আনোয়ার হোসেন আনু হত্যার পর অভিযোগের প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জবাসী জানতে পারে কতটা ভয়ংকর আর দূর্ধর্ষ নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতা রাসেল মাহমুদ।
চাচা আনোয়ার হোসেন আনুর স্ত্রী পাপিয়া আক্তার পান্না সাথে ভাতিজা রাসেলের পরকীয়ার জের ধরে নানা কেলেংকারী ছাড়াও আনোয়ার হোসেন আনু অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মনির হোসেনের পরিবারে ছিলো দীর্ঘদিন যাবৎ চরম অশান্তিতে। এক প্রকার নরকের (পরলৌকিক ও শাস্তির স্থান) মতো । যার সমাপ্তি ঘটে আনুর জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে। আর এই আনুর মৃত্যূর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক।
২৬ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যায় শহরের মাসদাইর এলাকার একটি ফ্ল্যাট বাসার লিফটের সামনে থেকে হাত পা ভাংগা অবস্থায় তাঁর মরদেহ উদ্ধারের পর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর পর ২৭ আগষ্ট ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন কয়েকজন চিকিৎসক। এমন ঘটনার পর ১ সেপ্টেম্বর (রোববার) দুপুরে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক কাউসার হোসেন আনোয়ার হোসেন আনু হত্যার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে কারাগারে থাকা আসামী নূর আলম (৫৫), সারিদ হোসেন (১৯), কাজল (৩২) কে ২ দিন করে এবং রোকসানা আক্তার পুতুল (৪৬) জান্নাত আরা জাহান প্রেরণা (২১) কে ১ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এই রিমান্ড মঞ্জুরের গত ৫ দিনেও পুলিশ কোন আসামীকে কারাগার থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফতুল্লা থানায় নেয়া হয় নাই নানা অজুহাতে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে রিমান্ড শুনানীর পর পর টালমাটাল পরিস্থিতিতে থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও তদন্ত কর্মকর্তাকে রিমান্ডের ৫ আসামীকে কোন ধরণের মারধর অথবা বিশেষ সুবিদা দিতে ৫ লাখ টাকা এরই মধ্যে হস্তান্তর করেছে প্রধান আসামী রাসেল। দালাল মাধ্যমে ১ অক্টোবর রাতেই ৫ লাখ টাকা (ওসির ৩ লাখ আর দারোগার ২ লাখ) হস্তান্তর করে। এমন গুঞ্জনের পরও এই আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের লক্ষ্যে আসামীদের থানায় নিয়ে আনা হয় নাই।
এদিকে এই চাঞ্চল্যকর আনু হত্যা মামলার ময়না তদন্ত প্রতিবেদন আত্মহত্যা হিসেবে প্রদান করাতে বিশাল অনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে প্রভাবশালী একাধিক চক্র দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে ব্যাপক তদ্বির চালাচ্ছে রাসেল মাহমুদ।
তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ বৃহস্পতিবার ৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২ টা ০৫ মিনিটের সময় হাসপাতালের একাধিক নির্ভরশীল সূত্র জানায়, ‘তদ্বির চলছে আনোয়ার হত্যার প্রতিবেদন আত্মহত্যা করানোর জন্য। তবে কোন অবস্থাতেই এখনো পর্যন্ত কারো কাছ থেকে কোন সুবিদা আদায় করতে পারবে এমন আভাসও পাওয়া যায় নাই। প্রকৃত ঘটনাই আনুর মৃত্যুর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।
খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, এক সময় জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার বলয় থেকে তৎকালীন জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবের ঘনিষ্ট সহচর হয়ে যান। ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতা বনে বিসিকের ঝুট সন্ত্রাসীদের সঙ্গে জড়িয়ে যান রাসেল। আওয়ামীলীগ ক্ষমতা থাকাকালেও বিসিকে ঝুট নিয়ন্ত্রণে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেন তিনি।
একদিকে বিএনপির একটি প্রভাবশালী চক্র যারা বিগত সময়ে আওয়ামীলীগের প্রভাবমালী অপরাধী চক্রের অন্যতম শেল্টারদাতা শামীম ওসমান ও তারে পুত্র অয়ন ওসমান ভাতিজা আজমেরী ওসমান ছাড়াও চেলাচামুন্ডাদের সাথে আঁতাত করে দীর্ঘদিন ঝুট সন্ত্রাসী চারিয়ে আসছিলো। আওয়ামীলীগ ক্ষমতা ছাড়াও পর সেই জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের পদ পদবী ব্যবহার করে আরো আশ্চর্য্যজনকভাবে ভয়ংকর হয়ে উঠে রাসেল মাহমুদ।
৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর থেকে রাসেল মাহমুদ আরো বেপরোয়া হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে সাবেক যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন আনু হত্যা মামলায় তাকে প্রধান আসামী করা হয়েছে। কিন্তু আসামী হয়েও তিনি প্রকাশ্য মাঠে নেমেছেন বিসিক দখলে। সশস্ত্র দলবল নিয়ে ২৯ আগস্ট রাসেল মহড়া দেন বিসিকে। সেদিন সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছে ২জন।
পরপর দুইটি ঘটনা এখনো রাসেল মাহমুদকে গ্রেপ্তার না হওয়ার নিহত আনুর স্বজন ও বিসিকে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে ২৯ আগষ্ট জেলা প্রশাসনের কাছে রাসেলের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আনুর ভাই বোন আত্মীয় স্বজন ও এলাকাবাসী নানাভাবে সভা্ সমাবেশ ও প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে ।
আর এই একদি দিন ভয়ংকর অফরাধী রাসেল ও তার বাহিনী ফতুল্লার বিসিকে পৃথকভাবে মহড়া দিতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার ২৯ আগষ্ট সকালে রাসেল গ্রুপ একটি কারখানায় গিয়ে ঝুট দাবী করেন। তখন জাহাঙ্গীর গ্রুপ জানতে পেরে দুপুরে বিসিকে এসে রাসেল গ্রুপকে ধাওয়া করেন। এসময় জাহাঙ্গীর গ্রুপের দুজনকে ছুরিকাঘাত করে রাসেল গ্রুপের লোকজন বিসিক ছাড়েন। এতে জাহাঙ্গীর গ্রুপ লোকবল বাড়িয়ে বিসিকে অবস্থান নেয়। এসময় মালিক শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়ে। তখন খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কয়েকটি বাহিনী বিসিকে অবস্থান নিলে কৌশলে জাহাঙ্গীর গ্রুপ পালিয়ে যায়।
অন্যদিকে মহানগর যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামী করা হয় ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রাসেল মাহমুদকে। মামলা আরো আসামীরা হলেন রাসেলের বাবা গোল মোহাম্মদ, নূর আলম, চাচী রোকসানা আক্তার পুতুল, সারিদ হোসেন, কাজল, জান্নাত আরা জাহান প্রেরণা। এর আগে ২৭ আগষ্ট শহরের মাসদাইরস্থ কেন্দ্রীয় ঈদগাহের পাশে অবস্থিত একটি বিল্ডিংয়ের লিফটের ফাঁকা অংশ থেকে আনোয়ারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে পরিবারের সাত সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
নিহত আনুর ভাই বোন ও পরিবারের অন্যান্যদের অভিযোগ থেকে আরো জানা যায়, রাসেল অতীতে অনেকবার আনোয়ার হোসেন আনুকে মারার চেষ্টা করে যা কোনভাবে সফল হয়নি। রাসেল আমাদের সম্পর্কে ভাতিজা হয়, আমার জেঠাতো ভাইয়ের ছেলে। রাসেলের সাথে তার স্ত্রীর পরকিয়ার সম্পর্ক জানতে পারার পর থেকে আমার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন আনু তাকে বাড়িতে আসতে বারণ করে কিন্তু রাসেল বিভিন্ন উপায়ে তার স্ত্রী পান্নার সাথে যোগাযোগ বজায় রাখে। আর এ বিষয়টি এক পর্যায়ে পারিবারিকভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
দেওভোগের বাড়িতে বসবাসের কারণে স্ত্রী পান্না ও ভাতিজা রাসেলের সাথে সহজেই মেলামেশা করতে না পারার কারণে সে স্বামীকে অন্যত্র বাসা নিতে চাপ প্রয়োগ করে। স্বামী আনোয়ার হোসেন পৈতৃক ভিটা ছেড়ে মাসদাইর একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিতে বাধা হয় এবং সেখানে তার অনুপস্থিাততে তার ছেলে মেয়ের সহযোগিতায় রাসেল বিভিন্ন সময় যাওয়া আসা করতে থাকে। আনোয়ার তার ফ্ল্যাটে রাসেলের যাওয়া আসার খবর জানতে পারার পর তার স্ত্রীকে চাপ দিলে সে আনোয়ার হোসেনকে মারার জন্য ২০১৯ সাল ২ জানুয়ারী আমলাপাড়া এলাকার একটি ফ্ল্যাটে রাসেলের সাথে দেখা করে এবং অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে তৎসময়ে ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি করে।
আর এই খবর আনোয়ার জানতে পেরে সাথে সাথে সে তার বন্ধু বান্ধব নিয়ে আমলা পাড়া ছুটে যায় এবং অপ্রীতিকর অবস্থায় তাদের দুইজনকে হাতেনাতে ধরে। ধরার পর পান্না ও রাসেল উভয়েই হাত জোড় করে ক্ষমা চায় আর ওয়াদা করে তারা আজকের পর থেকে আর কোনো যোগাযোগ রাখবে না। কিন্তু তারপরেও তারা অবৈধ যোগাযোগ বজায় রাখে। এ বিষয় নিয়ে পারিবারিকভাবে অশান্তি দেখা দিলে স্ত্রী পান্না পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে স্বেচ্ছায় আনোয়ার হোসেন আনুকে ২০২০ সালের ৩০ জুন তালাক নোটিশ পাঠায়।
এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েকে তার বাবার কাছে রেখেই ২০২১ সালের ৩ ডিসেম্বর রাসেলের সাথে বিবাহ কাজ সম্পন্ন করে। মায়ের প্ররোচনায় ছেলে মেয়েও বাবার সাথে প্রতিনিয়ত খারাপ ব্যবহার করতে থাকে এমনকি মাঝে মাঝে ছেলে মেয়ে বাবার গায়ে হাত তুলতো, কিন্তু আমার ছোট ভাই লজ্জায় কাউকে কিছু বলতো না। ওরা প্রতিনিয়ত মানসিক যন্ত্রনা দিয়ে নাস্তানাবুদ করে রাখতো। আমরা পারিবারিকভাবে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি এই নৃশংস হত্যাকান্ড তার দুই সন্তান, তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী পান্না ও পান্নার বর্তমান স্বামী রাসেল ঘটিয়েছে। এই রহস্যজনক হত্যাকান্ডের ঘটনায় আইনি সহায়তা পেতে আমরা ফতুল্লা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করি।
Discussion about this post