শতাধিক সন্ত্রাসী, স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী ও পুলিশের কয়েকজন অসাধৃু কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে বন্দর উপজেলার সাবদী মন্দিরে উপস্থিত হয়ে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনকে এক প্রকার জোড় পূর্বক মন্দিরে নিয়ে এনে সালিশীর মাধ্যমে বৃদ্ধ প্রাণ বল্লব সরকার (৬৫) হত্যা মামলা ধামাচাপা দিতে প্রাণপণ চেষ্টা চালায় হত্যা মামলার আসামী মামুন মিয়া ও তার সহাযোগিরা সন্ত্রাসীরা ।
রোববার (২৮ আগস্ট ) বিকেলে মন্দিরে দাঁড়িয়ে বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি দীপক সাহা সকলের উদ্দেশ্যে সাফ জানিয়ে দেন এই ঘটনা কোন অবস্থাতেই আমরা এমন স্পর্শকাতর মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনা মীমাংশা করতে পারবো না।
এমন ঘোষনার পর ঘাতক ও নানা অপরাধের হোতা মামুন মিয়ার ভাই রোমান মিয়া, জামান মিয়া ও চাচাতো ভাই বাসেদ মিয়া নিহত প্রাণ বল্লব সরকারের পরিবারসহ উপস্থিত সকলের সামনেই হুমকি দিয়ে বলেন, ঘটনা মীমংশা আগে হউক তারপরে দেখাবো কোন .(……. অকথ্য গালিগালাজ……..) এই সাবদীতে থাকতে পারে।
চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি দীপক সাহার এমন মন্তব্যের পর কয়েকজন সাংবাদিক, পুলিশের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা জোড়ালো তদ্বির চালায় বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চদ্র সাহার কাছে।
এমন নানা ধরণের হুমকিতে আতংকিত উপস্থিত একজন সনাতন ধর্মালম্বী বৃদ্ধ তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে মুঠোফেনে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, আমরা হিন্দুরা মনে হয় এই বন্দরে আর থাকতে পারবো না। একদিকে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আমাদেরকে নানাভাবে প্রাণ বল্লব সরকারের হত্যা মামলা তুলে নিয়ে মীমাংশা করতে চাপ দিচ্ছে । একই সাথে এই ঘটনায় চেয়ারম্যানকে নিয়ে আসছে । আবার দেখতেছি কয়েকজন সাংবাদিক ওই খুনি মামুনের পক্ষে থানায় ও আমাদের সাবদী এলাকায় দৌড়ঝাপ চালাচ্ছে । আবার পুলিশ মামুন মিয়াকে গ্রেফতারও করতেছে না । খুনি মামুন মিয়া ও তার ভাই ব্রাদাররা উল্টো হুমকিও দিচ্ছে।
মামুন মিয়া তো খুন করেন নাই, তাকে খুনি বলেন কেমনে এমন প্রশ্নে এই বৃদ্ধ বলেন, প্রাণ বল্লব কে তো সকলের সামনেই মারধর করছে মামুন মিয়া, নাকি ? এমন মারধরের পর তার অবস্থার বেগতিক দেখে মামুন মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন যে বৃদ্ধ প্রাণ বল্লব সরকারের মুখে বিষ ঢেলে দেন নাই তার নিশ্চয়তা কি / প্রমাণ কি ? তদন্ত করলেই বেড়িয়ে আসবে আসল ঘটনা। আর তদন্ত করবো কে ? পুলিশ ! তারাতো মামুন মিয়ার সাথে সিগারেট খায়, আড্ডা দেয় ! গ্রেফতার তো করে না । নিহত প্রাণ বল্লবের ছেলে সম্ভু সরকার মামলা করছে, সে দেখে নাই কি ঘটনা হয়েছে । লোক মুখে শুনে এই অভিযোগ দিয়েছে। আর এমন মারধরের পর যদি বিষ খেয়ে আত্মহত্যাই করে থাকে তবে কি মামুন মিয়া অপরাধ করেন নাই ?
দীর্ঘ আট মিনিট ৫২ সেকেন্ডের আলোচনায় এই বৃদ্ধ উল্টো কয়েকটি প্রশ্ন তুলে আরো জানায়, এই মামুন মিয়া কি ছিলো আর এখন কি ? তার বাড়িতে পুলিশের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার নিয়মিত আনাগোনা রয়েছে । তারা নাকি বিভিন্ন থানার ওসি। দিনে ও রাতে মামুন মিয়ার বাড়িতে ওই কয়েকজন অসাধু ওসি ছাড়াও কোন কোন ক্ষমতাধর অপরাধীরা মদের আসর বসাতো । একই সাথে খোলামেলা জায়গায় মদের আসরের সাথে অসাধু ওই ওসিদের মনোরঞ্জনের জন্য নারীদের আনাগোনাও ছিলো। ওই আসরে ওসি ছাড়াও ডিবি পুলিশ নিয়মিত ই নানা অপকর্ম করতো। এই দৃশ্য এলাকার কে না দেখেছে ? আর ওসিদের আনাগোনাে এই সাবদী এলাকার কে না জানে ? সকলের সাথে পরিচয়ও মামুন মিয়া করিয়ে দিতো ওসিদের সাথে। আর সেই অসাধু ওসিদের কেউ কেউ এখন এই খুনী মামুনের জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নামছে । যার কারণে টাকার বিনিময়ে প্রাণ বল্লব সরকার (৬৫) হত্যা মামলা তুলে নিতে দৌড়ঝাপ চালাচ্ছে ।
ঘটনার বিবরণে খোজ নিয়ে জানা যায়, ২৩ আগষ্ট (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ৮টায় নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার সাবদি – দীঘলদী ঝাড়তলা অটো স্ট্যান্ডের সামনে বৃদ্ধ প্রাণ বল্লব সরকারের হোটেলে নাস্তা নিতে আসেন একই এলাকার মামুন মিয়ার স্ত্রী রেশমা আক্তার । হোটেলে কাস্টমার বেশী থাকায় নাস্তা দিতে দেরী হবে বলার পর রেশমা আক্তার বাড়ি গিয়ে তার স্বামী মামুন মিয়াকে পাঠায়। মামুন মিয়া হোটেলে এসেই কোন কথা না জিজ্ঞেস করেই অনেকের সামনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, চর থাপ্পর, লাথি ঘুষি দিয়ে শাটের কলার ধরে বৃদ্ধ প্রাণ বল্লব সরকারকে মারধর করে । এমন ঘটনা সহ্য করতে না পেরে সাথে সাথেই বৃদ্ধ প্রাণ বল্লব সরকার হোটেলে বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্ট করে বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করে নিহতের পরিবার।
প্রাণ বল্লব বিষপানের সাথে সাথেই হোটেলের লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতাল পরে ঢাকা নেয়ার পথে অবস্থার অবণতি হলে ফের খানপুর ৩শ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আনার পর সেখানেই মৃত ঘোষনা করে চিকিৎসক ।
পরবর্তীতে নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের পর বন্দর সাবদী শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন করে থানায় অভিযোগ দায়ের করে নিহতের পুত্র সম্ভু সরবকার (৩৫), কন্যা গীতা রাণী সরকার (৪০) ও উজ্জল সরকার (৩০)।
শুক্রবার প্রাণ বল্লব সরকারের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান চলাকালে নারায়ণঞ্জ নিউজ আপডেট এর প্রতিবেদক নিহতের বাড়ি উপস্থিত হলে মটর সাইকেল মহড়ার চিত্র দেখা যায় । একই সাথে এই ঘটনায় কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতেও রাজি হয় নাই ।
এমন নির্মম ঘটনায় এখনো কেউ মুখ খুলতেও রাজি হচ্ছে না মামুন মিয়ার ভয়ে । ভয়ে ভয়ে এই পরিবার শ্রাদ্ধ কার্য্য করাকালীন সময়েও বলেন, “আমাদের তো এখানে থাকতে হইবো। নাইলে আমদের পৈত্রিক ভিটা ছাইরা চইল্লা যাইতে হইবো।








Discussion about this post