শিকলে বেঁধে শিশুকে ঘুমিয়ে থাকা শিশুর ছবি প্রকাশের পর তা তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে সর্বত্র । নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সকলের মাঝেই ব্যাপকভাবে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ায় উদ্ধার করা হয় অবুঝ শিশু ও তার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মা শ্রীদেবী কে ।
নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনাল ঘাটে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা শিশু ও তার মাকে উদ্ধার করার পর গাজীপুরের নিরাপত্তা আশ্রয় স্থানে (সেফহোম) পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে লঞ্চ টার্মিনালের জেটি থেকে ওই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। পরে গাজীপুরের নিরাপত্তা আশ্রয়স্থানে রাখার আবেদন করে বিকালে আদালতে পাঠানো হয় ।
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
এর আগে গত বুধবার লঞ্চ টার্মিনাল ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, একটি ছেলেকে তার মা শিকল দিয়ে বেঁধে কাজে চলে গেছেন।
সেখানে অস্থায়ী কয়েক দোকানি জানান, মূলত ছেলে যেন হারিয়ে না যায় বা কোথাও না যায় সেজন্যই মা এ কাজ করেন। উদ্ধার করার পর সেই মায়ের সঙ্গে কথা হয়। তিনি নিজের নাম শ্রীদেবী বলে দাবি করেন এবং সন্তানটি তার বলেও জানান। যদিও তার বাবা কে সেটি তিনি জানাতে পারেননি। মহিলাটির কথাবার্তাও কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়।
নিজের সন্তানটি মেয়ে বলে জানিয়ে একেক সময় তার একেক নাম বলেন তিনি। নিজে মাজারে ঘুরেন ও এদিক সেদিক কাজ করে টাকা কামান আর সেই কাজে যাবার সময় সন্তানকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন বলেন জানান শ্রীদেবী।
শ্রীদেবী বলেন, ‘মাইনসেইতো আমারে কয় বাইন্দা থুইতে যেইলেইগা আমার ছাও আরাইবোনা। আমিতো এই শিহল (শিকল) কিন্না হেরপরে বাইন্দা থুইয়া কামে যাই। আমি মাজারে থাহি, খাই। হেতির বাফের (বাবার) নাম কমু না।’
স্থানীয় দোকানদার মোশারফ হোসেন বলেন, কয়েকদিন ধরে শিশুটিকে সকাল বেলা টার্মিনালের লোহার পিলারের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে তার মা কোথায় যেন চলে যায়। রোদ-বৃষ্টি যেমনই হোক শিশুটি সারাদিন এখানে বসে কিংবা ঘুমিয়ে থাকে। রাস্তায় আসা যাওয়ার পথে মানুষ কিংবা আমরা দোকানদাররা খাবার দিলে খায়, না হলে না খেয়ে থাকে।
বিকাল ৪টায় শিশুটির মা কোথা থেকে এসে শিকল খুলে নিয়ে যায়। কয়েকদিন জিজ্ঞাসা করলে বলে হারিয়ে যেন না যায় তাই শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে কাজ করতে যায়।
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, সংবাদের পর আমরা পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশে দ্রুত শিশু ও তার মাকে উদ্ধার করি। মহিলার কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হলে এবং তিনি কোন নাম ঠিকানা না বলতে পারায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে তাকে গাজীপুরস্থ নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর আবেদন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের উপ পরিদর্শক অনুপ অধিকারী বলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মিল্টন হোসেনের নির্দেশে গাজীপুরের নারী শিশু ও কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছে।









Discussion about this post