তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর নাম এতোদিন ছিলো বিচারহীনতার প্রতীক। সরকার পরিবর্তনের মাত্র এক মাসের মধ্যেই সেই চাঞ্চল্যকর ত্বকী হত্যায় আরেক আসামী দিয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের শাসনামলে শাসকদের শেল্টারে নারায়ণগঞ্জের দন্ডায়মান আতংক কুখ্যাত অপরাধী আজমেরী ওসমানের আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী কাজল হাওলাদার (৩৬) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হায়দার আলীর আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
এ নিয়ে ত্বকী হত্যায় আজমেরী ওসমানের তিন সহযোগী আদালতে জবানবন্দি দিলেন।
এর আগে দুপুরে একই আদালতে ৬ দিনের রিমান্ড শেষে দুই আসামি শাফায়েত হোসেন ও মামুন মিয়াকে হাজির করে আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে তাঁদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আজমেরী ওসমান জাতীয় পার্টির নেতা ও নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে এবং আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ভাতিজা। আসামিরা আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১১-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাবুদ্দিন গণমাধ্যম কে বলেন, দুই আসামিকে আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অপর আসামি কাজল হাওলাদার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি গ্রহণের পর আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।
জবানবন্দির বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে র্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে তাঁর টর্চার সেল শহরের আল্লামা ইকবাল রোডের উইনার ফ্যাশনে ত্বকীকে হত্যা করা হয়। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কাজল হাওলাদার স্বীকার করেছেন, উইনার ফ্যাশনে ত্বকীকে হত্যা করা হয়। তিনি নিজে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত না থাকলেও তখন কম্পাউন্ডে উপস্থিত ছিলেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
এর আগে হত্যাকাণ্ডের পরপরই ত্বকী হত্যা মামলায় আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত (ভ্রমর) ও ইউসুফ হোসেন (লিটন) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
ত্বকী হত্যা মামলায় ৫ আসামি সুলতান শওকত ভ্রোমর, ইউসুফ হোসেন, সালেহ আহমেদ, রিফাত বিন ওসমান ও তায়েব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ থেকে দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছর ধরে ত্বকী হত্যার বিচার ও ঘাতকদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখে ধারাবাহিকভাবে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ত্বকী হত্যা মামলার বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মামলায় আজমেরী ওসমানের সহযোগী শাফায়েত হোসেন, মামুন মিয়া, কাজল হাওলাদার ও আজমেরী ওসমানের গাড়িচালক জামশেদকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পৃথক অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১।
তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সংস্থাটি। দীর্ঘদিন ত্বকীর হত্যাকারী আজমেরী ওসমান প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যায়।
র্যাব-১১-এর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা গণমাধ্যম কে বলেন, আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কাজল হাওলাদার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কী তথ্য, সেটা তিনি জানাননি।









Discussion about this post