পুলিশ বলছে, বৈধ কোনো উপার্জন না থাকলেও তাদের কাছে পাওয়া গেছে দামী গাড়ি, অবৈধ অস্ত্র। থাকতেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে, খাবার খেতেন অনলাইনে অর্ডার দিয়ে। তাদের কাজই ছিল প্রতারণা।
মিথ্যা পরিচয়ে এরকম প্রতারণাই ছিল তাদের পেশা। একটি নয় পুলিশের কাছে বাবা গোলাম মোহাম্মদ কালু ও পুত্র আদরের বিরুদ্ধে আসতে থাকে বিস্তর অভিযোগ। তদন্তে নামে পুলিশ। প্রতারণার একাধিক মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ পেতে থাকে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এক পুলিশ কর্মকর্তা ধারের টাকা ফেরত চাইলে আদর তার খালাতো ভাই ও ড্রাইভারকে দিয়ে ঐ পুলিশ কর্মকর্তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেন। ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফকে অপরহরণ করার পর মুক্তিপণ না পেয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু হত্যার পর আবারো নিহতের পরিবারের কাছে দাবি করেন মুক্তিপণ। বলা হয় টাকা দিলে ফিরবে তাদের ছেলে৷
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান জানান, ‘তারা অভিনয় করেন।কখনো বাবা হয়ে যান মন্ত্রী। ছেলে তার সঙ্গে আঙ্কেল বলে কথা বলেন। আদরের স্ত্রী হয়ে যায় কোন এক মন্ত্রীর কন্যা। তারা টেলিফোনে কনভারসেশন শুনিয়ে বোকা বানান। তারপর টাকা পয়সা হাতিয়ে নেন।
পুলিশ বলছে শুরুতে বাবা গোলাম মোহাম্মদ কালু জায়গা জমি- গ্যাসের লাইনের দালালি, ঋণের জন্য জমি বন্ধক রাখার নামে প্রতারণা করতেন। তার হাত ধরেই এই পথে আসেন ছেলে আদর। বাবা-ছেলে তাদের কয়েক আত্মীয়কে নিয়ে গড়ে তোলেন পারিবারিক প্রতারক চক্র। পুত্র আদরের আয়ের আরেকটি বড় উৎস নারীদের ব্ল্যাকমেইল করা ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান আরও জানান, ‘জামিন করিয়ে দেয়া। মামলা করা বা মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া এসকল তদবির করার নামে মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করেছে তারা।’
নানান অভিযোগ তদন্ত শেষে বাবা-ছেলেসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ মাদকও। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আহসানুজ্জামান জানান, ‘আদরকে তল্লাশি করা হলে তার কোমর থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড তাজা গুলি, কিছু পরিমান ইয়াবা ও টাকা উদ্ধার করি।
পুলিশ বলছে রাজধানী ধানমণ্ডির এই অভিজাত ভবনটিতে পরিবারসহ থাকেন বাবা গোলাম মোহাম্মদ কালু ও তার ছেলে গোলাম মোস্তফা আদর। প্রতিমাসে শুধু ফ্ল্যাটের ভাড়া বাবদ গুণতে ৫৫ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে মাসে খরচ কয়েকলাখ টাকা। কিন্তু তাদের কোন বৈধ ব্যবসা বা কোন আয় ছিল না। গ্রেফতারের পর আরো অভিযোগ আসছে পুলিশের কাছে ।
নারায়ণগঞ্জের এই ভয়ংকর প্রতারক পরিবার সম্পর্কে প্রকাশিত তথ্য থেকে আরো জানা যায় :
ভয়ংকর এই প্রতারক চক্রের হোতা নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়াপাড়া এলাকার মৃত গোলাম আলী মাস্টারের (ট্রেনের মাস্টার) তৃতীয় পুত্র গোলাম মোহাম্মদ কালু সারাজীবন কোন কাজ না করেই প্রতারণার বিভিন্ন ফাঁদ তৈরি করায় ছিলো সিদ্ধহস্ত ।
নানা অপরাধ কার্যক্রমসহ চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড চালিয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগের পর পিতা ও পুত্র গোলাম মোস্তফা আদর ভয়ংকর ফাঁদে ফেলে পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন কে মহা বিপাকে ফেলে তোলপাড়ের সৃষ্টি করেছে ।
সেই প্রতারক গোলাম মোহাম্মদ কালু ও তার পুত্র গোলাম মোস্তফা আদর মিলিত হয়ে রাজধানীর উত্তরা থেকে ২০১৫ সালের ৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফ ইমরানকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আলমগীর হোসেনের বাবুরাইল বউ বাজারের কার্যালয়ে নিয়ে আসে ৷
নারায়ণগঞ্জের এক প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের পুত্রের নাম ব্যবহার করে প্রথমে মুঠোফোনে এবং পরে সরাসরি এসে চাঁদা দাবী করে। দাবীকৃত চাঁদার বাহক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফ ইমরানকে ব্যবহার করে প্রতারক পিতা ও পুত্র ।
এমন চাঁদাবাজির ঘটনার পর কাউন্সিলর আলমগীর হোসেন তার কার্যালয়ে আসিফ ইমরানকে আটক করে হকিষ্টিক দিয়ে পিটানোর ঘটনা এলাকার অনেকের নজরে আসে ।
এরপর ৯ অক্টোবর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে গলাকাটা অবস্থায় আসিফ ইমরানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর আসিফ ইমরান হত্যা মামলা এখনো কোন কুল-কিনারা করতে পারে নাই সিআইডি। সেই ভয়ংকর খুনি ও প্রতারক চক্রের খপ্পরে পরে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে পুলিশ সুপার বেলায়েত। আর নারায়ণগঞ্জের সেই খুনি ও প্রতারক পিতা পুত্রের খোজে নারায়ণগঞ্জ চষে বেড়াচ্ছে প্রশাসনের অনেক সংস্থা ।
Discussion about this post