ওসমান পরিবারের যে কোন সদস্যের কোন অনৈতিক কর্মকান্ডে যে কোন ব্যক্তি জড়িত হতে পারলেই যেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া যায় – এমন প্রমাণ নারায়ণগঞ্জে অসংখ্য। এদের মধ্যে আরো এক প্রভাবশালী চাঁদাবাজ যার ভয়ে পরিবহন সেক্টরের কেউ কথা বলতে পারতেন না তিনি হচ্ছেন পাত্তি মিস্ত্রি দিদার । এখনো যিনি রয়েছেন বীরের বেশে। নতুন কোন প্রভাবশালীদের শেল্টারে । মাত্র ১৫ বছরের ব্যবধানে শুন্য থেকে কোটিপতি বনে গেছেন নারায়ণগঞ্জ বাস মালিক সমিতির নেতা দিদার নিজেকে কোন কোন সময় ‘দিদার ওসমান’ হিসিবে পরিচয় দিতেন বলে গুঞ্জন রয়েছে ।
এমন সংবাদ গণমাধ্যমে উঠে আসলেও টনক নড়ে নাই এই অপরাধী ও তার চক্রের কারোর ই । ওসমান পরিবারের সকল অপরাধী চাঁদাবাজ চক্র পালিয়ে গেলেও এখন নতুন গডফাদারদের পিছু নিয়ে নিজেদের রক্ষা করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দিদার চক্র। যাদের অনেকের বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীরও অভিযোগ রয়েছে । ধর্ম ও পেশা লুকিয়ে দিদার চক্রের সদস্যদের এমন নারী কেলেংকারী এখন সকলের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে ।
যা এখন নগর বাসীর মুখে উচ্চারিত হচ্ছে । বিগত সময় প্রকাশ্যেই ওসমান পরিবারের হামলা ও মামলার হুমকির কারনে গণমাধ্যম কর্মীদের কোনঠাসা করে রাখা হতো । যার কারনে কেউ টু শব্দ করার সাহস করতো না।
চাঁদাবাজিসহ এমন ঘৃন্য সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশের পর কুখ্যাত গডফাদার শামীম ওসমানের রেখে যাওয়া চাঁদাবাজ চক্র নতুন করে নানাভাবে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে নতুন ছক আঁকতে শুরু করেছে।
মাত্র কয়েক বছর পূর্বে পেটের দায়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের বালুর মাঠ এলাকায় সাধারণ পাত্তি মিস্ত্রী হিসেবে পথচলা শুরু করে দিদার। এরপর মোক্তার নামে এক পরিবহন মাফিয়ার হাত ধরে স্থান হয় পরিবহন ব্যবসায়। প্রথমে বিভিন্ন সংস্থার নামে বাস মালিক ও শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে দৈনিক ৫শ টাকা উপার্জন ছিল এই দিদারের। এরপর চাঁদার টাকা নয় ছয় করে আচমকা বনে গেলেন পরিবহন মালিক। এতে রক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন মরহুম মোক্তার হোসেন। তার ছত্রছায়ায় থেকেই বাস মালিক থেকে দিদারের জায়গা হয় মালিক সমিতিতে।
এরপর শুরু করে পত্তি মিস্ত্রি দিদারের নেতৃত্বে চাঁদা আদায়। আর পরিবহণ সেক্টরের বিশাল চাঁদাবাজির অর্থ কখনো রাইফেল ক্লাবের কাজলের কাছে আবার কখনো জামতলায় শামীম ওসমানের শ্বশুর বাড়িতে নিজেই পৌঁছে দিতেন । এমন করে প্রতিনিয়তঃ বিশাল চাঁদা পৌঁছে দিতে দিতে শামীম ওসমানের বাড়ির বাজার নিজেই করে দিয়ে দিদার । এরপর বনে যান ওসমান পরিবারের আস্থাভাজনদের অন্যতম। আর এমন ঘটনার পর নিজেকে অনেকের মতো পাত্তি মিস্ত্রি দিদার হয়ে উঠেন ‘দিদার ওসমান !’
ওসমান পরিবারের আস্থাভাজন হয়েই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কে চলাচল করতো আনন্দ পরিবহনের আধিপত্য বিস্তার করে দিদার। এক যুগ আগেও এই পরিবহন ব্যবস্থাটি ছিল অত্যন্ত লাভজনক। বাস মালিকরাও সকল খরচ মিটিয়ে প্রতিদিনের লাভের অংশ নিয়ে যেতে পারতেন বাড়িতে। তবে যেদিন থেকে দিদার গংরা এ পরিবহন সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে বসা আরম্ভ করলেন লাভজনক থেকে অলাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয় আনন্দ পরিবহন। শুরু হয় আনন্দ পরিবহন সংস্থার এক অন্ধকার যুগ।
তৎকালীন আনন্দ পরিবহনের জড়িত ব্যক্তি ও বর্তমান মালিক সমিতির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, দিদার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা প্রতিদিন পরিবহন সংস্থাটি থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদার নামে আত্মসাৎ করেছে। এদের দুর্নীতির কারণে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে আনন্দ পরিবহনে যাত্রী ও সেবায় ধ্বস নামে। এরপর লোকসানের পাল্লা বাড়তে থাকায় ধীরে ধীরে অনেক মালিক এ ব্যবসা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে শুরু করে। পরিবহন মালিকদের লোকসানের বোঝা বাড়লেও অর্থ সম্পদে ফুলেফেপে উঠে দিদার ও তার পরিবারের সদস্যরা। শুধু আনন্দ পরিবহনই নয়, নারায়ণগঞ্জ টু চিটাগাং রোডে চলাচল করা বন্ধু পরিবহন, নারায়ণগঞ্জ টু সোনারগাঁয়ের বাধন পরিবহনসহ ছোট-বড় অন্যসকল পরিবহন ব্যবস্থাতেও দিদার ও তার অপকর্মকারী সহযোগীদের বিষাক্ত ছোবল পড়ে। এতে সর্বত্র দিদার আতংক ছড়িয়ে পরে। ফুলেফেপে উঠে দিদারেরও পকেট। রাতারাতি বনে যান কোটিপতি। স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়স্বজনদের নামে ও বেনামে গড়ে তোলেন অঢেল সম্পদের পাহাড়।
নাম না প্রকাশের শর্তে বর্তমান মালিক সমিতির এক সদস্য বলেন, “৯০ এর দশকে চাষাঢ়া শান্তনা মার্কেটর সামনে (বর্তমান বেলি টাওয়ার) একটি গ্যারেজের পাত্তি মিস্ত্রি ছিলেন দিদার। সেখানে কর্মরত ছিল দিদারের আরেক বন্ধু। সে এখনো দিদারের সাথে আছে, তিনি বর্তমানে দিদারের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। মুক্তারের হাত ধরেই দিদার পরিবহন মাফিয়ায় আসে। এর আগে ফ্রিডম কামাল ভাই ছিলেন নারায়ণগঞ্জের পরিবহনের একক নেতা। তার নিয়ন্ত্রনেই চলতো সকল পরিবহন। সে বর্তমানে কাডানায় অবস্থান করছেন। তিনি আরও বলেন, দিদার পাতি মিস্ত্রির কাজ ছেড়ে মুক্তারের সাথে সম্পৃক্ত হয়। বিভিন্ন পরিবহণ থেকে চাঁদা উঠিয়ে মুক্তারের হাতে দিতো সে। মুক্তারও দেখে দিদারকে দিয়ে তার লাভ। চতুর দিদার ধীরে ধীরে বিভিন্ন লাভ দেখিয়ে স্থান করে নেয় নারায়ণগঞ্জ পরিবহন মাফিয়াদের দলে। এর পর ওসমান পরিবারের সাথে সখ্যতা করে গত ১৫ বছরে পরিবহণ সেক্টরের রাম রাজত্ব চালিয়ে এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ পাত্তি মিস্ত্রি দিদার।”
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ছাড়াও নানা অনুসন্ধ্যানে উঠে আসছে দিদার ও তার চক্রের সকল অপরাধীদের চমৎপ্রদ তথ্য।









Discussion about this post