সেলিম মিয়া যাকে এখন অনেকেই ‘থাই ডন’ অথবা ক্যাসিনো কিং বলে জানেন । সেই সেলিম এখন কারাগারে রয়েছে বীরের বেশে । তার চাচাতো ভাই বিএনপির নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নেতা আনোয়ার সাদত সায়েম সকল কুকর্মের সাক্ষী । আল জাজিরার বিতর্কিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই কুখ্যাত সেলিমের কর্মকাণ্ড । তার সকল অপকর্মের ফিরিস্তি উদঘাটন করতে হলে সায়েমের সকল কার্যক্রমের তল্লাসী করলেই বেড়িয়ে আসবে চাঞ্চল্যকর আরো তথ্য ।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর আদালতের দুদকের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা জুলফিকার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপ পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান।
২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২২ নম্বর ফ্লাইট ছাড়ার আগ মুহূর্তে সেলিম প্রধানকে আটক করা হয়। আটকের পর তার রাজধানীর গুলশান, বনানীর বাসা ও অফিসে অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
অভিযানের পর বেড়িয়ে আসে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার মর্তুজাবাদ এলাকার চাঁন মিয়া ও স্ত্রী সফুরা খাতুনের পুুুত্র সেলিম প্রধানের অজানা অসংখ্য অপরাধের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ওই অভিযানে ২৯ লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়।
তথ্য সূত্রে আরো জানা যায়, তবে বিশাল বিত্তবৈভব আর রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাবে সেলিম প্রধান ও তার পরিবারের ব্যাপারে এলাকার মানুষ কথা বলতে এখনও ভয় পান।
এলাকাবাসীর কাছে অবশ্য এক যুগ আগেও সেলিম প্রধানের পরিচয় চাঁন মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া। কয়েকশ’ কোটি টাকার মালিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেলিম মিয়া হয়ে যান সেলিম প্রধান।
এদিকে পৈতৃক বাড়ি এমন জরাজীর্ণ থাকলেও গাউছিয়া থেকে অল্প দূরেই ভুলতা ফ্লাইওভারের শেষ মাথায় সাওঘাট এলাকায় সেলিম প্রধানের সেই আলোচিত ‘জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস’ নামের বহুতল প্রতিষ্ঠান।
যেখানে ছাপানো হয় বাংলাদেশের সব ব্যাংকের চেক বই, এফডিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি।
সরেজমিন রূপগঞ্জের মর্তুজাবাদ এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেলিম প্রধান এক সময় এলাকায় সমিতি শুরু করেছিলেন।
ওই সমিতির বেশ কিছু টাকা মেরে পাড়ি জমান জাপানে। জাপান থাকা অবস্থায় তার প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবসার গোড়াপত্তন হয়। কিন্তু জাপানের টোকিওতেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত হন।
জাপান থেকে বহিষ্কার করা হলে তিনি আমেরিকায় চলে যান। সেখানে এক আমেরিকানকে বিয়েও করেন। আমেরিকান স্ত্রীকে কাজে লাগিয়ে ফের জাপানে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
এক পর্যায়ে বাংলাদেশে ফিরে সেলিম প্রধান ওরফে সেলিম মিয়া বিএনপি-জামায়াত আমলে সখ্য গড়ে তোলেন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আলোচিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে। হয়ে যান তার ব্যবসায়িক পার্টনার।
এলাকাবাসী জানান, তারা সেলিম প্রধানকে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হিসেবে জানলেও তিনি কোনো পদে ছিলেন না। সেলিম প্রধানের আপন চাচাতো ভাই আবু সায়েম জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ পদে আসীন হয়েছেন সেলিম প্রধানের বদান্যতায়।
আবু সায়েম নিজেও জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিংয়ের পরিচালক ছিলেন। এলাকাবাসী জানান, হঠাৎ সেলিমের পরিবর্তন ছিল চোখে পড়ার মতো। এলাকায় আসতেন বছরে ৩-৪ বার। সঙ্গে থাকত দামি গাড়িবহর, অস্ত্রধারী বডিগার্ড।
স্থানীয় বাসিন্দা ও শ্রমিকদের কয়েকজন জানান, গোপন তথ্য। মূলত বিদেশে ও দেশে ক্যাসিনোর পাশাপাশি স্পা ব্যবসা করা সেলিম নিয়মিত আসতেন এ প্রেসে। প্রেসের ভেতরে রয়েছে তার ‘বালাখানা’।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় গভীর রাতে সেলিম এখানে আসতেন ঘনিষ্ঠদের নিয়ে। বিদেশি নাগরিকদেরও নিয়ে আসতেন। সঙ্গে থাকতেন সুন্দরী ললনারা। ভোর পর্যন্ত চলত মদ্যপান, হৈহুল্লোড়।
জানা গেছে, র্যাবের হাতে গ্রেফতার সেলিম ‘প্রধান গ্রুপ’-এর কর্ণধার। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড, পি ২৪ ল ফার্ম, এইউ এন্টারটেইনমেন্ট, পি ২৪ গেমিং, প্রধান হাউস ও প্রধান ম্যাগাজিন।
এর মধ্যে পি ২৪ গেমিংয়ের মাধ্যমে তিনি জুয়াড়িদের ক্যাসিনোয় যুক্ত করতেন। ব্যাংককের পাতায়ায় তার বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনাই নয়, সেলিম রাজশাহীসহ সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মাদক সিন্ডিকেটের হোতা। এমনকি সীমান্তে জাল টাকার মূল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে রূপগঞ্জের মর্তুজাবাদ এলাকার কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেলিম মিয়া যাকে এখন অনেকেই ‘থাই ডন’ অথবা ক্যাসিনো কিং বলে জানেন । সেই সেলিম এখন কারাগারে রয়েছে বীরের বেশে । তার চাচাতো ভাই বিএনপির নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নেতা আনোয়ার সাদত সায়েম সকল কুকর্মের সাক্ষী । আল জাজিরার বিতর্কিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই কুখ্যাত সেলিমের কর্মকাণ্ড । তার সকল অপকর্মের ফিরিস্তি উদঘাটন করতে হলে সায়েমের সকল কার্যক্রমের তল্লাসী ও জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বেড়িয়ে আসবে চাঞ্চল্যকর আরো তথ্য ।









Discussion about this post