শিল্পাঞ্চলখ্যাত ফতুল্লায় লাভের আশায় সুদে মাত্র ৫ হাজার টাকা লগ্নি বিনিয়োগ করে নবজাত শিশুকে বিক্রি করে ৭৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে পাষন্ড চক্র। লোভ মানুষকে কতটা অমানুষে পরিণত করে সুদের কারবারি লাকী বেগমক তার জ্বলন্ত প্রমাণ। সুদের কারবারি লাকি বেগম এবার গ্রেফতারের পর রিমান্ডে রয়েছে ফতুল্লা থানা পুলিশের হেফাজতে। লাকি বেগম অপরাধী কর্মকন্ডের সকল তথ্যই ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পাগলায় সুদের টাকার জন্য বেচে দেওয়া সেই শিশু মায়ের কোলে ফিরেছে। এ ঘটনায় সুদের কারবারি লাকী বেগমকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মোহাম্মদ মোহসেনের আদালত লাকী বেগমের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি শিশুটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার মায়ের জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এর আগে আজ সকালে নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর এলাকা থেকে লাকী বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রোববার মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থেকে বিক্রি করে দেওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করে ফতুল্লা থানা–পুলিশ। আজ তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়।
এ ঘটনায় গতকাল শিশুটির মা রানী বেগম বাদী হয়ে মানব পাচার আইনে ফতুল্লা থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় সুদের মহাজন লাকী বেগম, তাঁর স্বামী হযরত আলী ও শিশুটিকে কিনে নেওয়া নারী রানু বেগমকে আসামি করা হয়েছে।
“অভাবের কারণে ওই এলাকার লাকী নামে এক নারীর কাছ থেকে দুই বছর আগে ৫ হাজার টাকা ঋণ নেন রানী। সেই ঋণের টাকার শুধু সুদ বাবদ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা তার কাছ থেকে আদায় করা হয়। এরপর আরও ১ লাখ ৩ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে বলে রানীর কাছে দাবি করেন লাকি। এ জন্য তাকে নানা সময় মারধরের ভয়ভীতি দেখানো হতো। শেষ পর্যন্ত সিনেমার গল্পকে হার মানিয়ে রানীকে না জানিয়েই গোপনে নবাগত পেটের সন্তানকে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়ার চূড়ান্ত করে পাষন্ড সূদ কারবারী লাকি বেগম । জন্মের সাথে সাথেই টাকা নিয়ে নবজাতক কে হস্তান্তর করে লাকি !“
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) নাজমুল হাসান বলেন, লাকী বেগম ও তাঁর স্বামী হযরত আলীর কাছ থেকে রানী বেগমের স্বামী কিছু টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণের টাকা শোধ করতে রানী বেগমকে লাকীর বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতে বাধ্য করা হতো। এর মধ্যে গত বছর রানী সন্তান প্রসব করলে সুদের টাকার জন্য লাকী বেগম রানীকে না জানিয়েই তাঁর এক দিন বয়সী সন্তানকে বিক্রি করে দেন। তার পর থেকে রানী বেগমকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে রাখা হয়। এক বছর পর সুযোগ পেয়ে রানী ফতুল্লা মডেল থানায় এ বিষয়ে একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ সুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে। আজ সকালে মামলার প্রধান আসামি লাকীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে ফতুল্লা থানায় গতকাল বিকেলে শিশুটিকে তার মা রীনা বেগমের কাছে তুলে দিতে গেলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শিশুটিকে কিনে নেওয়া মা রানু বেগম বুক চাপড়ে বিলাপ করতে থাকেন। এক বছর ধরে সন্তানের স্নেহে বড় করা শিশুটিকে কোন উপায়ে তাঁর কাছে রাখা যাবে, তা জানতে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন। নিজের সন্তানকে কাছে ফিরে পেয়ে রানীও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রানু বেগম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এক মেয়ে ও এক ছেলের মা তিনি। তার ১০ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। বেশ কয়েক বছর ধরে একটি সন্তান দত্তক নিতে চাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে করোনা মহামারির সময় জানতে পারেন অভাবের কারণে একটি ছেলে শিশুকে বিক্রি করে দেওয়া হবে। তাৎক্ষণিক ৭৫ হাজার টাকায় শিশুটিকে কিনে নেন রানু। নাম রাখেন মো. ইউসুফ। গতকাল রাতে হঠাৎ তাঁর বাড়িতে পুলিশ হাজির হলে জানতে পারেন শিশুটিকে চুরি করে এনে বিক্রি করা হয়েছিল। বলতে বলতে মাথা চেপে ধরে থানার মেঝেতে বসে পড়েন রানু।
ছেলেকে কাছে পেয়ে খুশি রানী। রানু বলেন, তাঁর বিশ্বাস ছিল একদিন ছেলেকে ফিরে পাবেন। জন্মের আগে ছেলের নাম ঠিক করেছিলেন ‘রানা’। এখন যেহেতু ইউসুফ নাম রাখা হয়েছে, সে নামেই ডাকবেন তিনি।









Discussion about this post