শহরের কয়েকজন হকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা অসহায় হয়েই ফুটপাতে ব্যবসা করতে বসি । আমাদের অসহায়ত্বের প্রতি সকলের ই সহানুভূতি থাকলেও কিছু নামধারী নেতা (চাঁদাবাজ) পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের প্রকাশ্য নগ্ন চাঁদা আদায়ের কারণেই চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে নগরবাসীর মাঝে ।
চিহ্নিত চাঁদাবাজ আর অসাধু কর্মকর্তার সাথে নিয়মিত আঁতাত করে চাঁদাবাজির বিশাল অংশ ভাগ-বাঁটোয়ারা করে ফুটপাতের দখলের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে অসাধু চক্র ।
চাঁদা আদায়কারী নেতাদেরকেই ওই অসাধু কর্মকর্তারা এমন আন্দোলনের ছক তৈরি করে দেন। আর এই আন্দোলনে যারা অংশ না নেয় তাদেরকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করার ঘটনা প্রতিদিন ই ঘটে চলেছে । নারায়ণগঞ্জ শহরের কতজন লাইনম্যান কি পরিমাণ চাঁদা আদায় করেন তার হিসাব কারো কাছে না থাকলেও অসাধু কর্মকর্তা ও চাঁদা আদায়কারী কয়েকজনের কাছে ঠিকই আছে । আর এই হকারদের কারা কি স্বার্থে ব্যবহার করেন তা সকলের ই জানা ।
মুঠোফোনে মধ্যরাতে ফুটপাতের দোকান গুটিয়ে একজন হকার আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের গোবিন্দ, ফাড়ি পুলিশ, থানা পুলিশ, টহল পুলিশ প্রতিদিন ও মাসিক হিসেবে কি পরিমাণ বখড়া নেয় তার একটি হিসাব প্রকাশ করে এই প্রতিবেদকের কাছে।
নারায়ণগঞ্জ শহরে হকার ইস্যুতে আলোচিত সেই লঙ্কাকান্ডের ঘটনায় হকার নেতাদের সরাসরি সম্পৃক্ততার বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। বিভিন্ন স্থির চিত্র ও ভিডিওতে হকার নেতা ও জেলা হকার সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক আসাদুল ইসলাম আসাদকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বহরে ঢিল ছুঁড়তে দেখা গেছে। প্রতিপক্ষের ছোঁড়া ঢিলে রক্তও হয়ে সড়কে লুটিয়ে পড়ে মেয়র আইভী সহ অনেকে। সেই লঙ্কাকান্ডের দুই বছর পেরুতে না পেরুতে ফের হকারদের উষ্কে দিয়ে আন্দোলনে নেমেছে আসাদ। হকারদের নেতৃত্ব দিয়ে সড়ক অবরোধ সহ নানা কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে আরেকটি রণক্ষেত্র তৈরি করতে যাচ্ছে সেকথা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়না।
সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্যতম প্রাধান আলোচিত ইস্যু হচ্ছে হকারদের ফুটপাতে বসা নিয়ে আন্দোলন। কয়েকদিন পর পরই ফুটপাথে বসার দাবীতে তারা আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। আর এই আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে দিন দিন আগ্রাসী ভূমিকার দিকে যাচ্ছেন হকাররা। অনেক সময় পুলিশেরও বাধাও তারা মানছে না। পুলিশ বাধা দিতে আসলে পুলিশের দিকেও আগ্রাসী ভূমিকায় তেড়ে যাচ্ছে হকাররা।
জানা যায়, গত একমাস ধরেই ‘পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ চলবে না’ স্লোগানে উচ্ছেদের নামে জুলুম নির্যাতন, গ্রেফতার ও মালামাল লুট বন্ধ করার দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আসছিলেন হকাররা। তবে গত কয়েকদিন তাদের আন্দোলন কর্মসূচি বন্ধ ছিল। আশায় ছিলেন হয়তো তাদেরকে ফুটপাতে বসতে দেয়া হতে পারে। কিন্তু তাদের সে আশা আর পূরণ হয়নি। সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশ প্রশাসন কেউই তাদের দাবীকে পাত্তা দেয়নি। পুলিশ প্রশাসন কোনভাবেই তাদেরকে বসতে দিচ্ছে না।
আর তাই ২৯ জুলাই দুপুরে হঠাৎ করেই নারায়ণগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে হকাররা। সেই সাথে মিছিল শেষে সমাবেশও করেছেন তারা। এদিন সকালে তাদের বিক্ষোভ মিছিল বের করার কথা থাকলেও সকালে মিছিল বের না করে দুপুরে হঠাৎ করেই তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এসময় তাদেরকে পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা কয়েকবার বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও হকাররা কোনো বাধা মানেনি। পুলিশ যতবারই তাদেরকে বাধা দিতে এসেছেন ঠিক ততবারই হকাররা পুলিশের দিকে আগ্রাসী ভূমিকায় তেড়ে গেছেন। ফলে পুলিশকে বাধ্য হয়েই পিছু নিতে হয়েছে।
সবশেষ ৩০ জুলাই বিকেলে সুগন্ধা প্লাস রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে পুলিশ ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করতে গেলে পুলিশের গাড়ি ব্যারিকেড দিয়ে সড়কে বসেই আন্দোলন চালায় হকারেরা । পরে পুলিশ বাধ্য হয়েই পিছু হটে ।
যদিও এদিন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে পুলিশ হকারদের মতো আগ্রাসী ভূমিকায় থাকলে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতেও পারতো। কিন্তু বরাবরের মতোই পুলিশ ছিলেন নমনীয় ভূমিকায়। আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে জনসাধারণের যেন কোনো ভোগান্তির শিকার হতে না হয় সেই চেষ্টাই করে গেছেন পুলিশ প্রশাসন।
এর আগে গত ১৩ জুলাই বিকেলে আন্দোলনের কৌশল পাল্টিয়ে আগে থেকে পূর্ব ঘোষণা কিংবা কাউকে কোনো কিছু না জানিয়েই হঠাৎ করেই ঝটিকা সমাবেশ কিংবা ঝটিকা মিছিল করে চাষাঢ়া গোল চত্ত্বর এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন হকাররা। সেদিনও হকাররা আক্রমনাত্বক ভূমিকায় ছিলেন। আইন-শঙ্খলা কাজে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীকেও তারা পাত্তা দিচ্ছিলেন না তারা । প্রেসক্লাবের সামনে বাশ লাঠি নিয়ে সড়ক বন্ধ করে দেয় এবং পরিবহনের উপর হামলা চালাতে চেষ্টা করে ।
ফলশ্রুতিতে হকারদের এই কর্মসূচিতে যে সকল হকাররা অংশগ্রহণ করেনি তাদেরকে মারধর করে অংশগ্রহণ করিয়েছেন। এদিন তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় সাধু পৌলের গীর্জার নিকটবর্তী একটি গলিতে বিভিন্ন পন্য সামগ্রী নিয়ে বসেছিলেন। আর এতেই অন্য হকারদের মাথা নষ্ট হয়ে যায়। তারা জোর করে মারধর করে ওই হকারকে বিক্ষোভ মিছিল অংশগ্রহণ করান।
জানা গেছে, আন্দোলনের কৌশল পাল্টিয়ে পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ করেই ঝটিকা মিছিল করে সড়ক অবরোধ করে। পূর্ব ঘোষণা কিংবা কাউকে কিছু জানালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধা আসার সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে কাউকে কিছু জানিয়ে কিংবা ঘোষণা না দিয়েই হঠাৎ করে আন্দোলন করে শহরের মধ্যে উত্তোজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন। আর তাদের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে হকার নেতারা। এই বেআইনি দাবি আদায়ে হকারদের ইষ্কে দিচ্ছে এই নেতারা।
অবরোধের সময় হকাররা আক্রমনাত্মক ভূমিকায় ছিলেন। এসম তারা হকার নেতাদের দিক নির্দেশনা এমনকি আইন-শঙ্খলা কাজে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীকেও তারা পাত্তা দিচ্ছিলেন না। যদিও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে তাদের এই আক্রমনাত্বক ভূমিকার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সাধারণ নাগরবাসীকে। সবশেষ কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই কর্মসূচির সমাপ্তি হয়।
হঠাৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা এক হকার জানান, হঠাৎ করে কিছু না করলে আমাদের দাবী আদায় হবে না। আর তাই কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আন্দোলন করছি। আমরা আশায় ছিলাম জেলা প্রশাসক মেয়রের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করবেন। সেলিম ওসমানও মেয়রের সাথে আলোচনা করেছেন। কিন্তু মেয়র জানিয়ে দিয়েছেন এক মিনিটের জন্যও বসতে দিবেন না। তাই কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আন্দোলনে নেমেছি। আমাদের দাবী আদায় না হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
আসাদুল ইসলাম আসাদ বলেন, আমরা পেটের দায়ে রাস্তায় নেমেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পেটে ভাত না জুটবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না। আমরা আন্দোলনে পিছপা হবো না, আমরা রাস্তা থেকে সড়বো না। আমাদের পুনর্বাসন করতে হবে। অন্যথায় মিছিল মিটিং চলতেই থাকবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী আলোচিত হকার সংঘর্ষের ঘটনায় মেয়র আইভী বহরে ঢিল ছোঁড়তে দেখা গেছে হকার সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক আসাদুল ইসলাম আসাদকে। গণমাধ্যমকর্মদের ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ ও স্থিতি চিত্রে তা ধরা পরে। পরে এ নিয়ে একাধিকবার সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। ওই সংঘর্ষের দিন মেয়র আইভী সহ তার অনুগামীরা পথ সভা করে ফুটপাত দিয়ে চাষাঢ়া মুখে গমন করছিল। প্রেস ক্লাব অতিক্রম করে সায়েম প্লাজা মার্কেটের সামনে আসলে এমপি শামীম ওসমানের নেতাকর্মী ও হকার নেতা সহ হকারদের একাংশ ইটের টুকরো সহ বিভিন্ন বস্তু দিয়ে আইভী বহরের দিকে ইট বর্ষণ করে। সেসময় হকার নেতা আসাদকে আইভী বহরের দিকে ঢিল ছোঁড়তে দেখা যায়।
সেসময় মানবঢল মেয়র আইভীর জীবন রক্ষা করে। তবে সে আহত হয়। এছাড়া আইভীর অর্ধশত অনুগামী রক্তাক্ত হয়। অনেকে সড়কে লুটিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে প্রবল চাপের মুখে হকারদের আন্দোলন সংগ্রম থমকে যায় যেকারণে এই ইস্যুটিও চাপা পড়ে যায়। তবে দীর্ঘ দুই বছর পর ফের হকাররা ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নামে।









Discussion about this post