গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই নারায়ণগঞ্জের চিহ্নিত গডফাদার শামীম ওসমানের বড় ভাই আরেক মাস্টারমাইন্ডার জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন (বিকেএমইএর) পরিচালনা পর্ষদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টানা সপ্তমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতার দাপটে যা খুশি তাই করেছেন । শামীম ওসমান যেন বিতর্কিত ঠিক তেমনি বিতর্কিত ছিলেন সেলিম ওসমান।
ওই সময় অর্থাৎ ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই (বুধবার) বিকেএমইএ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুলভ চৌধুরী এ তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করতে এক বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় । ২০২৩-২৫ মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণকারী নেতাদের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদে মোহাম্মদ হাতেম নির্বাহী সভাপতি এবং মনসুর আহমেদ সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচন করা হয় । একই সঙ্গে সহ-সভাপতি পদে ফজলে শামীম এহসান, অমল পোদ্দার, গাওহার সিরাজ জামিল, মোরশেদ সারোয়ার সোহেল সহ-সভাপতি (অর্থ), আখতার হোসেন অপূর্ব ও মোহাম্মদ রাশেদ নির্বাচিত করা হয় কথিত নির্বাচনের মাধ্যমে।
ওই ঘটনার এক বছর এক মাসের মধ্যেই সেলিম ওসমানের ওই বিতর্কিত কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন করে কমিটি ঘোষনা করে বিকেএমইএ । দীর্ঘদিন মাস্টারমাইন্ডার সেলিম ওসমানের নিয়ন্ত্রণাধীণ চাটুকারখ্যাত বিতর্কিত কমিটি বিলুপ্ত করে বিকেএমইএ’র নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ হাতেম। এছাড়া পরিচালনা পর্ষদে আরও দুটি পরিবর্তন এসেছে। নির্বাহী সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ফজলে শামীম এহসান এবং সহ সভাপতি হিসেবে রয়েছেন মো. শামসুজ্জামান । এই নতুন কমিটিতেও রয়েছে সেই পুরানো চরিত্র ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে কয়েকজন বিকেএমইএ এর সদস্য এবং নিট শিল্প মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গত ২৫ আগষ্ট রবিবার বিকেএমইএ’র ঢাকা কার্যালয়ে বিকেএমইএ পরিচালনা পর্ষদের বোর্ড সভায় নতুন এই নেতৃত্ব নির্বাচন করে । এরপর থেকে সকল ব্যবসায়ীরা মনে করেছেন হয়তো নতুন কিছু দেখতে পারবো । কিন্তু আসলে কি হচ্ছে ? “যে লাউ সেই কদু ! সেই পুরানো চরিত্র ই দেখতেছি !” ব্যবসায়ীরা দাবী করতেছে ওসমান পরিবারের অপরাধীদের ভয়ে দীর্ঘদিন কোন ব্যবসায়ী স্বস্তিতে ব্যবসা করেছে তা কেউ বলতে পারবে না। সকল ব্যবসায়ী ই নানাভবে হয়রানীর শিকার হয়েছেন । এবার মনে হয়েছিলো ওসমান পরিবারের মাস্টারমাইন্ডার সেলিম ওসমান বিদায়ের পর হয়তো মোহাম্মদ হাতেম বিকেএমইএ এর যে ১৪ বছরের দূর্ণীতি তার সকল তথ্য প্রকাশ করে ব্যবসায়ীদের স্বস্তি দিবে । কিন্ত আসলে কি দেখতেছি । বিকেএমইএ তে এখনো সেই মাস্টারমাইন্ডারের চাটুকার চক্র জগদ্দল পাথরের মতো বসে আছে।”
বিকেএমইএ এর মাস্টারমাইন্ডার সেলিম ওসমানের সময় ২০২৩- ২৫ এর পরিচলানা পর্ষদে ছিলো সহ-সভাপতি পদে ফজলে শামীম এহসান, অমল পোদ্দার, গাওহার সিরাজ জামিল, মোরশেদ সারোয়ার সোহেল সহ-সভাপতি (অর্থ), আখতার হোসেন অপূর্ব ও মোহাম্মদ রাশেদ ।
সেলিম ওসমানের বিদায়ের পর মোহাম্মদ হাতেম সভাপতি হলেও নতুন এই কমিটিতে রয়েছে সেই পুরানো কমিটির প্রায় সকলেই। যাদের প্রায় সকলেই ওসমান পরিবার অর্থাৎ সেলিম ওসমানের পা চাটাদের মধ্যে অন্যতম। নতুন এই পরিচালচনা পর্ষদে সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে রয়েছেন মনসুর আহমেদ, সহ সভাপতি হিসেবে আছেন অমল পোদ্দার, গাওহার সিরাজ জামিল, মোরশেদ সারোয়ার সোহেল সহ-সভাপতি (অর্থ), আখতার হোসেন অপূর্ব, মোহাম্মদ রাশেদ।
নতুন এই কমিটির সদস্যরা আজ মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎ করেন। এসময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে বিকেএমইএ‘র নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় । স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বিকেএমইএ নেতৃবৃন্দদের ব্যবসায়ী পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সকল ধরণের সহায়তার আশ্বাস দেন।
সচিবালয়ে সরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেই মাস্টারমাইন্ডার সেলিম ওসমানের অত্যান্ত অনুগত বাধ্যগত কয়েকজন অনুসারী। যারা এই বৈঠকের পর দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া মাস্টারমাইন্ডার সেলিম ওসমান কে সরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে বৈঠকের সকল তথ্য অবহিত করেন বলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে জোড় গুঞ্জনের পর গোয়েন্দা সংস্থা তাৎক্ষনিকভাবেই তদন্ত শুরু করেছে বলে একজন ব্যবসায়ী নিশ্চিত করেছেন।
এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মনসুর আহমেদ, মো. শামসুজ্জামান, আখতার হোসেন অপূর্ব, মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল, মোহাম্মদ রাশেদ, মোস্তফা মনোয়ার ভূঁইয়া ও মিনহাজুল হক। যাদের অনেকেই ওসমানীয় চাটুকার।
এই ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, “মাস্টারমাইন্ডার সেলিম ওসমানের নির্দেশনা মতোই চলছে বিকেএমইএ। যা দুঃখজনক ।“
Discussion about this post