নিজেদের শক্তির জানান দিতে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জসহ ৬৩ জেলায় একযোগে পরিকল্পিতভাবে বোমা হামলা চালায় জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ-জেএমবি। নারায়ণগঞ্জের আদালত পাড়ায়ও ওই সময় বোমা হামরার ঘটনা ঘটায় জেএমবি। সিরিজ বোমা হামলার মতো এমন কর্মকান্ডের বিচার কার্যক্রম ১৬ বছরেও শেষ হয়নি। সারা দেশের মত প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জেও ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা ঘটনা ঘটেছিল। এখনো চলছে মামলার বিচারিক কার্য্যক্রম। আসামিদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা থাকায় হাজির করতে না পারা এবং সাক্ষীরা না আসা এবং গেল দেড় বছর ধরে করোনার কারণেই বিচারিক কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে জানিয়েছেন সরকারী কৌশলী।
১৪ আসামির মধ্যে ৫ জনকে ইতোমধ্যে অন্য মামলায় ফাঁসির দন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছে। পরে সম্পূরক চার্জশীটের এক আসামীসহ ১০ জন গ্রেফতার রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালত ও জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গনের দু’টি স্পটে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। একই সময়ে দেশের মুন্সিগঞ্জ ছাড়া সবগুলো জেলাতেও কয়েকটি স্পটে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জে বোমা হামলার ঘটনায় কেউ হতাহতের ঘটেনি। এ ঘটনায় সে সময়ের ফতুল্লা মডেল থানার এস আই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে দু’টি পৃথক মামলা করেন। মামলায় প্রথমাবস্থায় অজ্ঞাতজনদের আসামী করা হয়।
পরবর্তীতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) দ্বায় স্বীকার করায় এ সংগঠনের প্রধানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৬ সালের ২৯ জানুয়ারী আদালতে চার্জশীট দেয় পুলিশ। এতে অভিযুক্ত ১৪ জন হলেন জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই, সাইফুল্লাহ, আকতার হোসেন, আবুল হোসেন, আতাউর রহমান সানি, তানভীর ওরফে জিয়াউর, ওবায়দা ওরফে জিয়াউল, রবিউল ইসলাম, আরিফুল, ফতুল্লার শাসনগাঁও এলাকার আবদুল আজিজ, আতাউর রহমান, রকিবুল ইসলাম ও মাজু মিয়া।
২০০৭ সালের ২৯ মার্চ মামলার প্রথম ৫ জন আসামি শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। অন্য আসামিরা কারাগারে রয়েছে।
২০১৮ সালের ৩১ জুলাই সিরিজ বোমা হামলার অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী মা. কেফায়েতুর রহমান ওরফে নোমানকে (৩৫) গ্রেফতার করে র্যাব-১১। সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে র্যাব জানায়। কেফায়েতুর রহমান ওরফে নোমান (৩৫) ফতুল্লার সস্তাপুর কোতোয়ালেরবাগ এলাকার মাওলানা মাহবুবুর রহমানের ছেলে। সে হোসাইন আহমেদ আজমী ছদ্মনামে শিক্ষক হিসেবে রাজশাহীর কাটাখালিতে জামিয়া উসমানীয়া হোসাইনাবাদ মাদ্রাসায় কর্মরত ছিল।
তৎকালে র্যাব-১১ এর সিনিয়র এএসপি আলেপউদ্দিন জানান, সম্পূরক চার্জশীটের আসামী কেফায়েতুর রহমান ওরফে নোমান ২০০৫ সালে সিরিজ বোমা হামলা মামলার অন্যতম আসামী। তার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে সে আরো জানায়, তৎকালীন জেএমবির প্রধান শায়েখ মাওলানা আব্দুর রহমানের নির্দেশে তার অন্যান্য সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে উক্ত বোমা হামলায় অংশগ্রহণ করে। জেএমবির প্রধান শায়েখ মাওলানা আঃ রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি সহ গ্রেফতারকৃত ও পলাতক জেএমবির অন্যান্যদের সঙ্গে কেফায়েতুর রহমানের সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলে জানা যায়।
নারায়ণগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুলবুল গণমাধ্যমকে বলেন, সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা নারায়ণগঞ্জেও ঘটেছিল। সেই মামলাটি নারায়ণগঞ্জ ২য় ট্রাইব্যুনাল আদালতে বিচারাধীন ও সাক্ষী পর্যায়ে আছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। তবে করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে আদালত খুলতে শুরু করেছে। স্বাক্ষীরা যদি আদালতে আসে তাহলে হয়তো স্বাক্ষ্যগ্রহণ করা হতে পারে। নয়তো ভার্চুয়ালিই আদালতের কার্যক্রম চলবে বলে জানান তিনি।









Discussion about this post