২০১৯ সালের তেসরা ডিসেম্বর টেকনাফের হোয়াইকং ইউনিয়নের সিএনজি চালক আব্দুল জলিল টেকনাফ বাজার থেকে নিখোঁজ হন। একজন প্রতিবেশীর কাছ থেকে তার স্ত্রী সেনুয়ারা বেগম খবর পান, মি. জলিলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তিনি থানায় ছুটে যান, কিন্তু থানা থেকে তাকে বলা হয় যে সেখানে নেই তার স্বামী।

“তিন মাস পর আমার বাড়িতে ওসি প্রদীপ আসে। এতদিন নেই নেই বলে, তখন এসে বলে যে তোমার হাজবেন্ডকে যদি জিন্দা দেখতে চাও, ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। আমি বলছি যে আমার বাড়িটা দেখেন, ১০ লক্ষ টাকা কি স্যার আমি ১০টাকাই কিভাবে দেব ? আমার ঘরে ভাতের চাল পর্যন্ত নেই”, বিবিসিকে বলেন সেনুয়ারা বেগম।
সেনুয়ারা বেগম যে ওসি প্রদীপের কথা বলছেন, তিনি টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ, যাকে সম্প্রতি মেজর সিনহা নামে একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে কক্সবাজারের আদালতে।
ওই হত্যাকাণ্ডের আগে থেকেই মি. দাশ কক্সবাজারে আলোচিত ছিলেন তার সময়ে হওয়া একের পর এক ক্রসফায়ারের জন্য।
সেনুয়ারা বেগম বলছিলেন, “কিন্তু উনি (প্রদীপ কুমার দাশ) এরকম করে যখন বলছে, আমি ১০/১৫দিন পর উনাকে টাকা দেই। উনি সেদিন সন্ধ্যার পর এসে আমার হাত থেকে টাকা নিছে, সাত লক্ষ টাকা। আমার স্বামী বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকা রাখছিল সেটা, আর ভিটা-মাটি বন্ধক রেখে, ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে সব জমা করে উনাকে দেই।”
কিন্তু টাকা নেয়ার পরদিন থেকে সোনুয়ারা বেগমকে বলা হয় মি. জলিল পুলিশের কাছে নেই।
টেকনাফ থানার বাইরে প্রায় প্রতিদিন হাজির হয়ে স্বামীর বিষয়ে খোঁজ করতে থাকেন। প্রতিবার তাকে একই উত্তর দেয়া হয়।
২০২০ সালের ৭ই জুলাই স্থানীয় একজন সাংবাদিকের কাছ থেকে খবর পেয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে গিয়ে স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন সেনুয়ারা বেগম।
লাশের সাথে দেয়া ছাড়পত্রে লেখা ছিল পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন মি. জলিল। মৃত আব্দুল জলিলের শরীরে বুলেটের চারটি ক্ষত ছিল।
এরপরও মামলা করতে পারেননি সেনুয়ারা বেগম।
২০২১ সালের শুরুতে ওসি প্রদীপকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন সেনুয়ারা। কেন তিনি এত দেরি করে মামলা করেছিলেন তিনি ?
“আগে তো উনার সামনে কেউ কথা বলতে পারতো না। পরে উনি যখন গ্রেপ্তার হয়, তারপর আমি মামলা করার প্রস্তুতি নেই। আগে তো করতে পারি নাই, মামলা করলে না আমাকেই মেরে ফেলে। এইজন্য সাহসটা পাই নাই।”
জলিলকে হত্যা করা হয়েছিল ৭ই জুলাই, মানে মেজর সিনহা হত্যার ঠিক ২৩ দিন আগে।
৩১ শে জানুয়ারি মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণার দিন সেনুয়ারা বেগমসহ আরো একশোটির মত পরিবার আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন।
এসব পরিবারের সদস্য ও স্বজন মি. দাশের হাতে ‘কথিত ক্রসফায়ারে’ প্রাণ হারিয়েছেন বলে তাদের দাবি।
‘কথিত ক্রসফায়ার’ ছাড়াও সারা দেশে পুলিশের বিরুদ্ধে হেফাজতে নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ঘুষসহ নানাবিধ অভিযোগ আছে।
যদিও মেজর সিনহা হত্যা মামলার দ্রুত রায় হল, কিন্তু অন্য অভিযোগের ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা শোনা যায় না প্রায়শই।
অভিযোগ ওঠার পর পুলিশ সদস্যদের বিচার হওয়ার নজিরও তেমন দেখা যায় না।
কিন্তু পুলিশ কেন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে ?
শতাধিক আঘাতের চিহ্নসমেত এক লাশ
দুই হাজার কুড়ি সালের অক্টোবরে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে মারা যান শহরের আখালিয়ার বাসিন্দা রায়হান আহমদ।
পরিবার বলছে, ১০ই অক্টোবর রাতে সিলেট শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মী রায়হান পুলিশের হাতে আটক হন। ভোররাতে তার পরিবারের কাছে টাকা নিয়ে থানায় যেতে বলা হয়।
কিন্তু সকালে থানায় গিয়ে রায়হানের মৃত্যু সংবাদ পায় পরিবার।
নিহত রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম বিবিসিকে বলেছেন, মামলার প্রধান আসামি পুলিশের বরখাস্ত হওয়া উপ-পরিদর্শক আকবর হোসেনের পরিবার আপোষের জন্য চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, “আকবরে আমাদের কাছে ক্ষমা চাইছিল। আকবরের মা-বাবা আমাদের কমিশনাররে দিয়া বলছে, আমাদের বলছিল যে আমরা যেইটা বলব, তাই। ওরা বলছিল যে আমার রায়হানের বউ, মেয়ে আর আমার সারাজীবনের ভার-দায়িত্ব নেবে। আমি বলছি যে এইটা নিয়া আপোষে আসতে পারবো না।”
পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে রয়েছে ভীতি
“যেইভাবে আমার ছেলেটাকে মারছে, সেইভাবে তাদের বিচার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমি কোন আপোষ নেব না,” কান্নাজড়িত কন্ঠে বিবিসিকে বলছিলেন সালমা বেগম।
সালমা বেগম বলেছেন, তার ছেলের মৃতদেহে শতাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল।
অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে পুলিশ
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং বরখাস্ত হওয়া উপ-পরিদর্শক আকবর হোসেনের মত আরো অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কথিত ক্রসফায়ার, হেফাজতে নির্যাতন-মৃত্যু, চাঁদাবাজি, ঘুষ বাণিজ্য ও ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, ডাকাতি এবং ছিনতাইসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ শোনা গেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে।
বাংলায় একটি পুরনো প্রবাদ প্রচলিত আছে, ‘বাঘে ছুলে আঠারো ঘা, আর পুলিশে ছুলে ৩৬ ঘা’ – এ প্রবাদ থেকে বোঝা যায় পুলিশকে সাধারণ মানুষ কেমন ভয় পায়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভয়ের কারণ বহু বছর ধরেই সমাজে পুলিশ ক্ষমতার চর্চা করে আসছে। সে কারণেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার ঘটনা একটা সময় পর্যন্ত বিরল ছিল। এখন মামলা হয়।
কিন্তু মামলা হলেও এই মুহূর্তে পুলিশের বিরুদ্ধে সারাদেশে কতগুলো ফৌজদারি মামলা চলছে তার কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
যদিও মামলা হলেও এই মুহূর্তে পুলিশের বিরুদ্ধে সারাদেশে কতগুলো ফৌজদারি মামলা চলছে তার কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
পুলিশ বাহিনীর মধ্যে কতগুলো অভিযোগ অভ্যন্তরীন বিচার প্রক্রিয়ায় রয়েছে সে বিষয়েও তথ্য পাওয়া যায়নি পুলিশ সদর দফতর থেকে।
২০১৭ সাল পর্যন্ত বাহিনীর মধ্যে কত সংখ্যক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কী ধরণের অভিযোগ এবং কী বিচার প্রক্রিয়াধীন ছিল, তার বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হত। এরপর থেকে সে তথ্য আর প্রকাশ করা হয়নি।
তবে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে একেক বছরে গড়ে ২০ হাজারের মত এমন অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
২০১৭ সালে সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যে দেখা গিয়েছিল বাহিনীর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজারের মত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যূতিসহ নানা ধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তবে, পুলিশের বিরুদ্ধে যত ধরণের অপরাধ ও হয়রানির অভিযোগ আসে, তা নিয়ে বেশিরভাগ সময়ই মামলা করতে যান না ভুক্তভোগীরা। কেউ মামলা করতে চাইলে মামলা না নেয়া এবং মামলা হলে তদন্তে অবহেলা ও প্রভাব বিস্তারেরও বিস্তর অভিযোগ শোনা যায়।

কিন্তু কেন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ায় পুলিশ ?
অর্থনৈতিক লাভ এবং সামাজিক প্রতিপত্তির চাহিদা
পুলিশ কেন অপরাধ করে এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের নানা ধরণের বিশ্লেষণ রয়েছে। কেউ বিষয়টিকে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখেন, আবার কেউ মনে করেন পুলিশ বাহিনীর মধ্যে জবাবদিহিতার ঘাটতির কারণে ঘটছে এসব ঘটনা।
অপরাধ বিজ্ঞানী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উম্মে ওয়ারা মনে করেন, অর্থনৈতিক লাভ এবং সামাজিক প্রতিপত্তির চাহিদা থেকেই প্রধানত অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের সদস্যরা।
তিনি বলেন, “এখানে মূলত একটি অর্থের বিষয় এবং একটি শক্তির বিষয় থাকে। পুলিশকে সাধারণ মানুষ এবং যারা অপরাধ করে ও পাওয়ারফুল মানুষ তাদের মাঝখানে থাকেন।
কাজেই অনেক সময়ই দেখা যায় তারা এই ধরণের অর্থ এবং শক্তির যে খেলা সেটির মধ্যে তারা ঢুকে যান, এবং সেটি থেকে কিভাবে বের হতে হবে সেটি তারা বুঝতে পারেন না।”
তিনি বলেছেন, “তারা (পুলিশ) যদি অনেক বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারেন এবং রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী মহলের সুনজর তার ওপর পড়ে তাহলে তারা মনে করেন এটাই তাদের জন্য লাভজনক। তখন তারা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়তে পারে।”
পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়াতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, নিয়োগ-বাণিজ্যের মাধ্যমে চাকরিতে আসা ব্যক্তি বিনিয়োগ করা অর্থ তুলে নিতে চান, যা থেকেই শুরু হয় অনিয়মের।
রাজনৈতিক স্বার্থে পুলিশকে ব্যবহার
বিভিন্ন সময় পুলিশ বাহিনী পরিচালনার আইন এবং বাহিনীর মধ্যে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও, কার্যত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমছে না।
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, রাজনৈতিক স্বার্থে পুলিশসহ বিশেষায়িত বিভিন্ন বাহিনীকে যখন ব্যবহার করা হয়, তখন অপরাধ করেও অনেক সময়ই তারা পার পেয়ে যায়।
তিনি বলছেন, রাজনৈতিক নেতা বা ক্ষমতাধর কারো প্রশ্রয় পেলে জবাবদিহিতা থাকে না, আর একে তিনি বলছেন ‘সমাজের জন্য উদ্বেগের বিষয়’।
সুলতানা কামাল বলেন, “যারা ক্ষমতার আসনে আসীন তারা সব প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার ব্যতিক্রম নয়। যখন তাদের (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) নানা অনিয়মের মধ্যে ব্যবহার করা হয়, তখন অনিয়মটাই তাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়।”
কক্সবাজারের টেকনাফে মাদক দমনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছিলো
“এছাড়া মনে রাখতে হবে, যেহেতু তারা একটা ক্ষমতায়িত বাহিনী, তাদের হাতে মারণাস্ত্র থাকে। তারা একটা কথা বললে দশটা মানুষকে তাদের কথা শুনতে হয়। ‘অমিত ক্ষমতার’ অধিকারী তারা, বিশেষ করে গ্রাউন্ড লেভেলে। ফলে তাদের জবাবদিহিতার স্তরগুলো যদি স্বচ্ছ না থাকে, একদম ওপর পর্যন্ত প্রতিটা মানুষের যদি তারা কিভাবে কাজ করছে তা নজরদারি না করে, সেটা খুব বিপজ্জনক,” বলেন তিনি।
সুলতানা কামালা মনে করেন জবাবদিহিতার দায়বদ্ধতার বোধ সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে হারিয়ে গেছে।
“এখন পুলিশের ভেতর থেকে হারিয়ে যাওয়ায় আমাদের বিপদ বেড়েছে, কারণ তাদের অনেক ক্ষমতা,” বলেন তিনি।
পুলিশের মধ্যে যাচাই ও তদারকির অভাব
পুলিশের সাবেক কর্মকর্তারা মনে করেন, কোন থানা বা পুলিশ ফাঁড়িতে যখন অপরাধের অভিযোগ ওঠে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সে অভিযোগ যাচাই করে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেয়ার কথা, সেই কাজটি যথাযথভাবে হয় না অনেক সময়ই সেটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের একটি বড় কারণ।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলছেন, সেটি করা গেলে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমে আসবে। তবে সেজন্য পুলিশ বাহিনীতে যোগ্য লোকের নিয়োগ পাওয়া এবং কর্মীদের তদারক ঠিকমত করার দিকে নজর দিতে হবে বলে তিনি বলছেন।
“সাধারণত পুলিশের হাতে ক্ষমতা থাকে, ক্ষমতা থাকলে ক্ষমতার অপব্যবহারও হয়, সারা পৃথিবীতেই। ঠিক মত লোকেদের যদি (পুলিশ বাহিনীতে) নিয়োগ না করা হয়, এবং তার যদি প্রশিক্ষণ ঠিক না হয়, তার তত্ত্বাবধান ঠিক না হয়—তাহলে বিচ্যুতি থেকে যাবে।”
“সেসব বিচ্যুতি ট্যাকেল করার জন্য বিভাগে আইনকানুন আছে। যেখানে ইন্টারনালি তাকে ডিসিপ্লিন করা যায়, করা হয়। যেখানে গর্হিত অপরাধ হয়, সেখানে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও হয়। ফৌজদারি মামলা হয়ে পুলিশের চাকরিচ্যুতিও হয়। কিন্তু সমস্যা দূর করতে আমি বলব তত্ত্বাবধান এবং ঠিক মানসিকতার লোক নিয়োগ পাওয়া দরকার,” বলেন মি. হুদা।
পুলিশের আচরণে পরিবর্তন আসবে ?
বিভিন্ন সময় অভিযোগ ওঠার পর পুলিশ সদস্যদের বিচার হওয়ার নজিরও তেমন দেখা যায় না। কিন্তু মেজর সিনহা হত্যা মামলার রায়ে পুলিশ বাহিনীর দুইজন সদস্যদের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে।
এই একটি ঘটনা কি পুলিশ বাহিনীর আচরণে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে ?
মানবাধিকার কর্মী এবং অপরাধ বিজ্ঞানীরা অবশ্য তা মনে করেন না। তারা বলছেন এজন্য বড় ধরণের সংস্কার প্রক্রিয়া দরকার।
সুলতানা কামাল বলছেন, যদিও এটি পুলিশ বাহিনীর প্রতি একধরণের বার্তা দেবে, কিন্তু তারপরেও এই মামলাটি ছিল অন্য মামলার চেয়ে আলাদা।
তিনি বলেন, “একটা মামলার রায় সব কিছু পরিবর্তন বা শুদ্ধ করে দেবে সেটা আমরা আশা করেতে পারি না। কিন্তু এটা এক ধরণের বার্তা তো অবশ্যই দেবে যে অপরাধ করলে সেটা যদি ঠিকভাবে তদন্ত এবং বিচার হয় তাহলে পার পাওয়া যাবে না।”
“কিন্তু এখানে একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে বাদী হচ্ছেন একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তার পরিবার, ফলে এখানে একটা ক্ষমতা কাঠামোর ব্যাপার আছে। তাছাড়া আসামির অপরাধ এতই বেশি ছিল যে এই এক ঘটনায় অনেক মানুষ বাদী পক্ষের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সব মামলা এই রকম নয়।”
সংস্কারের কী ব্যবস্থা
বাংলাদেশে প্রায় দেড় দশক আগে পুলিশ বাহিনীতে পরিবর্তন আনার জন্য জাতিসংঘের উদ্যোগে একটি সংস্কার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছিল।
কিন্তু তার ফল কতটা পাওয়া গেছে, তা নিয়ে সন্দেহাতীত কোন বিশ্লেষণ বা পরিসংখ্যান নেই।
এদিকে, পুলিশের অপরাধ নিয়ে এই বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও অন-রেকর্ড মন্তব্য করেননি।
এখন কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জবাবদিহিতার কথা বলা হলেও, কার্যত তার প্রতিফলন তেমন দেখা যায় না।
তবে বিভিন্ন সময় পুলিশ বাহিনীর পক্ষ দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে উদ্যোগ নেবার কথা বলা হয়েছে।
সেপ্টেম্বরে পুলিশে তিন হাজার কনস্টেবল নিয়োগের ঘোষণা দেয়ার সময় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন ।
সূত্র : বিবিসি










Discussion about this post