নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ থেকেও আলাদা করে কাউকে সমর্থন দেওয়া হয়নি। এই সুযোগে সব ওয়ার্ডে অনুগতদের কাউন্সিলর বানানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন এখানকার সরকারদলীয় সাংসদ শামীম ওসমান। এটা করতে গিয়ে কোনো কোনো ওয়ার্ডে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারাও তাঁর সমর্থন পাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে।
গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টি আওয়ামী লীগ, ১০টি বিএনপি, দুটি জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং একটি করে ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হয়েছেন বাসদ, জামায়াতে ইসলামী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন, দুজন এবার নির্বাচন করছেন না। বাকি ২৩ জন এবারও প্রার্থী হয়েছেন। এবার বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে নেই। দুটি ওয়ার্ড ছাড়া বাকি ২৫টিতেই কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের এক বা একাধিক নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ১২ ও ১৩ নম্বরে ওয়ার্ডে পরপর দুবার কাউন্সিলর হয়েছেন বিএনপির দুই প্রার্থী। এর মধ্যে ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি কিসমত হাশেমের ছোট ভাই মোহাম্মদ শওকত হাসেম। আর ১৩ নম্বরে গত দুবারের কাউন্সিলর মহানগর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক ও মেয়র প্রার্থী তৈমুরের ভাই মাকছুদুল আলম খন্দকার। এ দুজনের প্রতি সাংসদ শামীম ওসমানের সমর্থন আছে বলে অভিযোগ আছে। এবার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে শামীম ওসমানের অনুসারী একজন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তিনি তৈমুরের ভাই মাকছুদুলের সুবিধার জন্য এটা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠায় আওয়ামী লীগ তাঁকে বহিষ্কার করেছে। এ ছাড়া দুটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত একক প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কাউন্সিলর পদে তাঁর নিজের আলাদা কোনো পছন্দ নেই। সব কাউন্সিলর প্রার্থীই মেয়র পদে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করছেন বলে তিনি মনে করেন।
বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হন ওসমান পরিবারের অনুসারীরা। এবার এটি আরও বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছেন তাঁরা। ১ নম্বর ওয়ার্ডে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমানের ছেলে মাহমুদুর রহমান সমর্থন পাচ্ছেন সাংসদ শামীম ওসমানের। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক ভূঁইয়া আছেন ২ নম্বর ওয়ার্ডে। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাত খুন মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের ভাতিজা বর্তমান কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল সাংসদের অনুসারী। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম ও আরিফুল হকের প্রতি সমর্থন আছে সাংসদের। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সাংসদের ছেলে অয়ন ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে সমর্থন পাচ্ছেন আনিসুর রহমান। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আছেন সাংসদের দুই ঘনিষ্ঠ মতিউর রহমান ও সিরাজুল ইসলাম মণ্ডল। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে অয়ন ওসমানের ঘনিষ্ঠ মো. সালাউদ্দিন। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মহসিন ভূঁইয়া, ৯ নম্বরে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া ইসরাফিল প্রধান, ১০ নম্বরে ইফতেখার আলম ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে সাইফুল হাসান সাংসদের সমর্থন পাচ্ছেন। ১৫ নম্বরে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জি এম আরমান। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে আগের কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল সরে গিয়ে কবির হোসেনকে সমর্থন দিয়েছেন। ১৭ নম্বরে বর্তমান কাউন্সিলর আবদুল করিম, ১৮ নম্বরে কামরুল হাসান ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে সমর্থন পাচ্ছেন শামীম ওসমানের ভাতিজির স্বামী ইফতেখার আলমের আত্মীয় মোখলেছুর রহমান চৌধুরী। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে সহিদুল হাসান মৃধা, ২৩ নম্বরে বর্তমান কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহমেদ, ২৫ নম্বরে সামছুল আলম, ২৬ নম্বরে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশীদের ভাই আনোয়ার হোসেন ও ২৭ নম্বরে সিরাজুল ইসলাম সাংসদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া ২২ নম্বর ওয়ার্ডে শামীম ওসমানের একাধিক অনুসারী থাকলেও খান মাসুদ আছেন পছন্দের শীর্ষ স্থানে।
শামীম ওসমানের ভাই সাংসদ সেলিম ওসমানের সমর্থন পাচ্ছেন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টির নেতা শফি উদ্দিন প্রধান, ২১ নম্বরে আজিজুল হক ও ২৪ নম্বরে আফজাল হোসেন। এসব ওয়ার্ডে শামীম ওসমানের আলাদা কোনো প্রার্থী নেই বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে শামীম ওসমানের বক্তব্য জানতে তাঁর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, দুটি ওয়ার্ড ছাড়া বাকি ওয়ার্ডগুলোতে আওয়ামী লীগ করেন, এমন একাধিক প্রার্থী থাকায় কাউকে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়নি। সাংসদ কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দিলে সেটি তাঁর বিষয়। জনগণ ভোট দেবেন। তাতে যদি সাংসদের অনুগতরা বিজয়ী হন, হবেন।
সূত্র : প্রথম আলো








Discussion about this post