আবার বিতর্কে সেই রত্না এন্টারপ্রাইজ । ২০১৫ সালে নগরীর দেওভোগ এলাকায় সড়কের নির্মানাধীন কাজের দেয়াল ধ্বসে মনির হোসেন (২০) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে । ২০২১ সালে ১৩ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ১টায় বন্দরের উত্তর লক্ষনখোলায় স্কুলের দেয়াল ধ্বসে হৃদয় (৩০) ও দুলালী (৩৫) নামের দুই শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে। এমন অসংখ্য দূর্ঘটনার খবর ছাড়াও এই ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের নানা অনিয়মের কারনে ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ সদর থানায় গ্রেফতার হন ঠিকাদার রত্না এন্টারপ্রাইজের মালিক জাকির হোসেন। এর পরেও কোন লাজ লজ্জার বালাই নাই এই ঠিকাদারের।
ঠিকাদারীর অন্তরালে এই চক্র চালিয়ে যাচ্ছে নানা অপকর্ম। পুরাতন কোর্ট এর নব নির্মিত সিজিএম ভবনের প্রাচীরের ভিতরে সরজমিনে গেলেই দেখা যায় পুরাতন ও ব্যবহারের অনুপোযোগী মালামাল কি করে ব্যবহার করতে জাকির চক্র দূর্ণীতির আশ্রয় নেয়, তার চিত্র।
এই বিতর্কিত ঠিকাদার জাকির হোসেনসহ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এই ঠিকাদার চক্র দীর্ঘদিন কি পরিমাণ অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত রয়েছে তার সামান্য উদহারণ হচ্ছে গত ২৯ মে শ্রমিক আশাদুল রহমান (১৯) নামক যুবকের মৃত্যু।
প্রতিটি ঠিকাদারী কাজের চুক্তিপত্র যাচাই বাছাই করলেই দেখা যায়, শ্রমিকসহ আশেপাশের এলাকার লোকজনের উন্নয়ন কাজ চলাকালে নিরাপত্তার জন্য কি পরিমাণ অর্থ বরাদ্ধ থাকে তার ফিরিস্তি উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বরাদ্ধকৃত অর্থ কোথায় যায় তার হিসাব কেউ নেন না।
ঠিকাদার ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত অসাধুদের মাঝে ভাগবাটোয়ারা করে সেই অর্থ নিজেদের পকেট ভারী করায় নিরাপত্তার বেষ্টনীর পরিবর্তে মৃত্যু ফাঁদ তৈরী করে জাকির নামক ঠিকাদারচক্র। এভাবেই চলছে সেই জাকির নামক ঠিকাদারদের নির্লজ্জ বাণিজ্য। আর তাতে সহায়তা করছে ইঞ্জিনিয়ার নামক অসাধুরা ।
জানা যায়, এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনের উপর থেকে পড়ে আশাদুল রহমান (১৯) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। শহরের টানবাজার এলাকায় ২৯ মে সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে নির্মাণাধীন পদ্ম সিটি -২ ভবনে এই ঘটনা ঘটে।
সেখানে কর্মরত শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোন রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সরঞ্জাম ছাড়াই এই বহুতল ভবনটির ঠিকাদার নির্মাণ কাজ করাচ্ছেন শ্রমিকদের।
দুপুরে ১৪তলা ভবনের মাচা বাধার কাজ শেষে নামতে গিয়ে পা পিছলে উপর থেকে পড়ে যান আশাদুল। পরে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভবনটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রত্মা এন্টারপ্রাইজের মালিক জাকির হোসেন বলে জানা গেছে। ২০১৬ সালে এই ঠিকাদারকে রেলওয়ের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে সারা রাত নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় বসে ছিলেন মেয়র আইভী, যা গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিল। তবে এর আগেও একই ঠিকাদারের অধীনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যতিত কাজ করতে গিয়ে শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু রহস্য জনক কারণে তার বিরুদ্ধে আজও কোন শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেয়নি নাসিক।
ঘটনাস্থলে গিয়ে কর্মরত শ্রমিক ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিহত শ্রমিক আশাদুল রহমান রংপুর জেলার মতিউর রহমানের ছেলে।
তিনি ফতুল্লার মাসদাইর ঘোষের বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক জানান, আমাদের ঝুকি নিয়েই কাজ করতে হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে কেউ কেউ কোমড়ে রশি বেধে কাজ করি, এই যা। কিন্তু কেউ পড়ে যেতে পারে এমনটির জন্য প্রতি তলায় বা কয়েক তলা পরপর নিরাপত্তা নেট থাকাটা নিয়ম, যা এখানে নেই।
ঘটনার পরপর সেখানে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক বোরহান উদ্দিন জানান, নির্মাণাধীন ভবনে কাজ শেষে নামতে গিয়ে আসশাদুলের পা পিছলে উপর থেকে নিচে পড়ে মৃত্যু হয়। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ভবনটির মালিক নাসিক। তবে নির্মাণাধীন ভবনের ঠিকাদারকে পাওয়া যায়নি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ভবনের উপরে নিহত ওই শ্রমিক নিরাপত্তা জনীত পোশাক পড়া ছিলেন না তবে বেল্ট পড়া ছিলো। দুপুরে খাওয়া জন্য নামতে গিয়ে পড়ে যান তিনি। শ্রমিকদের দেখার বিষয় সিটির নয় ঠিকাদারের। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক জাকির বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
এদিকে ঘটনার পরপরই নির্মাণাধীন ঐ ভবনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রত্ম এন্টারপ্রাইজের মালিক ঠিকাদার জাকির হোসেনের মুঠোফোন একাধিক বার কলা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি এবং পরবর্তীতে তিনি ফোনটি বন্ধ করে দেন।
উল্লেখ্য, এর আগে শহরে ও বন্দরে একই ঠিকাদারের অধীনে নির্মাণাধীন কাজে শিশু ও নারীসহ একাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা তো দূরে থাক নূন্যতম কারণ দর্শানো নোটিশও দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের চক্তচোষা এই ঠিকাদার জাকির চক্র আর কত কাল কত জন শ্রমিকের মৃত্যুর স্বাদ নিলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে ? নিরাপত্তার জন্য কত টাকা বরাদ্ধ ছিলো ? এই অর্থ কে কে ভাগবাটোয়ার করেছেন ? প্রাচীর ঘোরা নগরীর সিজিএম ভবনের পিছনে পুরাতন ইট দিয়ে তৈরীকৃত মানহীন বিশাল শুরকির স্তুপ কোথায় যায় ? পুরাতন রড কোথায় যায় ? আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ ঠিকাদার চক্রের খুঁটির জোড় কোথায় ? এই নির্লজ্জ ঠিকাদারদের ঠেকাবে কে ? এমন অসংখ্য প্রশ্ন উঠেছে নগরবাসীর মাঝে ।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী স্বচ্ছতার সাথে নগরীর উন্নয়ন করলেও একের পর এক শ্রমিক হত্যা করে নিরাপত্তার জন্য বরাদ্ধকৃত বিশাল অর্থ কোথায় যায় তা খতিয়ে জনসাধারণের মাঝে প্রকাশের দাবীও উঠেছে জোড়ালোভাবে।
Discussion about this post