আজব এক জেলার নাম নারায়ণগঞ্জ । আর নারায়ণগঞ্জের সর্বত্র এমন কোন অপকর্ম নাই যা শাসক দলের প্রভাবশালী নেতাদের নাম ভাংগিয়ে এবং শেল্টারে সংগঠিত হচ্ছে না । প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব আচরণের অভাবেই অপরাধী চক্র যা খুশি তা করে যাচ্ছে বিরামহীনভাবেই
এনএনইউ রিপোর্ট :
শাসক দলের এক ছিচকে নেতার নাম আলাউদ্দিন হাওলাদার । তিনি সুবিধাবাদী নেতা হিসেবেও অধিক পরিচিত । শাসক দলের ছত্রছায়ায় থাকতে পছন্দ করেন আলাউদ্দিন । তিনি আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত । অপর তিনি বিএনপি নেতা কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম সেন্টুর অত্যান্ত আস্থাভাজন হিসেবে সকলের কাছে সমানভাবে পরিচিত। আবার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার। তার আরেকটা পরিচয় হচ্ছে, তিনি প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমান অনুসারি। কুতুবপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম সেন্টু বিএনপির নেতা হলেও তিনি বর্তমানে পুরো সদর উপজেলায় আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাদের আস্থাভাজন হিসেবেও পরিচিত। সেক্ষেত্রে আলাউদ্দিন মেম্বার যা খুশি তা করতেই পারে এমন ধারণা থেকেই মধ্যযুগীয় কায়দায়্য গরুপেটা করেছেন প্রকাশ্যেই ।
এর পূর্বেও আলাউদ্দিন মেম্বার সাবেক এমপি কবরীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে দাবড়িয়ে বেড়িয়েছিলেন পুরো কুতুবপুর।
সন্ত্রাসী আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়াসহ ভূমিদস্যুতারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় পর্যায়ে একজন বিতর্কীত এই আলাউদ্দিন মেম্বার।
স্থানীয়দের মতে, নানা অপকর্ম করার পরও তার টিকিটিও কেউ ছুঁতে পারেনি। কুতুবপুর এলাকায় যারা নতুন বাড়িঘর করেছেন, তারা এই আলাউদ্দিন হাওলাদারের গল্পটা একটু অন্দরের জানেন। স্থানীয় অনেকেই আছেন, এই আওয়ামী লীগ নেতার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস দেখান না। কথিত রয়েছে, তার অফিস নির্যাতনের টর্চারসেল হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
তবে, এবার সেই আলাউদ্দিন হাওলাদারের টর্চার সেলের ভেতর দুই যুবককে অমানসিক নির্যাতন করার একটি ভিডিও ফুটেজ এরই মধ্যে ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে ।
কতটা বর্বর হলে ওভাবে মানুষকে পেটাতে পারে, তা ওই ভিডিও না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়।
ভিডিও সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের শেষ দিন তথা থার্টিফার্স্ট নাইটে নাইম ও রাতুল নামে দুই যুবককে ধরে এনে চোর আখ্যা দিয়ে আলাউদ্দিন হাওলাদারের অফিসে গরুপেটা করে পেটানো হয়। পরবর্তীতে একটি ছাগল দিয়ে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছিলো।
নাঈমের মা নাজমা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, আমার পোলায় প্রিন্টিং কারখানায় কাম করে। ৩১ ডিসেম্বর রাতুলের লগে পোলারেও ধইরা লইয়া যায়। মারতে মারতে লইয়া গেছে। পরে আবার আলাউদ্দিন হাওলাদার তার অফিসে লইয়া গিয়া ইচ্ছামত মারছে। কুত্তারেও মাইনষে অমনে পেডায় না। আমার পোলায় অন্যায় করলে আমগো জানাইতো, পুলিশরে দিতো, হেয় অমন কইরা মারলো ক্যান। আমি এর বিচার চাই।
এদিকে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন হাওলাদার মারপিটের কথা স্বীকার করে বলেন, তারা ছাগল চুরি করেছিলেন। সিসি টিভির ফুটেজে ধরা পড়েছিলো। পরে ছাগলের মালিক থানায় অভিযোগ করলে একজন দারোগা আসেন এবং আমার উপর দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য (তবে তিনি দারোগার নাম বলতে পারেননি)। পরে আমি রাতুল নামের একজন ধরে আনার পর সে স্বীকার করছিলো না। পরে তাকে কয়েকটি পিটুনি দিলে সে স্বীকার করে এবং নাঈম সাথে ছিলো জানায়।
তিনি আরও বলেন, নাঈমকে ধরে আনার পর প্রথমে স্বীকার না করলে তাকেও কয়েকটা বারি দেওয়া হয়। পরে তারা স্বীকার করে জালকুড়ি ছাগল বিক্রি করেছে। এরপর দারোগাকে খবর দিলে সেই ছাগলসহ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এদিকে ভিডিওতে দেখা গেছে, দুই যুবককে পেটানো হচ্ছে। আর সেই পেটানোর নির্দেশ দিচ্ছেন আলাউদ্দিন হাওলাদার। কিন্তু পিটুনি দুই চারটে বারি নয়, অনেকটা গুরু পেটানোর মত। যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেননা, যেখানে থানা পুলিশ আছে। আদালত আছে, সেখানে অমন ভাবে পেটানো যে আইনে অপরাধ, সেটি জানেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, হ্যাঁ, এটা অন্যায় হয়েছে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নাই। তাই মাইরটা একটু বেশি হয়ে গেছে। কিন্তু আমি তো ছাগল উদ্ধার কেরছি।
অপরদিকে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ ছাগলসহ দুজন নাঈম ও রাতুলের ছবিসহ তাদের ফেসবুক পেজে একটি ছবি দিয়ে সেখানে জানিয়েছিলেন, শাহী মহল্লা এলাকা থেকে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর শফিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে দুটি বিদেশী জাতের ছাগল চুরি হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ থেকে সে ছাগল উদ্ধারসহ দুজনকে আটক করা হয়। ১ জানুয়ারি তাদেরকে নিয়মিত মামলা দায়েরের মাধ্যমে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু আলাউদ্দিন হাওলাদার দাবি করেছিলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকা থেকে ছাগল উদ্ধার করা হয়েছিলো।
এদিকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারে না। এটা অবশ্যই অপরাধ। ওভাবে যদি পিটিয়ে থাকে, সেটি যদি আমাদের নজরে আসে অথবা কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেন তাহলে অবশ্যই আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।









Discussion about this post