জার কাছে ফুটপাতে দোকান সাজানোকে কেন্দ্র করে হকারের ছুরিকাঘাতে জুবায়ের(১৭) নামে আরেক হকার খুন হয়। এঘটনায় বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ৪টায় মামলা গ্রহণ করা হয়েছে।
এরআগে থেকেই পুলিশ হত্যাকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। আশা করছি হত্যাকান্ডে যারা জড়িত তাদের দ্রæত গ্রেফতার করা হবে। বিক্ষোভকারীদের শান্ত করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। লাশ মাসদাইর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।









Discussion about this post