আধিপত্য বিস্তার ও তুচ্ছ ঘটনায় অতর্কিত হামলা-মারামারি থেকে শুরু করে প্রায়ই হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে নারায়ণগঞ্জের কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এমনকি শাসক দলের রাজনৈতিক অফিস, বাড়িঘর ও রেস্তোরাঁ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বহুবার। এ ছাড়া মধ্যরাতে বিভিন্ন সড়কে ছিনতাইয়ের পর পথচারীদের জখম করে রক্তাক্ত করছে বিভিন্ন গ্যাংয়ের সদস্যরা। তাদের বড় একটি অংশের অবস্থান থাকে পুলিশের আশপাশেই।
কিশোর গ্যাংয়ের মহড়ার সময়কার একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা গেছে, ধারাল দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি হাতে ফতুল্লার ইসদাইর এলাকায় উৎপাত করছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। অর্ধশত কিশোরের দল সংঘবদ্ধ হয়ে পাড়ামহল্লায় মহড়া দিয়ে যাওয়ার সময় আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া অলিতে-গলিতে এমন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তর্কের জেড়ে মারামারিসহ প্রাণহানির ঘটনাও ঘটিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরে অনন্ত ৫০টির বেশি কিশোর গ্যাং রয়েছে। এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা উঠতি বয়সীদের সংঘবদ্ধ করে নানা অপকর্মে জড়িয়ে থাকে। তাদের সঙ্গে রাখে সুইচ গিয়ার চাকু ও ছোরা। তার মধ্যে সেভেন স্টার, আলদাগা, বাবু বাহিনী, রাকিব গ্যাং, ইবন বাহিনী, রফিক গ্যাং, টেনশন গ্রুপ ও ডেভিল এক্সো গ্রুপ, কৃষ্ণা গ্যাং, সাবু বাহিনী, সাঈদ গ্যাং, সোলেমান ও বিষু বাহিনী শহরের মধ্যে বেশ আলোচিত। এসব গ্যাংয়ের বেশির ভাগ সদস্য এরই মধ্যে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছে। সর্বশেষ মাসদাইর এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয় হামলায় জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের ২৯ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নারায়ণগঞ্জের সভাপতি ধিমান সাহা বলেন, ‘অদ্ভুত চুলের কাটিং, ছুরি হাতে সংঘবদ্ধ ছুটে চলা। তুচ্ছ ঘটনায় মারামারি, অস্ত্র নিয়ে মহড়াসহ খুনের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তাদের ভয়ে তটস্থ থাকতে হয় স্থানীয়দের। যেন পান থেকে চুন খসলেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে তারা। অযথাই হামলে পড়ে প্রতিপক্ষ কিংবা সাধারণ মানুষের ওপর।’
তিনি বলেন, ‘বেপরোয়া এসব কিশোর গ্যাংয়ের কাছে অস্ত্র থাকায় ভয়ে পাড়া-মহল্লার বাসিন্দারা মুখ খুলতে পারে না। তা ছাড়া প্রতিবাদ করলেই চালানো হয় হামলা। তাদের ভয়ে এখন বিভিন্ন এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তার মধ্যে প্রায় সব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরাই নগরীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এসে সন্ধার পর অবস্থান করে। বেদির পেছনে বসে মাদক সেবন করে। পুলিশ তো এ নগরীর সব সমস্যাই দেখে।’ কিশোর গ্যাংরোধে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক সম্প্রতি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ের আলোচনা থেকে যা জানতে পেড়েছি- বেশির ভাগ পাড়া-মহল্লার কিশোর গ্যাং চালায় বড় ভাই-নেতারা। যদি তাদের আগে আইনের আওতায় আনা যায় তা হলে কিশোর অপরাধও দিন দিন কমে আসবে।’
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) চাইলাউ মারমা। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে সুইচ গিয়ার, চাকু ও ছোরা নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা হামলা চালিয়ে ও মহড়া দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এরই মধ্যে এমন দুই শতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরাও কিশোর গ্যাং দমনে কাজ করছে। তবে কিশোর অপরাধ কমাতে হলে সামাজিক মূল্যবোধ বাড়ানো প্রয়োজন বলে জানান জেলা পুলিশের এই মুখপাত্র।
এদিকে গত বছর শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্য গ্রেপ্তারের পর মামলা দেওয়া হয় বলে উল্লেখ করেন র্যাব-১১-এর উপ-পরিচালক মেজর সানরিয়া চৌধুরী। তিনি জানান, কয়েক মাস আগে সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে টেনশন গ্রুপ ও ডেভিল এক্সো গ্রুপের ১৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। যেসব এলাকায় কিশোর গ্যাং রয়েছে পর্যায়ক্রমে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। সূত্র : খবরের কাগজ









Discussion about this post