আওয়ামী লীগ সরকারের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর রিমান্ড শেষে শুক্রবার ৩০ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হলেও তার প্রিয়ভাজন ফেরদৌসী আলম নীলা রয়েছে পলাতক। ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারী আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেন নীলা। নীলা এতোটাই অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠেছিলো তাকে রিয়ে টু শব্দ করার সাহস ছিলো না কারোর। আড়ংয়ে মাত্র তিন হাজার টাকার বেতনে চাকরী করা সেই নীলা অর্থাৎ রূপগঞ্জের সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলা বর্তমানে আড়াই হাজার কোটি টাকার মালিক।
সকল ধরনের অপকর্ম ছাড়াও দখল করেছেন সরকারি-বেসরকারি মালিকাধীন জায়গা, পূর্বাচলে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা দখল করে নিজের নামে মার্কেট গড়েছেন।
নীলার নীল বিষের ছোঁবল থেকে বাদ যায়নি সাবেক মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর পরিবারও ।
সাবেক মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর (বীর প্রতীক) এর সহধর্মিণী তারাব পৌরসভার সাবেক মেয়র হাসিনা গাজী রূপসীর বাসভবনে নেতাকর্মীদের সাথে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলতেন, ‘নীলা তো আমার সতীন !’ (এমন বক্তব্যের একাধিক রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর দপ্তরে)
আর ছোঁবল থেকে বাদ যায় নাই প্রতিবন্ধী ও শ্মশানের জায়গাও । আওয়ামী সরকারের পতনের পর স্থানীয়রা এই নীলার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তাদের। রূপগঞ্জের রূপভান নীলা। রূপের ঝলক দেখিয়েই কুপোকাত করেছেন অনেককেই। নীলার নীল জালে আটকা পড়েছেন অনেক ধনকুবের, রাঘব বোয়াল। তার অন্যতম আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর।
গাজী পরিবারসহ পুরো রূপগঞ্জে চাউর রয়েছে গাজী গোলাম দস্তগীরকে রূপের ঝলকানীতে আকৃষ্ট করে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানও হয়ে যান সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলা । তার বিরুদ্ধে জমি দখলসহ নানা দুর্নীতি ও বেআইনি কাজে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে। রাজধানী অদূরে রাজউকের গড়ে তোলা নতুন শহর পূর্বাচলে তাঁর দাপটের সামনে প্রতিবাদ করার সাহস কারো ছিল না।
তার স্বামী শাহ আলম ফটিক ব্রাক ব্যাংকে মাত্র ১৮ হাজার টাকার বেতনে চাকরী করলেও সেই সম্মনের চাকরী ছেড়ে দিয়ে স্ত্রী সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলাকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করে নগ্নতার চরম শীখরে পৌঁছায়।
পূর্বাচলে ৩০০ ফুট রাস্তার পাশে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের জন্য সংরক্ষিত বিশাল সম্পত্তির ওপর তিনি নিজ নামে নীলা মার্কেট বানিয়ে সেখানে লাখ লাখ টাকা সেলামির বিনিময়ে দোকান ভাড়া দিয়েছিলেন। মার্কেটের পাশেই আরেকটি প্লট দখল করে বানিয়েছেন ক্লাব।
প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত জায়গার ওপর তৈরি করেছেন লেডিস ক্লাব, পূর্বাচলে একটি কনভেনশন সেন্টারের জন্য বরাদ্দবৃত শত কোটি টাকার ৭৬ কাঠা জমি নিয়ে রেখেছেন নিজের কবজায়। শীতলক্ষ্যার তীরে প্লট দখল করে সেখানে চালাচ্ছেন কয়লা-পাথর-বালুর কারবার।
আর এসব অপকর্মে বটবৃক্ষ হয়ে নীলাকে ছায়া দিয়েছেন সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর। নীলার দখল দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলেও নীলা ছিলেন অপ্রতিরোধ্য।
একপর্যায়ে নীলার এসব দখল দৌরাত্মে আর ক্ষমতার অপব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে ২০২২ সালের ৪ আগস্ট জেলা আওয়ামী লীগ তাকে বহিষ্কার করলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর। নীলার বহিষ্কারাদেম প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। ৩০ আগস্ট তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর নীলার শক্তি আরও আরও বৃদ্ধি পায়। আওয়ামী শাসনের অবসানের পর এলাকাবাসী এবার সোচ্চার নীলার বিরুদ্ধে। পলাতক নীলাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি সাধারণ জনতার।
এমন ক্ষোভের আগুনে জ্বলতে থাকা রূপগঞ্জে হাজারো মানুষ গেলো ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সর্বত্র হামলা ভাংচুর ও লুটপাটের মতো নীলার বাড়িতেও ব্যাপক ভাংচুর লুটপাট করে । এরপর থেকে পলাতক রয়েছে নীলা ও তার পরিবারসহ অপরাধী চক্র।








Discussion about this post