বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী শান্তিপূর্ণ সমাবেশে এই নজিরবিহীন গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হিংসার দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে। আক্রান্ত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১৯ বছর আগে নৃশংস সেই ঘটনায় রতনের মৃত্যুর পর পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। এখন কিছুটা পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটলেও শোকাবহ সেই দিনটি আসলে নিরবে চোখের জল ফেলেন রতনের পরিবারের লোকজন। এই দেড় যুগ পেড়িয়ে গেলেও ঠিকমত খোঁজ খবরও নেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকজন।
জানা গেছে, স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রচন্ড পছন্দ ও ভালোবাসতেন রতন শিকদার। শেখ হাসিনা ভাষণ দিবেন খবরটি জানতে পারলেই নাওয়া খাওয়া আর রুটি রোজগার ভুলে চলে যেতেন সভা সমাবেশে ভাষণ শুনতে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে যখন নারায়ণগঞ্জের অনেক নেতাকর্মী ভয়ে আত্মগোপনে ছিলেন তখন বুক ফুলিয়ে শেখ হাসিনার সভা সমাবেশে ছুটে যেতেন রতন সিকদার।
ভাষণ শেষে রাতে বাড়ি ফিরে সেই গল্পও করতেন।
তবে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সেই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় না ফেরার দেশে চলে যাওয়ায় সবশেষ গল্পটি আর পরিবারের কাছে বলা হয়নি রতন সিকদারের। ওইদিন বিকেলে শেখ হাসিনার বক্তব্য চলাকালীন গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে নেয়ার পথেও সঙ্গীদের কাছে বার বার জিজ্ঞেস করছিল ‘আমার নেত্রী বেচেঁ আছে তো’। একথা বলতে বলতে এক সময়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
রতন শিকদারের ছোট ভাই টুটুল শিকদার জানান, বাবা মৃত আব্দুল হক শিকদারও ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভক্ত। তিনি ২০০৩ সালে মারা যান। রতন সিকদাররা ৩ ভাই ও ৩ বোন। বাবার মৃত্যুর পরে বড় ভাই রতন সিকদার সংসারের হাল ধরেন। ফতুল্লার বিভিন্ন টেক্সটাইল মিল থেকে কাপড় কিনে দোকানে বিক্রি করতেন। তবে ২০০৪ সালে রতন সিকদার মারা যাওয়ার পরে তাদের পরিবারে নেমে আসে অমানিষার ঘোর অন্ধকার। এরপর থেকে তিনি সংসারের হাল ধরেন। তার বড় ভাই রতন সিকদারের এক ছেলে ও এক মেয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের তরফ থেকে রতন সিকদারের পরিবারকে রাজধানী ঢাকার মিরপুরে একটি ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন। তার স্ত্রী ও সন্তানরা সেখানে থাকেন। তাদের মা কয়েক বছর আগে মারা যান। একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায়ও তিনি দেখে যেতে পারেননি। আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলার দিবস এলে একটি চিঠি পাঠাতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সেটিও তারা পাচ্ছেননা।
গ্রেনেড হামলার পরপরই শেখ হাসিনাকে কর্ডন করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তার তৎকালীন বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনে। ২১ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান ছাড়াও সেদিন নিহত হন ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের সঙ্গে লড়াই করে ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আরও কয়েকজন পরাজিত হন
উল্লেখ্য ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট ইতিহাসের বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় মারা যান ২২ জন আর আহত হয় আরো ১২০ জন। যাদের মধ্যে নিহত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের রতন সিকদার।









Discussion about this post