“কি কাম করমু । শিখছি এইটা । সারা বছর তেমন কোন কাম থাকে না । ঈদ আইলে একটু কাম হয়। আর বাকি বছর ই বইয়া বইয়া সময় কাটে । কামারের জীবন এই আগুনের মতোই। সেব সময় কামারের চুলায় আগুন না থাকরেও পেটের আগুণ কোন সময়ই নিভে না । কামারের চুলায় আগুন থাকলে পেটের আগুন নিভে, আর চুলার আগুন না থাকলে পেটের আগুন ধাউ ধাউ করে জ্বলে।“ এভাইবেই নিজের কষ্টের কথা বলেলেন অরূন কর্মকার নামের এই কামার।
যিনি দীর্ঘদিন যাবৎ শহরের বিভিন্ন এলাকায় কামারের কাজ করে কষ্টের সাথে জীবন যাপন করছেন।
ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। এখন তড়িঘড়ি চলছে কোরবানির প্রস্তুতি। তার মধ্যেই বেড়েছে কামারদের ব্যস্ততা। একদিকে কোরবানির পশু কেনায় ব্যস্ত স্বচ্ছল পরিবারগুলো, অন্যদিকে প্রায় কয়েকগুণ বেশি সমানুপাতিক হারেই দা, বটি, ছুরি কিংবা কোরবানি পশু কাবু করার অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কামাররা।
ঈদের ১৫/২০ দিন আগের থেকেই এই ব্যস্ততা বাড়ে। চলে ঈদের আগের শেষ রাত পর্যন্ত। সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জ শহরের জল্লারপাড়া লেকপাড়, কালীর বাজার, নিতাইগঞ্জসহ অন্যান্য উপজেলায় বেশ কয়েকটি কামার দোকানে ঘুরে দেখা গেছে আগের তুলনায় কাজ বেড়েছে কামারদের। অথচ সারা বছরই তাদের কাটে অলস সময়।

দোকান ভাড়া, দোকানে পণ্য সামগ্রির জন্য খরচ করা পুঁজি সব কিছু নিয়েই কোরবানির ঈদের জন্য একান্ত চিত্তে অপেক্ষার প্রহর গুণে কামার দোকানের কর্মচারীরা। পুরো বছর অত্যন্ত নিম্ন আয়েই তাদের কাটাতে হয় দিন। কেউ কেউ পাইকারি পণ্য দিয়ে কিছুটা অলস সময়ে নিজেদের ব্যস্ত রাখার ও চেষ্টা করেন।
দোকানিরা বলছেন, ঈদ আসায় তাদের ব্যস্ততা অনেক বেড়েছে। আগে হয়তো সকাল ১০টায় দোকান খুলতো। রাত গড়াতেই দোকান বন্ধ করা হতো। তবে ঈদ মৌসুমে সকাল ৬টা থেকেই তাদের কর্মযজ্ঞ শুরু হয় আর চলে মধ্য রাত পর্যন্ত। এমনকি ঈদের আগের রাতেও তারা সারারাত পর্যন্ত জেগে কাজ করতে হয়। এ সময়ে কিছুটা মোটাদাগে ইনকাম কমবেশি সবারই হয়।
দোকানদার অরূন কর্মকার জানান, প্রতিটি ছোট ও বড় ছুরি ধারালো করার কাজে কামাররা মজুরি নিচ্ছেন ৩০-৫০ টাকা। কেউ কেউ ৫০-১০০ করেও নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। আবার একটি বটি কিনতে ক্রেতাদের ৩০০-৪০০ টাকার অংক গুনতে হয়। আর বড় ছুরি কিনতে লাগে ৬০০-৭০০টাকা।
একই সঙ্গে একটি তৈরিকৃত নতুন দা কিনতেও সমপরিমাণ অর্থ গুনছেন ক্রেতারা। তবে টাকার অংক ঈদ মৌসুমে বেড়ে বা কমে যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক কামাররা। কাজ অনুযায়ীই তারা মজুরি আদায় করেন। সময়ভেদে অর্থ বাড়িয়ে নেন না বলেই স্বীকার করছেন তারা।
দেখা যায়, প্রায় সব কামারের দোকানেই লোহার সামগ্রী থরে থরে সাজানো। ক্রেতাদের অনেকে আবার নিজস্ব ধাতব পদার্থ নিয়ে আসছেন দা-বটি তৈরি করতে। কেউবা নিচ্ছেন কিনে। তবে দা বটির চাহিদা থাকা সারা বছরই।
কোরবানি ঈদের আগ মুহুর্তে দা-বটির কেনাবেচা বাড়লেও নতুন মাত্রা যোগ করে নানা আকারের ছুরি, ধামা, রামদা ইত্যাদি সামগ্রী। সারা বছর বিক্রি না হওয়ায় ছুরি, ধামা, রামদা ইত্যাদি অল্প দাম হলেও ছেড়ে দেন বলেই জানা গেছে।
এদিকে দেখা গেছে, আগে প্রতি বস্তা কয়লা কামাররা ১০০ টাকায় কিনতেন। বর্তমানে বস্তা প্রতি সেই কয়লা তারা কিনছেন ৩ হাজার টাকায়। যদিও তার সঙ্গে মজুরিও বাড়ছে।
ফলে এই ঈদ আসলে কামারদের কিছুটা উপার্জন হলেও সারা বছর জুড়েই চলে অভার অনটনে এই কর্মজীবীদের সংসার ।









Discussion about this post