নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন রূপসী ৯ নামক পন্যবাহী কার্গোর ধাক্কায় এম এল আফসার উদ্দিন নামক যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় একের পর এক লাশ উদ্ধারের পরও এখনো নদীতে লাশের গন্ধে ভারী হয়ে আছে শীতলক্ষ্যার বাতাস।
এমন অসংখ্য লাশের লোমহর্ষক ঘটনার সাক্ষী শীতলক্ষ্যা । প্রতিনিয়তঃ এমন লাশের ঘটনার অসংখ্য সাক্ষী শীতলক্ষ্যায় ঘটলেও কে রাখে কার খবর । ৩৪ জনের লাশের মামলায় কি ঘটেছে তা সকলেই অনুমান করতে পারলেও ভুক্তভোগিদের অনেকেই মুখ খুলতেও সাহস করে না। খোদ মামলার বাদীকে আদালত প্রশ্ন করেছে এই মামলায় ১১ জনকে অব্যাহতি দেয়ায় তাদের কোন আপত্তি আছে নাকি ।
এতো ঘটনার পরও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের দাযিত্বে থাকা কর্তাদের কি যায় আসে ? যে সিটি গ্রুপের পন্যবাহী কার্গোর ধাক্কায় ১১ জনের সলিল সমাধি হয়েছে তাতে কি আসে যায় এই কর্তৃপক্ষের। সরকারী এই সংস্থার কর্তাদের সারা বছরজুড়েই তো সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল বিনা বিজ্ঞাপনে নানাভাবে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। ফলে লোক দেখানো রূপসী ৯ নামক পন্যবাহী কার্গো আটক করতেই হয়েছে। কিছুদিন পর এই জাহাজ ছেড়েও দেয়া হবে আদালতের আদেশে। আর মামলা ! যা হবার তাই হবে ।
এতা কিছুর পরও কোন লাজ লজ্জা নাই সরকারী সংস্থা নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের দাযিত্বে থাকা কর্তাদের । কি কাজ করেন এই সংস্থার দায়িত্বে কর্তাদের অসাধুদের অনেকেই ।
নদীতে ঝুকিপূর্ণ কাজের বিষয়ে তদারকি করতে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা কোথায় ?
আবু বক্কর নামের ৬/৭ বছরের একজন শিশু প্রতিদিন খেয়া ঘাটের ট্রলারে ঝুকিপূর্ণ কাজ করে বিনা পয়সায়। শুধুমাত্র পেটের খাবার দিতে এই শিশু কাজ করে যাচ্ছে নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের কর্তাদের নাকের ডগায়। তাদের নাক এতোই লম্বা যে তার নিচে পরে কে মরলো আর কে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলো তা দেখার সময় তাদের নাই । তবে ওই কর্তাদের নাক খুঁজে বেড়ায় কখন লাশ ভেসে উঠবে শীতলক্ষায় । যতোদিন এই লাশের গন্ধ থাকবে ততদিন ই তো কর্তাদের ব্যবসা । লাশের গন্ধ থাকলেই তো লাভের উপর লাভ।
শিশু আবু বক্করকে জিজ্ঞাসা করতেই সে বললো তার বাবা ভ্যান গাড়ী চালায় । আর সে নগরীর এই শীতলক্ষ্যায় ট্রলারে যাত্রী উঠা নামার কাজে রশি বাধা আর ছাড়ার কাজ করে । বেতন কত জিজ্ঞেস করতেই শিশু আবু বক্কর জানায় কোন বেতন নাই । শুধু খাবার দেয় । এর বেশী সে আর কিছুই বলতে চাইলো না যাত্রীবাহী ট্রলার চালকের চোখ রাঙ্গানীর ইশারায়। দীর্ঘক্ষন চেষ্টা করেও কোনভাবেই মুখ খুললো না এই শিশু । উল্টো ট্রলার চালক শিশুটির সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে বললেন, “ভাই এইটা নেতার ঘাট । এই ঘাটে বাঘে মইশে এক সাথে জল খায়।”
এমন ঘটনার পর কয়েকটি ছবি তুলতে গেলে লজ্জায় মুখ লুকায় শিশু আবু বক্কর । এমন মুখ লুকানোর দুশ্য দেখে একজন ট্রলার যাত্রী বলেন, “ ভাই দেখেন এই শিশুটির লজ্জা আছে আর ওই যে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের অফিস তারা কি এমন ঘটনা দেখেন না ? তাদের তো লজ্জা হয় না !“
নারায়ণগঞ্জ নগরীর টানবাজার খেয়াঘাট দিয়ে নদী পারাপারের সময় অনেকেই উল্লেখিত মন্তব্যসহ ননাা সমালোচনা করেন নৌ বন্দর কর্তাদের বিরুদ্ধে ।
Discussion about this post