যানজট কমাতে ফরিদপুরের ভাঙ্গার আদলে নির্মাণ করা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি মোড়। পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক আধুনিকায়ন হলে রাজধানী ঢাকার ওপর যেমন চাপ কমবে, তেমনি যাতায়াতে সময় কমবে অর্ধেকের কম আর যানবাহনের গতি বাড়বে প্রায় কয়েকগুণ। পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক প্রশস্ত ও দোতলাকরণ প্রকল্প বদলে দেবে মুন্সীগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও। পাশাপাশি এ দুই জেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক আধুনিকায়ন কাজে বিশেষ গতি পেয়েছে। সোয়া ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ২ হাজার ২৪২ কোটি ৭৭ লাখ টাকার এই প্রকল্প আগামী বছরের জুনের আগেই সম্পন্ন করতে পুরনো সড়ক প্রশস্ত ও নতুন দ্বিতল সড়ক নির্মাণ চলছে একযোগে।
ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গা তীরে একের পর এক বসছে পাইল। ৬৭ মিটার পর্যন্ত গভীরে পাইল স্থাপনে ব্যবহার করা হচ্ছে ভারী ভারী যন্ত্র। সড়কটির নারায়ণগঞ্জের কাশীপুর থেকে চর সৈয়দপুররের কাঠপট্টি খেয়াঘাট পর্যন্ত নদী তীরে নতুন দ্বিতল সড়ক অংশের ৪২৮টি পাইলের ৩৪৭ টিই স্থাপন হয়ে গেছে। বাকি ৮১ পাইল স্থাপনও মার্চ মাসেই শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া সড়কটির অন্য অংশের পাইল স্থাপন চলছে দিনরাত।
পুরো প্রকল্পে ১ হাজার ১৬৬টি পাইল স্থাপন হবে। এরমধ্যে ৪৭১টি বসে গেছে। অধিগ্রহণকৃত স্থাপনা সরিয়ে নেয়ায় পুরনো সড়ক প্রশস্তকরণ এবং নতুন সড়ক দ্বিতলকরণ চলছে একযোগে। প্যানেল অব এক্সপার্ট বৃহস্পতিবার প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন।
দায়িত্বশীলরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক সচল রেখেই আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে বিশেষ পরিকল্পনায় চলছে কর্মযজ্ঞ।
মুন্সীগঞ্জের পঞ্চসার ইউনিয়ন পশ্চিম মুক্তারপুর বাসিন্দা আসাবউদ্দিন বলেন, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে মুন্সীগঞ্জ জেলা শহরের যোগাযোগের প্রধান এই সড়কের গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে। মুন্সীগঞ্জের কিছু শিল্পঘন এলাকায় শিল্পের কাঁচামাল পরিবহনসহ বিভিন্ন কারণে সড়কটি বেশ ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্চবটি-মুক্তারপুর বর্তমান সরু সড়কের গড় প্রশস্ততা মাত্র সাড়ে ৫ মিটার হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে নিয়মিত মুক্তারপুরে সিমেন্ট কারখানা, হিমাগারসহ ভারি ভারি শিল্প কারখানায় ২৪ থেকে ৫০ মেট্রিক টন ওজনের যান চলাচল করে। কিন্তু আঁকাবাঁকা সড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। আর দিনভর যানজট তো লেগেই থাকে। এ অবস্থায় পুরো সড়কের চেহারা বদলে দিতে নেয়া হয়েছে এই আধুনিকায়ন প্রকল্প। পুরো প্রকল্প চালু হলে এসব থেকে মুক্তি মিলবে আমাদের।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সুমন দেওয়ান বলেন, পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক আধুনিকায়নের কাজ শেষ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। সড়কটি প্রশস্ত ও দোতলাকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত পণ্য কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, লরি করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কোন ঝামেলা ছাড়াই দ্রুত পৌঁছে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সড়ক ব্যবহারকারীরা যেমন ঝামেলাহীন ভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন আবার সময় কমে যাওয়ায় জ্বালানির অপচয় রোধ হবে। শিল্প-কারখানাগুলোর কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত সহজ হবে এবং ব্যয় কমে যাবে। পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক প্রশস্ত ও দোতলাকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই সড়কে আর যানজট থাকবে না।
মুক্তারপুর-পঞ্চবটি সড়ক প্রশস্ত ও দোতলাকরণ প্রকল্পে ডেপুটি টিম লিডার প্রকৌশলী জহুরুল হক বলেন, কাজের গুণগত মানের ব্যাপারে কোন প্রকার আপোস করা হচ্ছে না। আমরা আশাবাদী আমাদের যে টার্গেট টাইম আছে, তার মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করতে পারবো।
মুন্সীগঞ্জ জেলা শহরের সঙ্গে রাজধানীর সহজ যোগাযোগে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক আধুনিকায়নে পঞ্চবটি মোড় থেকে ছয় লেনে ৩১০ মিটার করে ফতুল্লা ও নারায়ণগঞ্জ দুই দিকে প্রসারিত। আর কাশীপুর থেকে শীতলক্ষ্যা-৩ সেতু পর্যন্ত দোতলা দুই লেনে। পুরনো সড়কটি আরও দুই লেনে প্রশস্ত চরসৈয়দপুরের শীতলক্ষ্যা-৩ পয়েন্ট পর্যন্ত। সেতুটির গোল চত্বর থেকে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার সড়ক সরাসরি চার লেন হচ্ছে।
মুক্তারপুর-পঞ্চবটি সড়ক প্রশস্ত ও দোতলাকরণ প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক-পিডি শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের কাজ খুব দ্রুত গতিতে চলছে। আমরা ইতোমধ্যে ৪৭২ টি পাইলের কাজ সম্পন্ন করেছি। ২৭ টি পাইল ক্যাপ, ২৭ টি কলাম এবং ৫ টি পিয়ার রেটের কাজ সম্পন্ন করেছি। কাশিপুর থেকে পঞ্চবট্টি পর্যন্ত কাজটি করতে আমাদের ডাইভারশন করতে হবে। ডাইভারশনের কাজ আমরা শুরু করেছি। আশা করি ২০ দিনের মধ্যে আমরা ডাইভারশনের কাজ সম্পন্ন করতে পারবো। সব মিলিয়ে কাজের অগ্রগতি ভালো। আমরা প্রকল্পের ১৬ শতাংশ কাজ শেষ করেছি।
Discussion about this post