বকেয়া বেতনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বিসিক নগরীতে একটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে
এমন ঘটনার পর বকেয়া বেতন পরিশোধ না করেই নারায়ণগঞ্জে ক্রোনী গ্রুপের অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেড কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মবিরতি দিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলে বিকেলে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বেআইনিভাবে শ্রমিক ধর্মঘট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির’ কারণ দেখিয়ে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এএইচ আসলাম সানির মালিকানাধীন কারখানাটির ডাইং ও নিটিংসহ বিভিন্ন সেকশনে অন্তত ৭ হাজার শ্রমিক কর্মরত বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশ-৪ এর পরিদর্শক (ইনটেলিজেন্স) সেলিম বাদশা।
কারখানা বন্ধের নোটিশে বলা হয়েছে, গত ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে ‘বে-আইনীভাবে ধর্মঘট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে’ কর্মবিরতি পালন করছে। কর্তৃপক্ষ বারবার তাদেরকে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য অনুরোধ করলেও তারা কর্মবিরতি পালন করে। শ্রমিকদের এ ধরনের কর্মকান্ড বে-আইনী ধর্মঘটের শামিল বিধায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৩(১) ধারা’ অনুযায়ী কারখানার সকল শাখা/বিভাগ বন্ধ ঘোষণা হলো। কারখানার উৎপাদনের কর্মপরিবেশ স্বাভাবিক ও নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কারখানাটি বন্ধ থাকিবে এবং একই সঙ্গে জানানো যাইতেছে কর্মপরিবেশ স্বাভাবিক ও নিরাপদ হওয়া মাত্র পরবর্তী নোটিশের মাধ্যমে অতি দ্রুত কারখানা চালু করার তারিখ জানানো হবে।
ডিসেম্বর মাসের আংশিক ও জানুয়ারি মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি দিয়ে বিক্ষোভ করেন কারখানাটির শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভরত শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, তাদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনে বাধা দিয়ে বহিরাগত লোকজন কারখানার ভেতরে ঢোকে। পরে শ্রমিকদের রোষের মুখে তারা কারখানা থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় কারখানার ভেতরের একটি স্থান থেকে কয়েকটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা উদ্ধারের কথা জানান শ্রমিকরা। শ্রমিকদের দমন করতে এসব রাতেই কারখানার ভেতর ঢোকানো হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। পরে এই অস্ত্র ও লাঠিসোটা জব্দ করে থানায় নিয়ে যায় ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিক্ষোভের পর ‘বেআইনিভাবে শ্রমিক ধর্মঘট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির’ কারণ দেখিয়ে বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাটি।
এই ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার দুইজন শ্রমিক বলেন, ‘আমরা কারখানার ভেতর কোন বিশৃঙ্খলা করিনি। দুইদিন ধরে বেতনের দাবিতে কর্মবিরতি দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেছি। কিন্তু কারখানার মালিক কারখানাটি বন্ধ করে দিয়ে আমাদের সমস্যায় ফেলে দিছে। কারখানা কবে খুলবে তাও বলে নাই কিছু।’
‘বিক্ষোভের সময় আগামী সোমবার বেতন দেওয়ার কথা জানিয়েছিল কারখানা কর্তৃপক্ষ। আমাদের বতেন যেহেতু মোবাইল নম্বরে ঢোকে তাই সোমবার পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করবো। বেতন পেলে কাজে যোগ দেবো। না পেলে আমরা আন্দোলনে নামবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি’, বলেন শ্রমিকরা।
এর আগে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ‘অর্ডার কমে যাওয়ার’ কথা জানিয়ে ক্রোনী গ্রুপের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘ক্রোনী টেক্স সোয়েটার লিমিটেড’ নামে কারখানাটি লে-অফ ঘোষণা করা হয়। প্রতিবাদে পরদিন সকালে কারখানাটির কয়েকশ শ্রমিক ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে বিক্ষোভ করেন।
সেই সময় বলা হয়েছে, ‘আর্থিক সংকটে আমাদের কোম্পানির বায়ারগণ তাদের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে আমাদের কোম্পানির সোয়েটার বিভাগের কার্যক্রম সাময়িকভাবে পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় কারখানায় অর্ডার না থাকায় ও মালিকের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত হওয়ার কারণে এবং নতুন কাজের অর্ডার না আসা পর্যন্ত, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১২ মোতাবেক কারখানা আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শ্রম আইনের ১২(৮) ধারা মোতাবেক ক্রোনী টেক্স সোয়েটার লিমিটেডের সোয়েটার বিভাগ লে-অফ ঘোষণা করা হলো।’
তবে এই ব্যাপারে ক্রোনী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ এইচ আসলাম সানির মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
যোগাযোগ করা হলে শিল্প পুলিশ-৪ এর পরিদর্শক (ইনটেলিজেন্স) সেলিম বাদশা বলেন, ‘কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে কোন প্রকার শ্রমিক অসন্তোষ বা বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় সেই ব্যাপারে শিল্প পুলিশ কাজ করছে। তবে কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের ব্যাপারে কারখানা কর্তৃপক্ষ কাজ করছে বলে জেনেছি।’
Discussion about this post