বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন আনু হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক কাউসার হোসেন এ রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন ।
এ সময় বিজ্ঞ বিচারক কাউসার হোসেন তার আদালতে আইনজীবীদের শুনানীর পর আসামী নূর আলম (৫৫), সারিদ হোসেন (১৯), কাজল (৩২) কে ২ দিন করে এবং রোকসানা আক্তার পুতুল (৪৬) জান্নাত আরা জাহান প্রেরণা (২১) কে ১ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামীদের রিমান্ড শুনানিকালে নিহত আনোয়ার হোসেন আনুর আত্মীয় স্বজনরা কুখ্যাত ঝুট সন্ত্রাসী ও নানা অপরাধের হোতা রাসেল মাহমুদ কে গ্রেফতারসহ অন্যান্য হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, পুলিশ আন্তরিক হলে ২৪ ঘন্টায় যে কোনো মামলার তথ্য বের করতে পারে।
মামলায় অপর দুই আসামি হলেন- ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব নিহত আনুর ভাতিজা রাসেল মাহমুদ (৪২), গোল মোহাম্মদ (৬৫)।
এর আগে ২৬ আগষ্ট (সোমবার) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহের পাশে অবস্থিত একটি বিল্ডিংয়ের লিফটের ফাঁকা অংশ থেকে আনোয়ারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে পরিবারের সাত সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
ঘটনার বিবরণে আরো জানা যায়, মহানগর যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন আনু হত্যায় মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) নিহতের বড় ভাই ফতুল্লা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
অভিযুক্তরা হলেন- ফতুল্লা বিসিক মার্টিন গার্মেন্ট গলি গোল মোহাম্মদের ছেলে রাসেল মাহমুদ (৪২), নিহতের সাবেক স্ত্রী বর্তমান রাসেল মাহমুদের স্ত্রী পাপিয়া আক্তার পান্না (৪২), মাসদাইর আদর্শ স্কুল রোড (হেলেনা কটেজ এর ৯ম তলার ভাড়াটিয়া) নিহতের মেয়ে জান্নাত আরা জাহান প্রেরনা (২১) ও ছেলে সারিদ হোসেন, বাবুরাইল এলাকার করিম মিয়া ছেলে নুর আলম (৪৫), কাজল (৩২) ও মেয়ে রোকসানা আক্তার পুতুল (৪৬)।
আনোয়ার হোসেন আনুর হত্যার সাথে সাথেই ৬ জনকে আটক করে ফতুল্লা থানা পুলিশ ।
তারা হলেন- নিহত আনোয়ার হোসেনের মেয়ে জান্নাত আরা জাহান প্রেরনা (২১) ও ছেলে সারিদ হোসেন (১৯), বাবুরাইল এলাকার করিম মিয়ার ছেলে ও সাবেক স্ত্রী ভাই -বোন নুর আলম (৪৫), কাজল (৩২) ও রোকসানা আক্তার পুতুল (৪৬) ও কাজের মেয়ে।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, নিহত আনোয়ার হোসেন আনুর ভাতিজা রাসেল মাহমুদের চাচার বাড়িতে থাকাবস্থায় চাচীর সাথে অর্থাৎ নিহত আনুর স্ত্রী পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। ২০১৮ সালে জামতলা বাসায় একটি কক্ষে ভাতিজা রাসেল ও সাবেক স্ত্রী পাপিয়া আক্তার পান্নাকে একত্রিত অসামাজিক অবস্থায় ধরে ফেলে আনু ও তার পরিবারের সকলেই।
সেই থেকে প্রতিশোধে আনুর উপর ক্ষুব্ধ হয় রাসেল মাহমুদ।
ভাতিজার সাথে চাচীর প্রেমের সম্পর্কে বিষয়টি নিয়ে পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা হয়। শেষ পর্যন্ত ভাতিজা রাসেল মাহমুদের কারনে আনু তার স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
সাবেক স্ত্রী পাপিয়া আক্তার পান্নাকে ঘর সংসার করার জন্য বিভিন্ন ভাবে বুঝাইলেও আনোয়ার হোসেন এর কথায় কর্নপাত না করে ডিভোর্স দিয়ে রাসেল মাহমুদ এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় পান্নার। এবং এই অসম বিবাহ ঘটনার পর রাসেল তার চাচীকে বিয়ে করে স্ত্রীর বাবার বাড়ী বাবুরাইলের নয়াপাড়ার নতুন সড়কে বসবাস শুরু করে ।
পরে নিহত আনুর ছেলে সারিদ হোসেন ও জান্নাত আরা জাহান প্রেরনাকে পান্নার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। মা পান্নার কথায় ছেলে ও মেয়ে সব করতেন। এবং আনোয়ার হোসেন এর যাবতীয় আয়-রোজগার আনোয়ার এর ছেলে ও মেয়ের মাধ্যমে পান্না ভোগ করতে থাকে। এমনকি তার ক্রয়কৃত গাড়িটাকেও ব্যবহার করতে দিতেন না। এ নিয়ে আনোয়ার কোন প্রকার প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন সময় খুন জখমের হুমকি প্রদান করা হত।
এরপর দেওভোগ ৫৪ এল এন এ রোড এলাকার মৃত ছায়েদ আলী মিয়া ছেলে ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করর্পোরেশন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির এর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন আনু (৪৮) এর লাশ ২৬ আগস্ট মাসদাইরের ফ্লাট বাসার লিফটের নীচে উদ্ধার করা হয়।
এমন ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন আনু হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পাঁচ আসামিকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
মামলায় অপর দুই আসামি হলেন- ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রাসেল মাহমুদ (৪২), গোল মোহাম্মদ (৬৫)।
আদালতে আসামীদের রিমান্ড শুনানিকালে একটি সূত্র বলেন আনোয়ার হোসেন আনুকে হত্যা করে লিফটের ফাকা স্থানে ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা করে বাবুরাইলের বাড়িতে বসে। আনুর ভাতিজা রাসেল, আনুর সাবেক স্ত্রী পান্না, শালক ও সন্তানদের নিয়ে পরিকল্পনার পর এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় ।
এমন ঘটনার পরও আনোয়ার হোসেন আনু হত্যা মামলার অন্যতম আসামী রাসেল মাহমুদ এখনো ফতুল্লার বিসিক এলাকায় ঝুট সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহযোগী সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে অস্ত্রসহ মহড়া দিয়ে যাচ্ছে ।
এদিকে আনু হত্যাকান্ড কে আত্মহত্যা হিসেবে প্রমাণ করতে কোটি টাকার মিশন নিয়ে নাঠে নেমেছে রাসেল মাহমুদ ও তার শেল্টারদাতা প্রভাবশালী চক্র।
Discussion about this post