নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার জামতলা ধোপাপট্টি এলাকা থেকে ভুয়া এনজিও ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাইদুজ্জামান নূর ওরফে রাকিব (৪১) নামের একজনকে আটক করেছে র্যাব-১১।
১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় ওই অভিযান চলে। গ্রেপ্তারকৃত রাকিব কথিত ‘নূর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন’ ও ‘নূর পোভার্টি এলিভিয়েশন অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস সোসাইটি’ নামক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান।
র্যাব জানায়, রাকিব ‘দৈনিক মানবতার আলো’ ও ‘নিউজ ডাইজেস্ট ওয়ার্ল্ড’ নামক দুটি বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকার স্বঘোষিত সম্পাদক। অভিযানে গ্রেফতারকৃত আসামীর হেফাজত হতে ১টি পিস্তল (আগ্নেয়াস্ত্র সদৃশ), ২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, সিলভার রঙয়ের ম্যাগাজিন, কালো রংয়ের পিস্তল কাভার, ডিজিটাল লকার বক্স, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একপাতা মূল সদস্যগনের অর্থ প্রদানের তথ্যাবলী, ৫টি মানি রিসিপ্ট বই, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সীল ৮টি, ভুয়া পদক ৫টি, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সীলগালা যুক্ত খাম ২৭টি, নূর দরিদ্র বিমোচন ও মানবাধিকার সংগঠনের ১০টি অঙ্গীকারনামা জব্দ করা হয়।
র্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জসিম উদ্দীন চৌধুরী জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে গ্রেপ্তারকৃত সাইদুজ্জামান নূর রাকিব ফতুল্লা থানাধীন জামতলা ধোপাপট্টি এলাকায় জনৈক হাজী শামছুল হুদার ফ্ল্যাট বাসায় ভাড়ায় থাকতো।
ওই ভাড়াকৃত ভবনের ছাদে সে ‘নূর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ও নূর পোভার্টি এলিভিয়েশন এন্ড হিউম্যান রাইটস সোসাইটি’ নামক সরকারী অনুমোদনবিহীন প্রতিষ্ঠানের অফিস খোলে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা মাত্র এসএসসি পাশ হলেও নিজেকে সবসময় সে উচ্চ শিক্ষিত প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতারণামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।
সুসজ্জিত অফিস কক্ষে সে তার নিজের ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্জিত বঙ্গবন্ধু পদক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পদক, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ পদক, মাদার তেরেসা পদক ও মহাত্মা গান্ধী শান্তি পদকসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পাওয়ার ভুয়া স্মারক ও জাল সার্টিফিকেট সাজিয়ে রেখে লোকজনকে আকৃষ্ট করত।
নিজেকে ক্ষমতাবান ব্যক্তি বোঝাতে সে সবসময় আগ্নেয়াস্ত্র সদৃশ পিস্তল ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মনে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে আসছিল। মানবসেবার জন্য তার প্রতিষ্ঠানের নামে রাশিয়া থেকে ১০০ কোটি টাকার অনুদান এসেছে, উক্ত টাকাগুলো জনকল্যানের জন্য ব্যবহার করতে প্রসেসিং ফি বাবদের কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে শুরু করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী সাধারণ মানুষদের ডেকে নিয়ে বিভিন্ন ভুয়া নথিপত্র প্রদর্শন করে ফাঁদে ফেলে তাদের নিকট হতে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে। অনুদানের টাকা না পেয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে অনেকে প্রদেয় টাকা ফেরত চাইলে সে তাদেরকে ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে।
বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাব-১১ কর্তৃৃক ব্যপক অনুসন্ধান চালিয়ে রাকিবকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতকে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে, সে ভুয়া এনজিও ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের চেয়াম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে শতাধিক ব্যক্তির সাথে প্রতারণার মাধ্যমে এ যাবতকালে কায়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।









Discussion about this post