নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৪৮ মাস উপলক্ষে আজ ৮ জুলাই (মঙ্গলবার) বৃস্টিস্নাত সন্ধ্যায় শহরের আলী আহম্মদ চুনকা পাঠাগার ও নগর মিলনায়তনের বারান্ধায় নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচির আয়োজন করে।
এ সময় নিহত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, শেখ হাসিনা দেশের বিচার ব্যবস্থাকে যেভাবে ধ্বংস করে সরকার নিয়ন্ত্রিত করে রেখেগেছে তা, এখনো স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। তার দলের দুর্বৃত্ত, মাফিয়া, গডফাদারদের হাতে জিম্মি হয়েছিল সারা দেশের জনগণ। তার নির্দেশে সাড়ে ১১ বছর ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচার প্রক্রিয়া আবার শুরু করলেও তাতে এখনো পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
রফিউর রাব্বি বলেন, যারা ত্বকীকে হত্যা করেছে সেই শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, সন্ত্রসী শাহ নিজাম তারাই গত জুলাইয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-শিশুদের উপর গুলি চালিয়েছে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আগে শেখ হাসিনা ছিলেন ত্বকী হত্যার বিচারের জন্য মূল বাধা, কিন্তু এখন বাধাটা কোথায়? এখনো ওসমার পরিবারের দোসররা বিভিন্ন জায়গায় বহাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। সকল বক্তা ত্বকী হত্যার নির্দেশদাতা শামীম ওসমান সহ সকল ঘাতকদের আইনের আওতায় এনে দ্রæত অভিযোপত্র প্রদানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানান।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শিশু সংগঠক রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দীপু, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সিপিবির শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুজয় রায় চৌধুরী, বাসদ জেলা সদস্য প্রদীপ সরকার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহাসহ অন্যান্যদের বক্তব্যের পাশাপাশি রফিউর রাব্বি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জে ত্বকী সহ বহু হত্যায় অভিযুক্ত শামীম ওসমান পরিবার সহ পালিয়ে গেলেও তাদের দুর্বৃত্ত-সন্ত্রাসীচক্র আজকে বিএনপির বিভিন্ন দলে, গ্রুপে যুক্ত হয়েছে। নতুন করে দুর্বৃত্ত, মাফিয়া, গডফাদার তৈরি হচ্ছে। হাট-বাজার, ঘাট, পরিবহন, প্রতিটি ক্ষেত্র নতুন করে দখলে গিয়েছে। অভ্যুত্থান উত্তর বাংলাদেশে জন-আকাঙ্খা অনুযায়ী এখনো বদল ঘটেনি। সরকার মব সৃষ্টিকারী দুর্বৃত্তদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে।
প্রসঙ্গতঃ, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজো পেশ করা হয় নাই। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটসহ অন্যান্য সংগঠন।









Discussion about this post