রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়ায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় দুজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন।
এ সময় বেশ কয়েকটি বসত ঘর ও মোটর সাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কায়েতপাড়ার নাওড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহতরা হলেন, কায়েতপাড়া ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এমারত হোসেন (৫৫), নাওড়া এলাকার মো. ইউসুফ আলী (১৭), জায়েদা বেগম (৪০), রেনু মিয়া (৩৫), হাসান আলী (১৫), আবদুস সোবহান (৩৫) ও নুরজাহান বেগম (৩২)সহ আরো কয়েকজন।
তাদের মধ্যে ইউসুফ আলী ও জায়েদা বেগম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আহতরা সবাই কায়েতপাড়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান জায়েদ আলী ও কায়েতপাড়া ১ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত সদস্য প্রার্থী মোশারফ হোসেনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তাদের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সহিংসতা শুরু পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত মোশারফ হোসেন ও তাঁর সমর্থকদের পাঁচটি বসতঘর ও দুটি মোটর সাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জসিম উদ্দিনের এক সমর্থকের ঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও চারটি ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট এবং মোশারফের এক সমর্থকের চারটি গরু লুট করার খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
হামলার শিকার এমারত হোসেনের ছোট ভাই নাজমুল প্রধান ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কায়েতপাড়া ইউপি নির্বাচনে তাঁর ভাই ও মোশারফ হোসেন নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান জায়েদ আলীর সমর্থক ছিলেন। অপরদিকে কায়েতপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ভাই মিজানুর রহমান ছিলেন চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। নৌকার পক্ষে কাজ করা নিয়ে রফিকুল ও মিজানুরের সঙ্গে তাঁদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। নির্বাচনে জায়েদ আলীর কাছে মিজানুর পরাজিত হন। তবে মিজানুরের সমর্থক জসিম উদ্দিন ১ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন, এই ওয়ার্ডে পরাজিত হন মোশারফ।
তাঁরা আরও জানান, নাওড়া এলাকায় রফিকুল ও জায়েদ আলীর প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওয়ার্ড সদস্য জসিম উদ্দিন ও মোশারফ হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাতে জসিম উদ্দিন মোশারফ হোসেনসহ তাঁর সমর্থকদের বাড়ি ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুন জ্বালিয়ে দেন। এ সময় দুপক্ষের সংঘর্ষ শুরু হলে দুজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত সাতজন আহত হয়।
তবে বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জসিম উদ্দিন প্রতিবেদক কে বলেন, ‘নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই মোশারফ আমার লোকজনকে মারধর করে আসছে। মঙ্গলবার বিকেলে আমার চাচাতো বোনকে মারধর করে। এ ছাড়া আমার চাচাতো ভাই আজিজের বাড়িতে আগুন দেয়। তারপর মোশারফের সমর্থকরা নিজেরাই নিজেদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।’
জসিম উদ্দিন অভিযোগ করে আরও বলেন, নাওড়া এলাকায় রফিকুল ও মিজানুরের জনপ্রিয়তায় ভয়ে জায়েদ আলী ও মোশারফের লোকজন বহিরাগতদের এনে প্রতিনিয়ত হামলা চালাচ্ছে।
জানতে চাইলে রাত ১২টার দিকে মিজানুর রহমান মুঠোফোনে প্রতিবেদক কে বলেন, ‘জায়েদ আলীর সঙ্গে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমাকে এলাকার মানুষ ভালোবাসে। আমরা এখানে শান্তিতে থাকতে চাই। মঙ্গলবার বিকেলে মোশারফের লোকজন জসিমের বড় বোনকে মারধর করেছে। মোশারফ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে চায়।’
এ বিষয়ে জানতে জায়েদ আলী মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ প্রতিবেদক কে বলেন, ‘বাড়ি ঘরে আগুন এবং গোলাগুলি ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত চারজন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। শুরু থেকেই পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। এলাকা জুড়ে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, এ ঘটনায় দোষী ও অবৈধ অস্ত্রধারীদের আটকের চেষ্টা চলছে। রাত ১২টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।








Discussion about this post