“আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে বলতে চাই অবিলম্বে ত্বকী হত্যার বিচার করা হোক। আমি দাবী তুললাম। কারণ এ হত্যার কথা বলে আমার পরিবারের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে অনেকে সস্তা কথা বলে। পাশাপাশি শহরের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাই। আমরা নারায়ণগঞ্জে কারও পায়ে ভর দিয়ে রাজনীতি করি না। আমাদের নেতা একজনই শেখ হাসিনা। বাকি আর কাউকে নেতা হিসেবে গোনায় ধরি না। হুমায়ুন রবিউলকে সরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু শেখ হাসিনার কর্মী হওয়া থেকে কেউ সরিয়ে দিতে পারবে না।”
এভাবেই নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ত্বকী প্রসঙ্গে শামীম ওসমান শনিবার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে নম পার্কে আয়োজিত এক কর্মীসভায় এমন মন্তব্য করেন।
শামীম ওসমান বলেছেন, এখানে যারা আছেন আমার কারও সাথে আলাপ হয়নি। গত পরশু জাতির পিতার কন্যা সংসদে একটা ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি অনেক কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। সামনে আমাদের চরম কঠিন পরীক্ষা পার করতে হবে। আমাদের দায়িত্ব এই মেসেজটা সকলের কাছে পৌছে দেয়া।
আমার বাবাকে খুনি মোশতাক ফোন করল। তিনি আমার বাবাকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। আমার মা মোশতাকের প্রস্তাবে বলেছিল, তিনি যদি আপনার প্রস্তাবে রাজি হয় তাহলে হয় তাকে খুন করবো নয়ত আমি নিজে আত্মহত্যা করবো। এর দশ মিনিটের মধ্যে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে আমার বাবাকে গ্রেফতার করা হল। গোলাম মোর্শেদ ফারুক সাহেবকেও সেদিন গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার ছেলেরা আজ পত্রিকা বিক্রি করে খায়।
আমার বাবা আর মনসুর আলী চাচা এক রুমে ছিল। সেদিন তাকে অযুও করতে দেয়নি। আজকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলেন। তারা সেদিন বলেছিল আমরা মরেও প্রমাণ করতে চাই আমরা বঙ্গবন্ধুর লোক। আমরাও মরে প্রমাণ করতে চাই শেখ হাসিনার লোক আছি থাকবো।একটা নির্বাচন হয়েছে। এটা আসলেই খেলা শুরু হয়ে যায়৷ ২০১৬-১১ তে কী করেছি এবার কী করেছি তা আমি জানি। বলব না কারন দলকে ভালবাসি। রাজনীতিতে আঘাত পেয়েছি কিন্তু কষ্ট পাইনি। কবরস্থানে যা হয়েছে তা কোন সন্তান মানতে পারে না। নেত্রী আমাকে বলেছিলেন আমি সমস্ত বিষ হজম করি আমি নীলকন্ঠী। আমাকে আঘাত করে কথা বললেও আমি কিছু বলি না। কারণ আমি আমার নেত্রীর মত হতে চাইছি। এটা খুব কষ্টের, আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমার স্ট্রেস এ্যাটাকও হয়েছিল। আমি আমার বাবা মা ভাইকে ভালবাসি। আমি বলেছিলাম গোপনেও হলেও তাদের বলেন আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে। শয়তান আর ফেরেশতা ছাড়া সকলেই ভুল করে। তাও হয়নি, তাই কষ্টটা আরও বেড়ে গিয়েছে।
আমার বাবা মৃত্যুর আগে আমাদের তিন ভাইয়ের হাত শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন ওরা যদি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মরেও যায় তাহলে তাই হোক। আমার মা আমাকে একটা কথা বলেছিলেন নামাজ পড়ো, নেত্রী শেখ হাসিনার সামনে অনেক কথা বলছিলাম। তিনি বলেছিলেন হতাশ হলে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী পড়ব। বড়ভাই নাসিম ওসমান বলেছিলেন আল্লাহকে চেনার চেষ্টা করো। আমি বুঝতে পারিনি চিনবো কীভাবে। পরে আমি বুঝেছি এভাবে চেনা যায় আল্লাহকে। সব ধর্ম সুন্দর কোন ধর্ম মানুষকে খারাপ শিক্ষা দেয় না। তারা সম্মান করতে জানে।
আমি প্রেস কনফারেন্স না করলে সমস্যা হত। একটা পক্ষ মাঠে নেমেছিল কারা এরা। কেউ কেউ লেখে দল আমাকে দিয়ে তৈমূর ভাইকে কিছু প্রমাণ করার জন্য দাড় করিয়েছে। কেউ আমাকে এ নির্দেশনা দেয় নি। তবে লেখা হচ্ছে এটা ইচ্ছা করে করা হচ্ছে। এত নিচু লেভেলের চিন্তা আমার নেত্রীর নেই।
রাজনীতিতে কিছু নোংরামি আছে। নারায়ণগঞ্জ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সামনে আমার জানামতে প্রচন্ড বড় আঘাত আসছে দেশের ওপরে। কে বাঁচাতে পারে ওপরে সৃষ্টিকর্তা আর নিচে শেখ হাসিনা। যত আঘাত আসছো তিনি নিজের ওপর নিচ্ছেন। তার ওপর যখন গ্রেনেড হামলা হল তখন মানবাধিকার কোথায় আছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা বিদেশে আশ্রয় নেয় তখন কোথায় মানবাধিকার। এখানে অনেকের ভেতরে রক্তক্ষরণ আছে। সময় আসছে আমাদের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তারা যুদ্ধ করেছিল দেশটাকে স্বাধীন করার জন্য। আন্তর্জাতিক রাজনীতি চলছে। হয়ত আগামী এক দুই মাসে একটা আঘাত করার চেষ্টা করা হবে। তারা জিততে পারবে না কারন নেত্রীর ওপর আল্লাহর রহমত আছে। আমার ভেতরেও রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমি জানি আমি ইচ্ছা করলে কী করতে পারি। আমি জবাব দেয়ার ক্ষমতা রাখি। প্রচন্ড কষ্ট লেগেছে মনে।
সংসদে আমার আশেপাশে দুই আড়াইশো এমপি আছেন। আমি কোন অভিযোগ করিনি তার কাছে। হঠাৎ দেখি তিনি বক্তব্য শেষে ঘুরে বললেন থ্যাংকস টু ইউ। পরে তিনি আবার বললেন অল দ্যা থ্যাংকস টু শামীম ওসমান। তিনি থ্যাক্স দিবে কেন, আমি তার কর্মী। তার পক্ষে না থাকার আগে যেন আমার মৃত্যু হয়। তবুও কিছু কষ্ট থাকে৷ করোনায় তার পাঁচ ফুটের মধ্যে যাওয়া নিষেধ। আমি গিয়ে তাকে বললাম আমি কষ্ট পেয়েছি। তিনি বললেন আমাদের মুক্ত করতে গিয়ে তোমার বাবা আমার চাচা রক্ত দিয়েছে। আমার ভেতরে যে কষ্টের বিষ ছিল তা চোখ দিয়ে বের হতে চাচ্ছিল। তিনি আরও কিছু কথা বলেছেন এটা বলা ঠিক হবে না। বিষাক্ত জিনিসটা চোখের পানি হয়ে বের হয়ে গেছে।
আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি নির্বাচন করিনি তবুও নারায়ণগঞ্জ টার্গেট হচ্ছে। আমি ফতুল্লা নির্বাচনে যাইনি কাশিপুরে যাইনি। এনায়েত নগরে গিয়েছি কারন আমাদের ছেলেদের ওপর হামলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাড়িয়ে বলে আমি পড়ি না সেই প্রথম আলো ট্রেনিং দেয় নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ কীভাবে করতে হবে। প্রথম আলো যখন ট্রেনিং দেয় তখন বুঝতে হবে সামথিং ইজ রং। দিপু মনিকেও টার্গেট করা হয়ে। এখানে পর্দার আড়ালে কিছু লোক আছে। গোলাম আজম যখন নাগরিকত্ব পায়নি তখন নারায়ণগঞ্জের একটি বাড়িতে আসেন। তাদের এখন আরেক ইন্ডাস্ট্রি। আরেকজন হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী বজলুল হুদার পারিবারিক সদস্য। তিনিও অঢেল টাকার মালিক। তারা ফাইনান্স করছে। দলের ভেতর করছে হয়ত বাইরেও করছে। তারা ভাবছে এদের সরিয়ে দিলে তাদের সুবিধা হবে। তাদের খেলা ইট এন্ড রান। যারা এটা খেলতে চান তাদের বলতে চাই চলেন খেলি। এবার কিন্তু আমরা খেলার জবাব কঠিন ভাবে দেয়া যায়। আমরা খেলতে জানি, খেলা হবে এবং আমরা সে খেলায় জিতবো। আপনারা আমার কথা হালকা ভাবে নিবেন না। কর্মী থাকে সম্মান বেশি পাবেন। রাজনীতি করতে এসেছি বেঁচতে আসিনি। আমরা রাজনীতি বেচে খাই না। এ দেশটাকে বাচাতে আমাদের বাচ্চার ভবিষ্যতের জন্য আমাদের আরেকবার ক্ষমতায় আসতে হবে। ছোট্ট একটা দেশে বড় বড় শক্তি ইনভলভ হয়ে গেছে। প্রস্তুতি নেন যেন আমাদের মা যদি ডাক দেয় নারায়ণগঞ্জ থেকে যেন ভীমরুলের চাকের মত লোক ঢাকা যেতে পারে। আমি আশাকরি সামনের ক্রাইসিসে আপনাদের রাজপথে পাবো।
আমার কষ্ট লেগেছে আমি কথা বলতে পারিনি কারণ বললে অনেক কথা হবে। নয়ত আমাদের আরও কয়েকজন কাউন্সিলর পাস করত। এ সুযোগে কিছু আওয়ামী লীগের নেতা সন্ত্রাসীদের স্টাবলিশ্ড করার চেষ্টা করেছে। নির্বাচন শেষ কর্মীদের চোখ আপনাদের দিকে থাকবে। আমি আনোয়ার ভাই ও খোকন সাহাকে দায়ী করতো চাই। আপনাদের কথা বলা উচিত ছিল। কারন আমার একটা দিয়ে হবে না আমার সকল ওয়ার্ড ইউনিয়ন দরকার। প্রতি ওয়ার্ডে দুই তিনজন করে প্রার্থী দাড়িয়ে গেছেন। আমি সকলের কাছে ভিক্ষা চাই। আমরা সকলে ভাই আমাদের একটা পরুবার আমাদের মা শেখ হাসিনা। আমরা ঈমানদারির সাথে মরতে চাই। যারা খেলতে চাইবে তাদের ঘরে ঘরে ঢুকে আঘাত করা হবে।
আপনারা এলাকা গোছান। আপনারা শুরু করেন আমরা আপনাদের পাশে আছি। প্রতি মহল্লায় পঞ্চায়েত কমিটি হবে। তাদের কাজ মাদক, ভূমিদস্যুদের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা। আমরা মানুষকে ভালবেসে তাদের মন জয় করবো। কষ্ট লাগে যখন ত্যাগী লোকেরা কষ্ট পায়। আঘাত আসবে এটা কনফার্ম। কতটুকু আসবে জানি না। বলবো না, যুদ্ধের কিছু রণকৌশল আছে। আগামী শুক্রবার প্রতিটা এলাকায় যার যার মসজিদে দোয়া করবেন যে দেশে করোনা মুক্ত হয় এবং শেখ হাসিনাকে যেন আল্লাহ শক্তি দেন।









Discussion about this post