আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি ইস্যুতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম মোহাম্মদ সাকলায়েনের ভূমিকা নিয়ে পুলিশ বিব্রত বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি ।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ইতোমধ্যে তাকে গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শফিকুল ইসলাম বলেন, পরীমনির কোনো মামলা তদারকির সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা সাকলায়েন জড়িত ছিলেন না। সঙ্গত কারণে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে বাহিনীর শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা ভঙ্গের কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, একজন বিসিএস ক্যাডার অফিসার এ ধরনের অনৈতিক সম্পর্কে জড়াবে-এটি কখনই প্রত্যাশিত না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, গত রোববার (৮ আগস্ট) ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম জানান, গোলাম মোহাম্মদ সাকলায়েনের বাসায় আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনির যাতায়াতের অভিযোগ তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গোলাম সাকলায়েন শিথিল এবং নায়িকা পরীমনির ইস্যু তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির প্রধান করা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ট্রেনিং) মিয়া মাসুদ করিমকে। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন- ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন সেন্টারের উপ-কমিশনার (ডিসি) হামিদা পারভীন ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ফরেনসিক) রুমানা আক্তার।
এদিকে গত শনিবার (৭ আগস্ট) আলোচিত চিত্রনায়িকা পরিমনিকে নিয়ে বাসায় সময় কাটানোর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিবি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় এডিসি গোলাম মোহাম্মদ সাকলায়েন শিথিলকে। বর্তমানে তাকে পুলিশ অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) পশ্চিম বিভাগে পদায়ন করা হয়েছে।
ডিবির দায়িত্বে থাকা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, যেহেতু একটা অভিযোগ উঠেছে তাই তাকে আমরা সরিয়ে নিয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
এছাড়া গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এরই মধ্যে এডিসি সাকলায়েনের সরকারি মোবাইল ফোন নম্বরও জমা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ১ আগস্ট চিত্রনায়িকা পরীমনিকে নিয়ে নিজ বাসায় অবস্থান করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম মোহাম্মদ সাকলায়েন।
ওই দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, সকাল আটটার দিকে নিজের হ্যারিয়ার গাড়িতে করে রাজারবাগের মধুমতির ফ্ল্যাটে যান পরীমনি। ওই ভবনের ১০ তলায় সাকলায়েনের সরকারি বাসভবন। সাকলায়েন নিজে নেমে এসে রিসিভ করেন পরীমনিকে।
এর কিছুক্ষণ পর সাকলায়েনের বাসায় প্রবেশ করেন পরীমনির খালাতো বোন ও তার স্বামী। পরে রাত দুইটার দিকে পরীমনিসহ তিনজনই বের হয়ে যান বাসা থেকে।
গেল ১৩ জুন উত্তরা বোট ক্লাবে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমনি। পরদিন উত্তরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ।
ওই সময় পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয় গোয়েন্দা কার্যালয়ে। তখনই পরীর সঙ্গে প্রথম পরিচয় সাকলায়েনের। এরপর সম্পর্কের গভীরতা।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ধীরে ধীরে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে পুলিশ কর্মকর্তা ও চিত্রনায়িকার। প্রায়ই রাতে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বের হতেন তারা। কখনো হাতিরঝিল। কখনো অন্য কোনো জায়গায়। মাঝে মাঝে সাকলায়েন যেতেন পরীমনির বাসায়।
সম্প্রতি র্যাবের হাতে পরীমনি গ্রেপ্তার হলে বনানী থানায় করা মাদক মামলার তদন্তভার পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তখন পরীকে জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে সাকলায়েনকাণ্ড। পরীমনির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংগ্রহ করা হয় সাকলায়েনের সরকারি কোয়ার্টারের সিসিটিভি ফুটেজ। নিশ্চিত হওয়া যায় পরিমনির দাবির সত্যতা।
এরপরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ সদর দপ্তর। সদর দপ্তরের নির্দেশে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সিআইডির একজন বিশেষ পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরো বিষয় খুঁজে বের করার।
পরিমনির ঘটনায় নারাযণগঞ্জ জেলাা প্রশাসনে চলছে তোলপাড় । নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তার স্বামী পুলিশের উপ-কমিশনার গোলাম মোহাম্মদ সাকলায়েনের এমন কান্ডে তোলপাড় চলছে নারায়ণগঞ্জ প্রশাসনে । বিতর্কিত ও রিমান্ডে থাকা নায়িকা পরিমনি কে নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদ সাকলায়েনের ঘটনার বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মান্তব্য চািইতে গেলে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে সকলেই বলেন, “ভাই আর সাকলায়েনের ঘটনা নিয়ে আমাদের বিব্রত কইরেন না । এমনিতেই আমরা এই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের অনেকেই চরমভাবে বিব্রত ।









Discussion about this post