‘..ওরা তাঁকে হত্যা ক’রে ভেবেছিল তিনি/ সহজে হবেন লুপ্ত উর্ণাজাল আর ধোঁয়াশায়/ মাটি তাঁকে দেবে চাপা বিস্মৃতির জন্মান্ধ পাতালে-/ কিন্তু তিনি আজ সগৌরবে/ এসেছেন ফিরে দেশপ্রেমিকের দীপ্ত উচ্চারণে/ সাধারণ মানুষের প্রখর চৈতন্যে/ শিল্পীর তুলিতে, গায়কের গানে, কবির ছন্দের আন্দোলনে/ রৌদ্রঝলসিত পথে মহামিছিলের পুরোভাগে।’
স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের স্মরণে প্রয়াত দেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমান তার ‘তিনি এসেছেন ফিরে’ নামক কবিতায় এভাবেই হন্তারকদের অভিসম্পাত করেছেন।
আজ সোমবার (১ আগস্ট) থেকে শুরু হলো শোকাবহ আগস্ট মাস। এ মাসেই বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। ঘাতকের বুলেট বিদ্ধ করে কালজয়ী মানুষ বঙ্গবন্ধুকে- সপরিবারে। বিদ্ধ হয় গোটা বাঙালী, স্বাধীন বাংলাদেশ। রচিত হয় পৃথিবীর এ যাবতকালের সবচেয়ে ঘৃণ্য ও জঘন্যতম ইতিহাস।
১৯৭৫ সালের এ মাসে স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মানবতার শত্রু প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতক চক্রের হাতে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। তিনি ছিলেন পরাধীন বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, বিশ্বের লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা, বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান, বাঙালির প্রেরণার চিরন্তন উৎস ও অবিসংবাদিত নেতা।
সেদিন ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী, মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, জাতির পিতার বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, ছোট ছেলে নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল।
’৭৫-এর ১৫ আগস্ট নরপিচাশ রূপি খুনিরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি আইন জারি করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্ককের বোঝা বহন করে চলে। আবার এই শোকের মাসেই আরেকটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার জন্ম হয়। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। ওই হামলার টার্গেট ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
শোকাহত ও অভিশপ্ত মাস আগস্টের আজ প্রথম দিন। রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে, ওভার ব্রিজ, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজের সামনে উড়ছে বিশাল বিশাল কালো পতাকা ও ব্যানার। প্রতিটি ব্যানার-ফেস্টুনেই বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখা বিভিন্ন স্লোগান। এভাবেই আগস্টের প্রতিটি দিন শোকাবহ পরিবেশে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি স্মরণ করছেন হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করা হচ্ছে প্রতিটি শোকের অনুষ্ঠানে।









Discussion about this post