নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নিজের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ আহমেদ। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ১ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোট দেওয়া শেষে প্রথম আলোর কাছে তিনি এই অভিযোগ করেন।
শরীফ আহমেদ রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরুল ইসলামের বিপরীতে তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
শরিফ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে বেশ কিছু কেন্দ্রে এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেয় নৌকার লোকজন। সকালে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দেবই কাজিরবাগ আলিম ও হিফজুল কুরআন মাদ্রাসা কেন্দ্রে আমার দুজন এজেন্ট গেলে তাদের ঢুকতে দিচ্ছিল না নৌকার পক্ষের লোকজন। পরবর্তীতে রিটার্নিং কর্মকর্তার সহায়তায় তাদের কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। এ ছাড়া কুলাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আমদিয়া কৃষক শ্রমিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আমার দুই এজেন্টকে হুমকি-ধমকি দিয়ে বের করে দিয়েছে।’ তবে নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতি ও সামগ্রিক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
সকাল সাড়ে ১০টায় দেবই কাজিরবাগ আলিম ও হিফজুল কুরআন মাদ্রাসা কেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা যায়, কেন্দ্রের সামনে নারী ভোটারদের দীর্ঘ সারি। রোদ উপেক্ষা করে ভোটাররা অপেক্ষা করছেন পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে। তাদের অনেকেই ধীর গতিতে ভোটগ্রহণের অভিযোগ করেছেন। রোদে দাঁড়িয়ে থেকে জোসনা বেগম নামের এক নারী অচেতন হয়ে পড়ে যান।

কেন্দ্রের ২ নম্বর কক্ষের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, দুটি বুথে প্রথম দেড় ঘণ্টায় মোট ১১১ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। এই কক্ষে নৌকার দুজন এজেন্ট দেখা গেলেও আনারস প্রতীকের কোনো এজেন্ট পাওয়া যায়নি। ৩ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে দেখা যায়, এক ব্যক্তি গলায় নৌকা প্রতীকের কার্ড ঝুলিয়ে ঘোরাফেরা করছেন।
সংবাদকর্মী প্রবেশ করতে দেখেই তিনি কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। এ সময় কক্ষে থাকা আনারস প্রতীকের এজেন্ট প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, সকালে কেন্দ্রে আসার পর থেকেই কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যেতে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন কক্ষে থাকা বিপ্লব নামের ওই আওয়ামী লীগ কর্মী। হুমকিতে ভয় পেয়ে তাঁর সঙ্গে আসা আরেক এজেন্ট কেন্দ্র থেকে বের হয়ে গেছেন বলে দাবি করেন তিনি। আনারস প্রতীকের এজেন্টের সঙ্গে কথা বলার সময় কক্ষে প্রবেশ করেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি প্রতিবেদককে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তথ্যের প্রয়োজন হলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কক্ষ থেকে নিতে হবে।
ভোট দিতে গিয়ে রোদে দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হয়ে অচেতন হয়ে পড়ে যান জোৎস্না বেগম। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে
এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানানো হলে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান প্রতিবেদককে সঙ্গে নিয়ে ৩ নম্বর কক্ষ পরিদর্শনে যান। সেখানে থাকা আনারস প্রতীকের এজেন্ট নিজেই প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে হুমকি ধামকির বিষয়ে অভিযোগ করেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘দুই-একটা অভিযোগ ছাড়া খুবই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হচ্ছে।’
এর আগে সকাল ৯টা ১ মিনিটে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১০নং জিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম। এ সময় তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নির্বাচনে ভোট শুরুর আগে থেকেই এই কেন্দ্রে শত শত ভোটার কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষা করছিলেন।
এই কেন্দ্রের এক নম্বর ও দুই নম্বর কক্ষের বুথগুলোতে আলোক স্বল্পতার কারণে ভোট দিতে সমস্যা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এত বেশি ভোটার উপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে কয়েকজন ভোটার বলেন, সকালে পরিবেশ ঠান্ডা থাকতে থাকতে ভোট দেওয়ার আশায় দলবেঁধে চলে এসেছেন তাঁরা। তবে কেন্দ্রে এসে দেখেন, ভোটারদের দীর্ঘ সারি। এই কেন্দ্রের ছয়টি বুথের চারটিতেই আনারসের এজেন্ট দেখা যায়নি।
সকাল ১০টায় বৈলদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এই কেন্দ্রের দুটি পুরুষ বুথে প্রথম ১ ঘণ্টায় ১৫১ জন পুরুষ ও ৭২ জন নারী ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কক্ষ দুটির সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। তবে চারটি বুথের কোথাও আনারসের এজেন্ট দেখা যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এগুলো সব মিথ্যা অভিযোগ। উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে।’
উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হচ্ছে দাবি করে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপচে পড়া ভিড়। সকাল নয়টা থেকে নিরবচ্ছিন্ন ভোটগ্রহণ চলছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ ও ধীর গতিতে ভোটগ্রহণ সম্পর্কে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সব কেন্দ্রে তাঁর এজেন্ট দেননি। এজেন্টদের হুমকি-ধমকি দেওয়ার মতো কোনো অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৃদ্ধ ও শিশু সন্তান নিয়ে আসা নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিতে গিয়ে শুরুতে কিছুটা ধীরে ভোটগ্রহণ হয়েছে বলে জানান তিনি।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভোটের আগের রাতের বদলে নির্বাচনের দিন সকালে কেন্দ্রগুলোতে ব্যালট পেপার আনা হয়েছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেটসহ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার ও আর্মড পুলিশ সদস্যরা মাঠে আছেন।








Discussion about this post