আর কত অরিত্রি, শ্রাবণী,আঁখি আকতার, সুমাইয়ার মতো অকালে প্রাণ হারাবে আমাদের কোমলমতি সন্তানেরা ? আর কত অপমান সইতে হবে আমাদের মতো অসহায় অভিভাবকদের ? সন্তান হারানো বুক ফাটা কান্না আর কত দেখতে হবে ?
দেশের প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিস্টান যেখানে দুর্ণীতিগ্রস্থ সেক্ষেত্রে কি ই বা করার আছে। তাই হারিয়ে যাওয়া সন্তানের প্রতি আমাদের একটি ই আবেদন করা উচিৎ, ”আমাদের ক্ষমা করো। আমরা তোমাদের রক্ষা করতে পারলাম না। সন্তান হারা বাবা এখন অসহায়।”
সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জের অনেক শিক্ষা প্রতিস্টানে কোমল মতি শিক্ষার্থীদের নানা অপবাদ দিয়ে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা ও অভিভাবক প্রতিনিধিরা স্কুলের মাঠে রোধের মাঝে দাড় করিয়ে রেখে অপমান করার ঘটনায় শিশুরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কোমল মতি শিশুরা নিজেদেরকে সামলে নিতে না পেরেই এমন ঘটনা ঘটালে একেকজন অভিভাবক যেমন হারায় তার লালিত স্বপ্ন, তেমনি নাড়া ফেলে দেয় সমাজে। প্রথমে কিছুদিন হাকডাক/ তদন্ত কমিটি গঠন/মামলা/সমাবেশ হলেও হারিয়ে যাওয়া শিশুর পরিবার বিচারের দাবী । আদালতের বারান্ধায় ঘুরতে ঘুরতেই জীবনের অনেকটা সময় নস্ট করেছে অনেকেই । এমন ঘটনা অহরহ ই দেখা যায়।
সবশেষ দেশের নামী দামী বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী অরিত্রি অধিকারী আত্মহত্যার ঘঠনায় তোলপাড়ের সৃস্টি হয় সারাদেশে। মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার অপরাধে অরিত্রি (১৫) কে পরীক্ষা দিতে না দেওয়া এবং তার বাবা দিলিপ অধিকারী ও মা বিউটি অধিকারীকে ডেকে নিয়ে চরম ভাবে অপমান করেন ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসসহ অন্যান্য শিক্ষকরা ।
এক পর্যায়ে বাবা ও মা ক্ষমা চান করজোড়ে। পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার পরও নাজনীন ফেরদৌসীসহ অন্যান্য শিক্ষকদের মন গলাতে পারে নাই অরিত্রি, বাবা দিলীপ ও মা বিউটি অধিকারী । কোমল মতি শিশু অরিত্রি অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনায় তোলপাড়ের সৃস্টি হলে লাশ দেখতে রাজধানীর শান্তিনগরের বাসভবনে ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের অধ্যাক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত হলে ক্ষোভে ফেটে পরে অন্যান্য অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
অরিত্রির মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ ভিকারুন নিসা নূন স্কুলে উপস্থিত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অসংখ্য ছাত্রীর আত্মহননের ঘটনায় মতো তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে অরিত্রির ক্ষেত্রে।
এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের দৃস্টি আকর্ষণ করা হলে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ এবং রাজিব আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ অরিত্রির মৃত্যুকে হৃদয় বিদারক বলে মন্তব্য করেছে। একই সাথে সকল পত্রিকার কাটিং করে রিট দায়েরেরও নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালতের বিচারপতিগণ।
অরিত্রির মৃত্যু কাঁদিয়ে দিয়েছে পুরো জাতিকে । শুধু কাঁদে নি শিক্ষা ব্যবসায়ী নামক হারামী চক্র ।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য, অভিভাবকদের হাজারো অভিযোগ থেকে জানা যায় পরিবহণ সেক্টরের মতো শিক্ষা ক্ষেত্রের নৈরাজ্যে জিম্মি হয়ে পরেছে সকলেই। চক্রাকারে চরম দূর্ণীতির কারণে অরিত্রি, শ্রাবণী,আঁখি আকতার, সুমাইয়াসহ অনেকেই বাবা মায়ের বুক খালী করে চলে চলে গেলেও কারো কিছুই যায় আসে না। শিক্ষা যেন ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়েছে চরম ভাবে।
নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিক্ষা ব্যবসায়ী কতটা নগ্নভাবে অর্থ উপার্জন করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তা সকলের জানা থাকলেও অভিভাবকরা জিম্মি থাকায় প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। এই শিক্ষা ব্যবসায়ীদের হাত থেকে আমাদের মুক্তি কি নাই ? তাই অসহায় হয়ে আমাদের সন্তান হারানোর পরও বলছি, আমাদের ক্ষমা করো, আমরা তোমাদের রক্ষা করতে পারছি না।
Discussion about this post