বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন আনু হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান ছাড়াও বিচারের দা্বীতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে নগরীর অনেকেই ।
গেলো ২৯ আগষ্ট বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, র্যাব-১১, সিভিল সার্জন ও ফতুল্লা মডেল থানায় স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। নিহত আনুর বড় ভাই ও মামলার বাদী আবুল কাশেম বাদশা স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি দেয়া হয়। এ সময় এলাকার মুরব্বী ও নারী-পুরুষরা মিছিল নিয়ে ডিসি কার্যালয়ে অবস্থান নেয়।
স্মারকলিপি সূত্রে জানা যায়, ২৬ আগষ্ট দুপুরে সময়ে ছোট ভাই আনুর মেয়ে আমার আরেক ভাতিজির কাছে ফোন করে জানায় ওর বাবাকে পাওয়া যাচ্ছেনা। পর মুহূর্তে আমরা বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করতে থাকি কোথাও তার কোন খবর মিলেনি। ঠিক বিকেল ৫ টায় মাসদাইর ঈদগাহ সংলগ্ন হেলেনা কটেজ এর দশ তলা বিল্ডিংয়ের লিফটের কোর জায়গায় আমার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন আনুর লাশ পাওয়া যায়। আমরা তাৎক্ষণিক প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে থাকি। আমার ছোট ভাই তার ছেলে মেয়েকে নিয়ে উক্ত বিল্ডিংয়ে ভাড়া থাকতো। আমরা আশঙ্কা করতেছি তার ছেলে মেয়ে ওর মা এবং তার বর্তমান স্বামী রাসেলের সাথে যোগসাজশ করে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ড ঘটায়।
কারণ রাসেল অতীতে অনেকবার আনোয়ার হোসেন আনুকে মারার চেষ্টা করে যা কোনভাবে সফল হয়নি। রাসেল আমাদের সম্পর্কে ভাতিজা হয়, আমার জেঠাতো ভাইয়ের ছেলে। রাসেলের সাথে তার স্ত্রীর পরকিয়ার সম্পক জানতে পারার পর থেকে আমার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন আনু তাকে বাড়িতে আসতে বারণ করে কিন্তু রাসেল বিভিন্ন উপায়ে তার স্ত্রী পান্নার সাথে যোগাযোগ বজায় রাখে। আর এ বিষয়টি একপর্যায়ে পারিবারিকভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। দেওভোগের বাড়িতে বসবাসের কারণে স্ত্রী পান্না রাসেলের সাথে সহজেই মেলামেশা করতে না পারার কারণে সে স্বামীকে অন্যত্র বাসা নিতে চাপ প্রয়োগ করে। স্বামী আনোয়ার হোসেন পৈতৃক ভিটা ছেড়ে মাসদাইর একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিতে বাধা হয় এবং সেখানে তার অনুপস্থিাততে তার ছেলে মেয়ের সহযোগিতায় রাসেল বিভিন্ন সময় যাওয়া আসা করতে থাকে। আনোয়ার তার ফ্ল্যাটে রাসেলের যাওয়া আসার খবর জানতে পারার পর তার স্ত্রীকে চাপ দিলে সে আনোয়ার হোসেনকে মারার জন্য ২০১৯ সাল ২জানুয়ারী আমলাপাড়া এলাকার একটি ফ্ল্যাটে রাসেলের সাথে দেখা করে। আর এই খবর আনোয়ার জানতে পেরে সাথে সাথে সে তার বন্ধু বান্ধব নিয়ে আমলা পাড়া ছুটে যায় এবং অপ্রীতিকর অবস্থায় তাদের দুইজনকে হাতেনাতে ধরে। ধরার পর পান্না ও রাসেল উভয়েই হাত জোড় করে ক্ষমা চায় আর ওয়াদা করে তারা আজকের পর থেকে আর কোনো যোগাযোগ রাখবে না। কিন্তু তারপরেও তারা অবৈধ যোগাযোগ বজায় রাখে। এ বিষয় নিয়ে পারিবারিকভাবে অশান্তি দেখা দিলে স্ত্রী পান্না পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে স্বেচ্ছায় আনোয়ার হোসেন আনুকে ২০২০ সালের ৩০ জুন তালাক নোটিশ পাঠায়। এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েকে তার বাবার কাছে রেখেই ২০২১ সালের ৩ ডিসেম্বর রাসেলের সাথে বিবাহ কাজ সম্পন্ন করে। মায়ের প্ররোচনায় ছেলে মেয়েও বাবার সাথে প্রতিনিয়ত খারাপ ব্যবহার করতে থাকে এমনকি মাঝে মাঝে ছেলে মেয়ে বাবার গায়ে হাত তুলতো, কিন্তু আমার ছোট ভাই লজ্জায় কাউকে কিছু বলতো না। ওরা প্রতিনিয়ত মানসিক যন্ত্রনা দিয়ে নাস্তানাবুদ করে রাখতো। আমরা পারিবারিকভাবে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি এই নৃশংস হত্যাকান্ড তার দুই সন্তান, তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী পান্না ও পান্নার বর্তমান স্বামী রাসেল ঘটিয়েছে। এই রহস্যজনক হত্যাকান্ডের ঘটনায় আইনি সহায়তা পেতে আমরা ফতুল্লা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করি।
প্রসঙ্গত ২৭ আগস্ট বিকেলে নিহতের বড় ভাই আবুল কাশেম বাদশা বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় নিহতের সাবেক স্ত্রী, শ্যালকসহ ৫ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। মামলার আসামীরা হলেন, ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর মার্টিন গার্মেন্টেস এর গলি এলাকার বাসিন্দা গোল মোহাম্মদের পুত্র রাসেল মাহমুদ (৪২), শহরের বাবুরাইল এলাকার করিম মিয়ার মেয়ে ও নিহতের প্রাক্তন স্ত্রী পাপিয়া আক্তার পান্না (৪২), নিহতের মেয়ে জান্নাত আরা জাহান প্রেরনা (২১), নিহতের পুত্র সারিদ হোসেন (১৯), শহরের বাবুরাইল এলাকার করিম মিয়ার দুই ছেলে নুর আলম (৪৫) ও কাজল (৩২) এবং মেয়ে রোকসানা আক্তার পুতুল (৪৬), বিসিক শিল্পনগরীর মার্টিন গার্মেন্টেস এর গলি এলাকার বাসিন্দা গোল মোহাম্মদ। মামলায় অজ্ঞাত আসামী দেখানো হয়েছে আরো ৫/৬ জনকে।
Discussion about this post