বিশেষ প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কুতুবপুর এলাকায় এক পুলিশ সদস্যকে প্রকাশ্যে হুমকি-ধমকি দিয়ে শাসিয়েছেন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মীর হোসেন মীরু।
সাদা পোশাকে থাকা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) এক সদস্যকে আংগুল উঁচিয়ে প্রকাশ্যে শাসানোর তার একটি ভিডিওচিত্র মংগলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। পরে এই সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রচার হতে থাকে।
মীর হোসেন মীরু ফতুল্লা থানার কুতুবপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ এক ডজনেরও বেশি মামলার আসামি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সোমবার (১২ অক্টোবর) ফতুল্লার পাগলা বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাজীব তালুকদার ওরফে ভিপি রাজীবের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানবন্ধনের আয়োজন করা হয়। ওই মানববন্ধনের সভাপতিত্ব করেন কুতুবপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক একাধিক মামলার আসামি মীর হোসেন মীরু।
মানববন্ধনের এক পর্যায়ে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) কনস্টেবল আব্দুল মতিনের সাথে বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন মীরু। পরে রিকশায় উঠে ওই পুলিশ সদস্যকে হুমকি-ধমকি দেন তিনি।
এই ঘটনার ভাইরাল হওয়া চব্বিশ সেকেন্ডের ওই ভিডিওচিত্রে মীর হোসেন মীরুকে উঁচু গলায় বলতে শোনা যায়, ‘আপনি আওয়ামী লীগ করেন, আপনি যুবলীগ করেন, ছাত্রলীগ করেন, আপনি বিএনপি করেন, জাতীয় পার্টি করেন ? আপনি কেন পোলাপানরে দৌড়ানি দিবেন ?’ সে সময় উপস্থিত ডিএসবির কনস্টেবল আব্দুল মতিনকে উদ্দেশ্য করে প্রকাশ্যেই কথাগুলো বলেন এবং হুমকি ধামকি দেন মীরু।
ওই পুলিশ সদস্যকে হুমকি দিয়ে মীরু বলেন, ‘এইগুলা কিন্তু ভালো না। পূর্বের ইতিহাস কিন্তু করাইয়েন না। আপনি কেন এইগুলা করবেন ? কেন দৌড়ানি দিবেন ?’ এ সময় ওই পুলিশ সদস্যকে আঙুল উঁচিয়ে শাসাতে দেখা যায় মীর হোসেন মীরুকে।
এ বিষয়ে বুধবার রাতে মীর হোসেন মীরুর সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে সাংবাদিকদেরকে বলেন, এলাকার একটা হত্যা মামলার আসামীদের পুলিশ দীর্ঘ সাত মাস যাবত গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হওয়ায় আমরা এলাকাবাসি মিলে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করতে চেয়েছিলাম। তবে মানববন্ধন শুরুর দিকে সেখানে প্রস্তুতি নিচ্ছিল আমার লোকজন। তারা মানববন্ধনে যোগদানের উদ্দেশ্যে আসার সময় রড হাতে নিয়ে তাদের দৌড়ানি দেন ডিএসবির সদস্য আবদুল মতিন।
মিরু বলেন, শান্তিপূর্ণ একটা কর্মসূচিতে এমন কাজ কেন করবেন তিনি ? এইজন্য আমি একটু উত্তেজিত তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম । পরে অবশ্য তিনি সরি বলে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন।
স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মিরুর দাবি, থানা পুলিশতো আমাদের এই কর্মসূচী নিষেধ করে নাই। ডিএসবি’র সদস্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আদেশ ব্যতীত বাঁধা দেয়ার এখতিয়ার রাখেন না। যদি এমন কোন আদেশ থাক তো তাহলে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের নিষেধ করা হতো। আমরাও আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। তবে রড নিয়ে দৌড়ানি দেয়ার মতো এমন আচরণ তার উচিত হয় নি।
ভিডিও ভাইরাল এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ প্রসংগে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মিরু বলেন, এই বিষয় নিয়ে নিউজ কেন হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না। অইদিনই তার সাথে ভুল বোঝাবুঝি সমাধাধান হয়ে গেছে । তাছাড়া পুলিশ প্রশাসন থেকেও এ ব্যাপারে আমাকে কোন কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেন নি। যদি তারা জানতে চান তবে আমি সত্য ঘটনাই তুলে ধরবো।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: শফিউল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে এখনো অবগত নই। তবে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে তদন্ত করে দেখব। যার দোষ পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।
উল্লেখ্য মীর হোসেন মীরুকে ঘিরে ফতুল্লার বিশাল শিল্পাঞ্চলে সকল ধরনের অভিযোগ রয়েছে ৷ গুলিবিদ্ধ হয়ে হুইল চেয়ারে দুর্ধর্ষ মীরু চলাচল করলেও তার রয়েছে বিশাল বাহিনী । দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মীরু ও তার বাহিনীর অপরাধের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস করে না ।









Discussion about this post