সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জের মূর্তিমান আতঙ্ক স্বঘোষিত যুবলীগ নেতা ফারুক ওরফে টাইগার ফারুক নামের এক সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়েছে ।
রিমান্ড আবেদনের বিষয়ে পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ । আগামীকাল মঙ্গলবার ৪ মে রিমান্ড শুনানীর দিন ধার্য করে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক টাইগার ফারুককে কারাগারে পাঠিয়েছে ।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের হিরাঝিল এলাকার ইন্টারনেট ও আইএসপি ব্যবসায়ী মো. মহাসিন রানা বাদী হয়ে সোমবার (০৩ এপ্রিল) সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।
এ মামলায় ফারুককে প্রধান আসামি এবং তার ভাই জসিম ও বাবু নামে আরও একজনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে টাইগার ফারুককে রোববার (০২ এপ্রিল) মিজমিজি টিসি রোড এলাকা থেকে গ্রেফতার করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ।
এলাকাবাসী জানায়, ফারুক এলাকায় নিজেকে থানা যুবলীগের কর্মী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন। সংগঠনটির বিভিন্ন কর্মসূচিতেও তার উপস্থিতি দেখা যায়। ফারুকের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে ।
এই চাঁদাবাজির মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, ইন্টারনেট ব্যবসায়ী মো. মহসিন রানার জারা কমিউনিকেশন নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫ এপ্রিল রাতে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ফারুক ও তার সহযোগীরা। দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এ ঘটনায় মহাসিন রানা সোমবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় বাদী হয়ে টাইগার ফারুককে প্রধান আসামি করে তিনজনের নামে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। মামলা নং -৫।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মশিউর রহমান জানান, ফারুকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হিরাঝিল এলাকার ইন্টারনেট ব্যবসায়ী মহসিন রানা নামে এক ব্যক্তি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় প্রধান আসামি ফারুককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
যদিও ইতিমধ্যেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাাপতি আলহাজ্ব মজিবুর রহমান নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেছেন ফারুক আওয়ামীলীগের কেউ না। সে কি করে যুবলীগের কার্যালয় তৈরী করে এমন অপকর্ম করতেছে তা সে ফারুকই ভালো কইতে পারে । এতো তারাতাড়ি কি করে এমন বিশাল বাড়ি তৈরী করলো এ নিয়ে পুরো সিদ্ধিরগঞ্জেই রয়েছে ব্যাপক সমালোচনা । কারা তাকে শেল্টার দেয় তার খোজ নেন ।
ফারুকের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগ সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি জানান, ফারুক ওরফে টাইগার ফারুকের বাবা এবং ভাই বিএনপির রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ফারুক বিভিন্ন সময়ে দলের কর্মসূচিতে যোগ দিলেও যুবলীগে তার কোনো পদ পদবী ছিল না। এখনও নেই।

কে এই টাইগার ফারুক
এলাকাবাসীর তথ্যমতে, মো: ফারুক ওরফে টাইগার ফারুক পিতা-আবু সাইদ। বর্তমান ঠিকানা-মিজমিজি পুর্বপাড়া পাগলাবাড়ি এলাকা। তার বাবা আবু সাঈদ আদমজী জুট মিলস জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সহসভাপতি ছিল। চাচা আমির হোসেন ওরফে শুটার আমির ওরফে বন্দুক আমির জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রচার সম্পাদক ছিল। বর্তমানে তার ছোট ভাই জুয়েল রানা নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সহ সভাপতি। তার বিরুদ্ধে হেফাজতের দুটি মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। আরেক ভাই জসিম বিএনপিকর্মী। ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিল। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে ।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের ধানের শীষের নির্বাচন করে টাইগার ফারুক ও তার বাপ চাচারা । আদমজী জুট মিলস চলাকালীন তৎকালীন নিউ কলোনী ১নং নতুন গেইটে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী শামীম ওসমানের নৌকার প্রতীক ভেঙ্গে ফেলে টাইগার ফারুক। এবং ওই নির্বাচনে শামীম ওসমান পরাজিত হওয়ার পর আগুন দিয়ে নৌকার ক্যাম্প জ্বালিয়ে দেয় ফারুক।
বিএনপি সরকারের পতনের পর পিঠ বাঁচাতে কৌশলে আওয়ামীলীগের শিবিরে মিশে যায় টাইগার ফারুক। এবং নিজেকে কখনো যুবলীগ নেতা আবার কখনো যুবলীগ কর্মী পরিচয় দেয়। এই সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ফারুক মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। আদমজী ইপিজেডে ব্যবসার করার অজুহাতে ভেতরে ভেতরে চলে তার মাদক ব্যবসা। যার কারণে রাতরাতি সে অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের জমি কিনে সেখানে বহুতল বিল্ডিং বানিয়েছে।
টাইগার ফারুক সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি টিসি রোডস্থ বৈশাখী কুঞ্জের বিপরীত দিকে বিএনপির হযরত আলীর দোতলা বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় যুবলীগের কথিত কার্যালয় বানায়। বর্তমানে ফারুক হত্যা মামলার আসামী। এক পযায়ে চলতি বছরের গত ১০ মার্চ কুমিল্লা ডিবি পুলিশের হাতে ফেনসিডলসহ গ্রেপ্তার হয় টাইগার ফারুকের এক সদস্য আলমগীর। ২ এপ্রিল রাতে ঢাকার পল্টনে র্যাব-৩ এর হাতে গ্রেপ্তার হয় টাইগার ফারুকের ক্যাশিয়ার মিলন ও সহযোগি। তাদের কাছ থেকে ১৯ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। ১৬ এপ্রিল বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড থেকে টাইগার ফারুকের অন্যতম সহযোগি রাকিবসহ ৫ জনকে ১৮ কেজি গাঁজা ও ৯৬ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩।
এমন অপকর্ম ছাড়াও টাইগার ফারকের রয়েছে নানা অপরাধ সাম্রাজ্য । শতাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে গঠিত এই টাইগাার বাহিনীর সদস্যরা নানা অপরাধের জন্য চষে বেড়ায় পুরো সিদ্ধিরগঞ্জে ।








Discussion about this post