কয়েকদিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকায় উত্তেজনার পর এবার ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, চাঁদা দিতে না পারলে বাড়ি দখলের হুমকি এবং দুইটির একটিও দিতে না চাইলে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে জীবনের তরে শেষ করে দিবে এবং লাশ নিশ্চিহ্ন করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি শহারিয়ার রেজা হিমেল, তাঁর বাবা ও দুই চাচার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
১৪ অক্টোবর বুধবার ফতুল্লা থানায় ওই অভিযোগে ফতুল্লা অভিযোগ দায়ের করেন ফতুল্লা ইউনিয়নের সস্তাপুর মধ্যপাড়া এলাকার ভুক্তভোগী মো. নজরুল ইসলাম।
এদিকে দুপুরে ফতুল্লার সস্তাপুরে ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের বাড়িতে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল এ) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী। তিনি নজরুল ইসলাম ও তার পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে ফতুল্লা থানায় লিখিত আকারে অভিযোগ দিতে বলেন।
অভিযোগপত্রে ছাত্রলীগের সহ সভাপতি শাহরিয়ার রেজা হিমেল, বাবা মো. শাহজালাল, দুই চাচা মজিবর ও জুয়েল সহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
অন্যরা হলেন শাহজাহান, আনোয়ার হোসেন, ফারুক আহাম্মদ, মো. হারুন, রুহুল আমিন, খোরশেদ আলম খুশু, আ. রাজ্জাক, মো. গালিব হোসেন, জহিরুল ইসলাম জহু, মো. জাকির, কুদ্দুস মিয়া, মো. রাজু, মো. রানা।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ‘সকল বিবাদীগণ পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বিভিন্ন সময় আমার বিভিন্ন ক্ষতি করার পায়তারা করে আসছে। বিবাদীরা আমার সম্পত্তি জোর পূর্বক দখল করে আমার জান মালের ক্ষতি করবে বলে বহুবার হুমকি ধামকি দিয়ে এসেছে। বিবাদী মো. শাহজালালের উষ্কানিতে সকল বিবাদীরা গত ৭ অক্টোবর অনুমান সন্ধায় অনুমান সাড়ে ৬ টায় দেশীয় ধারালো ও আগ্নেয়াস্ত্র সমেত সুসজ্জিত হয়ে আমার বাসায় অনধিকার প্রবেশ করে। আমি তাদের এমন আচরণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরি।’
‘এসময় বিবাদী শাহরিয়ার রেজা হিমেল আমার নিকট হতে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে অন্যথায় আমার বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে। আমি তাঁদের কথায় দ্বিমত করলে তাঁরা সবাই আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে এলোপাথারী কিল ঘুষি লাথি মারতে মারতে শাহরিয়ার রেজা হিমেল আমার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দেয় যে আমি যদি তাঁদের কথা মেনে না নেই তাহলে আমাকে জীবনের তরে শেষ করে দিবে এবং আমার লাশ নিশ্চিহ্ন করে দিবে। এমতাবস্থায় যে কোনো সময় বিবাদীরা বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করছি।’
এর আগে গত ১৩ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে একই অভিযোগে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার এবং পরবর্তিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন তিনি।
এছাড়া গত বছরের শেষের দিকে রাস্তায় বালু রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির প্রতিবাদ করায় বাবা ছেলে সহ অনন্ত ৫ জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। হামলাকারীরা সস্তাপুর এলাকার মজিবর ও ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার রেজা হিমেলের অনুগামী বলে জানা গেছে। ঘটনার পর হিমেল সেখানে উপস্থিত হয়ে জাকির নামের একজনকে গুলি করে দেওয়ার প্রকাশ্য হুমকি দেন। সেই সঙ্গে জাকির ও তার লোকজনদের ধরে আনার জন্য অনুগামীদের নির্দেশ দেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি শাহরিয়ার রেজা হিমেলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়। এর আগে ৪ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছিলো তিন সন্তান নিয়ে এক দম্পতি। রিকশা গ্যারেজ মাহজন শফি প্রধান, তার স্ত্রী মেহেরুন নেছা ও তিন ছেলে সন্তান কে নিয়ে ওই মানববন্ধন করেন এর পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এর পর থেকেই তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ আসছে।
মানববন্ধনে শফি প্রধান বলেছিলেন, ‘সস্তাপুর এলাকায় আমার গ্যারেজের সামনে রাস্তায় এক চালক রিকশা রেখে গ্যারেজে আসে। এসময় ছাত্রলীগ নেতা হিমেলের চাচা মজিবুর ও তার বাহিনীর লোকজন যেতে সমস্যা হওয়ায় আমার তিনটি সন্তানের সামনে আমাকে এলোপাথারি মারধর করে। এতে আমার ছেলেরা আমাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। তখন মজিবুর তার লোকজন দিয়ে আমার তিন ছেলেকে গলায় ছুরি ধরে রাখে। ওই সময় পার্শ্ববর্তী সজল সহ কয়েকজন এগিয়ে এসে আমাকে তাদের কাছ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। এতে সজলসহ কয়েকজনকে এলোপাথারী মারধর করে। এক পর্যায়ে সজলের একটি আঙ্গুলে কোপ দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং আরো একজনকে কুপিয়ে তাঁরা চলে যায়।’
‘এঘটনায় আমার ছেলে বাদল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় হিমেলের চাচা মজিবুল ও তাঁদের বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলাটি প্রত্যাহার করে নিতে হিমেল তার চাচা মজিবুর ও জুয়েল নানা ভাবে হুমকি দিতে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘এক পর্যায়ে মজিবুর তার সহযোগি আনোয়ারকে দিয়ে কয়েকজনকে আমার গ্যারেজে পাঠায়। তারা এসেই আবারো মারধর করে হুমকি দিয়ে যায়। মামলা না উঠালে একাধীক মামলা দিয়ে আমাদের এলাকা ছাড়া করবে। বিষয়টি ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলামকে জানাই। এতে হিমেল ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের কর্মচারীকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ এনে ফতুল্লা থানায় আমার ছেলে বাদলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি মারধরের মামলা করেছেন।’
‘তার পরও আমার ছেলে বাদল মামলা প্রত্যাহার করেনি। এরপর বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মিমাংসার প্রস্তাব দেয় তারা। আমি বলেছি আমার মিমাংসা প্রয়োজন নেই তারা শুধু দুঃখ প্রকাশ করুক এতেই মামলা তুলে নিবো।’
‘কিন্তু তারা দুঃখ প্রকাশ না করে উল্টো এক নারী দিয়ে আমার ছেলে বাদলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছে। আমরা হতদরিদ্র আমার ক্ষমতা নেই এই মামলা চালানোর। আমি তাদের কাছে ক্ষমা চাই আমি বিচার চাই না। আমার ছেলেরা ফেরি করে কাপড় বিক্রি করে সংসার চালায়। আমি পরিবার নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘হিমেলের শেল্টারে তার চাচা মজিবুর ও জুয়েল এলাকায় সাধারন মানুষদের অনেক অত্যাচার করেন। সস্তাপুরে অনেক পরিবারকে বাসা থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা দিয়েছে। সাইনবোর্ড লাগিয়ে বাড়ি ঘর দখল করেছে। তারা অনেক প্রভাবশালী তাদের সঙ্গে আমাদের কোন তুলনা হয় না। আমরা খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ। তাদের আক্রোশ থেকে রক্ষা পেতেই জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।’
প্রসঙ্গত নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া থেকে শিবু জালকুড়ি পর্যন্ত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের দুই পাশে বড় বড় বিলবোর্ড আর সাইনবোর্ডে ঝুলছে একজনের ছবি। বিশাল আকৃতির ছবির সঙ্গে আছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদেরও ছবি। বিশাল আকৃতির ওই নেতার নাম শাহরিয়ার রেজা হিমেল। করেন ছাত্রলীগের রাজনীতি। সে কারণেই সড়কের পাশের বিলবোর্ড আর অনেক বহুতল ভবনের ছাদেও শোভা পাচ্ছে সেই ব্যানার।
স্থানীয়রা জানান, বড় বড় বিলবোর্ডেই না বরং এলাকাতেই বেশ দাপটশালী এ হিমেল। রয়েছে বিশাল কর্মী বাহিনী। ধরাকে সরা জ্ঞান করেন তিনি। এলাকার সব কিছুই এখন তার নিয়ন্ত্রনে। ইশারার বাইরে হয় না কিছুই। আর এতে সব সময়ে তিনি ব্যবহার করেন একজন প্রভাবশালী এমপি পুত্রের নাম। এলাকার লোকজনও জানে ওই এমপি পুত্র তার বন্ধু। সে কারণে ভয়ে তটস্থ থাকে সকলে।
ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সহ সভাপতি হলেও সাংগঠনিক কার্যক্রমকে কেয়ার করেন না তিনি। সেটার প্রমাণ মিলে ব্যানার ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে। সেখানের কোথাও নেই ছাত্রলীগ নেতাদের ছবি। সভাপতি কিংবা সেক্রেটারী কারো ছবিই ঠাঁই পায়নি সেখানে।
ফতুল্লার সস্তাপুর, শিবু মার্কেট, কোতোয়ালেরবাগ সহ আশপাশ এলাকা মূলত হিমেলের নিয়ন্ত্রনে। সেখানে পান থেকে চুন খসলেও হিমেলকে অবহিত করতে হয়। এলাকাতে সবাই এক নামেই চিনে ‘হিমেল ভাই’।
গত বছরের শেষের দিকে রাস্তায় বালু রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির প্রতিবাদ করায় বাবা ছেলে সহ অনন্ত ৫ জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। হামলাকারীরা সস্তাপুর এলাকার মজিবর ও ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার রেজা হিমেলের অনুগামী বলে জানা গেছে। ঘটনার পর হিমেল সেখানে উপস্থিত হয়ে জাকির নামের একজনকে গুলি করে দেওয়ার প্রকাশ্য হুমকি দেন। সেই সঙ্গে জাকির ও তার লোকজনদের ধরে আনার জন্য অনুগামীদের নির্দেশ দেন।









Discussion about this post