দীর্ঘদিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জ জেলা সদর উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকায় প্রো-অ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নাম ব্যবহার করে সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় সংশ্লিষ্ট আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের নানা উপঢৌকনে ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসার নামে নানা অপকর্ম। বছরের পর বছর যাবৎ পুরো জেলার প্রায় সকল বৈধ ও অবৈধ ফার্মেসী, প্রতিটি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, ব্রাদার, ড্রাইভার, ওয়ার্ডবয়, এমএলএসএস, সিকিউরিটি গার্ড, স্টাফদেরকে দালালী দিয়ে অসুস্থ্যদের নানা ছুঁতোয় অবৈধ এই প্রো-অ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে আনানোর নানা পথ তৈরী করে চালিয়ে যাচ্ছে সেবার নামে অনৈতিক কর্মকান্ড ।
যে কোন অসুস্থ্য ব্যাক্তিকে প্রো-অ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা প্রদান করলেই প্রথমে যে ড্রাইভার এই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে এনেছে তার জন্য লিষ্ট করে এক হাজার টাকা উপঢৌকন দেয়া হয় তাৎক্ষনিকভাবে । এর পর চিকিৎসা নিতে রোগীকে আইসিইইউ, সিসিইইউ, কেবিনে ভর্তি দেখিয়ে কিংবা অন্যান্য পন্থায় সেবা নামক চিকিৎসা দিয়ে দিনের পর দিন বিশাল বিলের খড়গ চাপিয়ে দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা বাণিজ্য । আর এই বাণিজ্য হালাল করতে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামীর বড় ভাই এই অবৈধ প্রো-অ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্নধার একজন চিকিৎসক পুরো জেলা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ম্যানেজ করতে নানাভাবে অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি সরকারী হাসপাতালে কর্মরত একজন নার্স অসুস্থ্য এক প্রসূতিকে এই অবৈধ প্রো-অ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার নামে আইসিইইউ, সিসিইইউ, কেবিনে ভর্তি করে প্রায় ২২ দিন পর ওই নার্সকে ৬৫ হাজার টাকা দালালী প্রদান করে । এ্মন দালালীর ঘটনা সকলের মুখে উচ্চারিত হলেও নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন সর্বক্ষেত্রেই “অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে” বলে দায়িত্ব শেষ করেন।
অথচ খোদ প্রো-অ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নির্ভরশীল সূত্র জানায়, “প্রতি মাসে প্রো-অ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নামে মাসোয়ারা নেন কারা (?) তার খোজ নেন । তাইলে বের হয়ে আসবে এই হাসপাতালের নেপথ্যের গডফাদার কারা ? ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামীর বড় ভাই এই হাসপাতালের সাথে যুক্ত থাকার কারণেই আজো মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন পাচ্ছে না। শুধু কি প্রো অ্যাকটিভ, সারাদেশের সকল হাসপাতাল আর ক্লিনিক ই এখন দালাল নিয়োগ দিয়ে এই ব্যবসা করতেছে । নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রতিটি ক্লিনিক – ডায়াগণস্টিক সেন্টার জেলার সিভিল সার্জনকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়েই এই ব্যবসা করতেছে ।“
এতো অভিযোগের পর আবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ডের প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ফারজানা আক্তার (৪০) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যুর হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে ওই নারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মৃত নারীর স্বজনরা জানিয়েছেন, আজ ভোর সাড়ে পাঁচটায় ওই গৃহবধূর বুকে ব্যাথা উঠলে তারা তাকে প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার ডাক্তাররা হার্ট ফেল করেছে জানিয়ে তাৎক্ষণিক দুটি ইনজেকশন দেয় তাকে। পরে অবস্থার আরও বেগতিক দেখলে এর কিছুক্ষণ পর রোগীকে আইসিইউতে নিয়ে গিয়ে আরও ১০টি ইনজেকশন দেয়। একপর্যায়ে ডাক্তাররা যখন বুঝতে পারেন রোগীর মৃত্যু হয়েছে তখন তারাহুরো করে রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনরা দেখতে পান সে কোনো শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে না। তখন তারা বুঝতে পারেন তার মৃত্যু হয়েছে।
মৃত ওই নারীর স্বামীর নাম রুহুল আমীন। তাদের সংসারে দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।
এদিকে এই মৃত্যুকে হত্যা দাবি করে ওই গৃহবধুর ভাসুরের ছেলে আনু খান বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কি কি ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল? কিন্তু তারা কোনো উত্তর দেয়নি। এরা এর পূর্বেও এমন অনেকের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. রাশিদুল ইসলাম জানান, ভুল চিকিৎসায় ওই গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে তা ভুল কথা। কার্ডিয়াক সমস্যা নিয়ে ওই রোগী আজ ভোরে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হোন। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে মারা যান। তাকে বাঁচাতে আমরা চেষ্টা কোনো ত্রুটি রাখে নি। রাগের বর্শবর্তী হয়ে হয়তো রোগীর স্বজনরা এখন এই অভিযোগ তুলছেন।
হাসপাতালে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক জানান, আমাদের কাছে অভিযোগ দেওয়া হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা মৃত নারীর স্বজনদের সাথে কথা বলেছি মরদেহ ময়নাতদন্ত করার জন্যে। কিন্তু তারা মরদেহ ময়নাতদন্ত করবে না বলে লাশ নিয়ে গেছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা: এ এফ এম মুশিউর রহমান বলেন, ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হলে থানা অভিযোগ দিতে হবে এবং আমাদের বরাবর একটি লিখিত চিঠি পাঠালে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিবো।









Discussion about this post