নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি মসজিদের আলোচিত সমালোচিত ঈমাম মাওলানা আবদুল আউয়াল হেফাজত ইসলামীর নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছেন ।
সবে বরাতের রাতে বয়ানের এক পর্যায়ে মাওলানা আউয়াল অচিরেই সাংবাদিক সম্মলনে করে এমন ঘোষনা দিবেন বলেও মুসুল্লীদের উদ্দেশে হেফাজতের নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়ার ঘোষনা দেন ।
৪ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও তে দেখা যায় মাওলানা আবদুল আউয়াল বারবার হেফাজত ছেড়ে দেয়ার ঘোষনা দিয়ে নিজের অসহায়ত্বের ঘোষনা দিয়ে আরো বলেন, আমি আর কোন নেতৃত্বে যাবো না, যাবো না, যাবো না ! হেফাজত থেকে সরসরি ইস্তফা দিয়ে দিচ্ছি । আপনাদের সাক্ষি রেখে আজ সবে বরাতের রাতে সবাইকে জানিয়ে দিলাম আমি আর হেফাজতের নেতৃত্বে থাকবো না।
সোমবার (২৯ মার্চ) রাতে পবিত্র শবে বরাতের বয়ানে মাওলানা আব্দুল আলীম আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আমাদের বুঝতেছেনা, আমাদের লোকেরাও বুঝতেছেনা। অতি উৎসাহীওয়ালারাও বুঝেনা। তারা বলছে, হুজুর হরতালের দিন গেলোনা কেন।
আমি বলতেছি, আমি আর দল করবোনা, আমি মসজিদে থাকবো। আমি আর সরাসরি নেতৃত্ব দিয়ে কোন কাজে যাবোনা, যাবোনা, যাবোনা। আমি একবারে নিষেধ করেছি। যারা অতি উৎসাহী আছো তোমরা কর, আমার বৃদ্ধ বয়স, অসুস্থ মানুষ, হাঁটতে পারিনা, দাঁড়াতে পারিনা। তাই আমি আর হেফাজতের কোন নেতৃত্ব দিবো, আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিবোনা। কর্মী হিসেবে যতদিন পারি থাকবো। এটা সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছি, সাংবাদিক সম্মেলন করে ইস্তেফা দিয়ে দিবো। হেফাজতের নেতৃত্ব আর দিবোনা।
মাওলানা আউয়াল বলেন, ২৯ মার্চ আছরের পর আমার এখানে দোয়া ছিল, তারা এটা উপেক্ষা করে দেওভোগ মাদ্রাসায় গিয়ে দোয়া পড়ছে। আমারে অটোমেটিক সাইড করছে, তারা বলে এমন নেতা দিয়ে আর চলবোনা। আমিও আল্লাহর হস্তে নেতৃত্ব ছেড়ে দিলাম, আর নেতৃত্ব দিবোনা। হেফাজতের আমির হওয়ার দরকার নেই, সাধারণ মুসলমান হিসেবে বেঁচে থাকবো। আর কোন ডাক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে আসবেনা। আমাকে মাইনাস করে বলতেছে, কেন আমি বের হলাম না।
রোববার হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতাল প্রসঙ্গে মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেন, সেই দিন র্যাব-পুলিশ এমনভাবে দাঁড়িয়েছিল আমরা মসজিদ থেকে বের হলেই গুলি করতো। তারা অ্যাকশনে চলে গেলে আমাদের কাছে তো অস্ত্র নেই আমরা তো পারবোনা। যার জন্য ডিআইটি মসজিদের আমগাছ তলা পর্যন্তই আমরা সীমাবদ্ধ ছিলাম। পরে শোনা যাচ্ছে, চিটাগাংরোডে ১৭টি গাড়ি পুড়েছে, কারা পুড়েছে তা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়। কিছু সন্ত্রাসী লোকেরা পুড়েছে, আমাদের ছাত্ররা নাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, আপনি যদি আমাদের কথাগুলো না মানতেন তবে এই মামলাগুলো সব আপনাদের নামে হতো। এক নম্বর আসামী আপনি হতেন।
এরআগে সোমবার (২৯ মার্চ) বিকেলে ফতুল্লার দেওভোগ মাদ্রাসা জামে মসজিদে হেফাজতে ইসলাম নারায়ণগঞ্জ মহানগর আয়োজিত এক সভা শেষে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মাওলানা ফেরদৌসুর রহমান।
হেফাজত ইসলাম জেলার সাধারণ সম্পাদক মুফতি বশিরউল্লাহ সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন হেফাজত ইসলাম মহানগরের সভাপতি মাওলানা ফেরদৌসুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মুফতি হারুন অর রশিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আলী হোসেন, অর্থ সম্পাদক মুফতি দেলোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর আহম্মদ উল্লাহ, মাওলানা রুহুল আমিন, জমিরউদ্দিন ফারুকি, মুফতি আনিস আনসারি প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার হেফাজতের ডাকা হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কয়েকটি স্পটে বাস-ট্রাকে আগুন, সড়কে আগুন, পুলিশের সাথে সংর্ঘর্ষ, সাংবাদিককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত অর্ধশত আহত হন। প্রায় সারাদিন সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তা বন্ধ থাকে। দফায় দফায় হেফাজত কর্মীদের সাথে পুলিশের সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে।হেফাজত কর্মীরা ছিলো মারমুখী। তারা জ্বালাও পোড়াও করেছে।
একই সাথে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় রাজাকার আলবদর ও কুলাংগার পাকিস্তানিদের মতো ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সড়কে তান্ডব চালিয়ে সাংবাদিকদের চার কলেমা পড়িয়ে মুসলমান নিশ্চিত করতে মারপিটের ঘটনা ঘটায় । যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ঝড় উঠেছে ।









Discussion about this post