রাজধানী ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি এলাকায় রাজউক কর্মকর্তাদেরঘুষ চাড়া কোন ভবন কেউ নির্মানকরতে পেরেছেন কিনা তা নিয়ে সথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে জনমনে । এমন কোন ভবন মালিক নাই যিনি বা যারা নারায়ণগঞ্জ সদর থানা সংলগ্ন রাজউক জেলা কার্যালয়ে ঘুষ না দিয়ে ভবন তৈরী করতে পেরেছন ! হাজারো এমন ঘুষের উদহারণ থাকার পরও সরকারের অর্থায়নেএই ঘুষখোরদের লালন পালন করা হচ্ছে বছরের পর বছর যাবৎ
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) মাইডাস সেন্টারে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘রাজউক থেকে বিনা ঘুষে সাধারণ মানুষ সেবা পেয়েছেন, এমন ঘটনা বিরল। রাজউক কর্মকর্তা, দালাল ও সেবাগ্রহীতাদের একাংশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে চুক্তি করে সুনির্দিষ্ট হারে ঘুষ নেওয়া হয়। রাজউক ও দুর্নীতি একাকার এবং সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, রাজউকে দুর্নীতি ও অপব্যবস্থা রয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। পরিকল্পনা প্রণয়ন, উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার প্রতিষ্ঠানকে আবার নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে গোড়া থেকে স্বার্থের দ্বন্দ্ব ছিল। সেটিই অনিয়ন্ত্রণ, অব্যবস্থাপনা, নিয়ম-নীতির লঙ্ঘন ও রক্ষককে ভক্ষকের ভূমিকায় রূপান্তরিত করার জায়গাটি তৈরি করেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাড়পত্র এবং নকশা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন সম্পর্কিত সেবা গ্রহণের জন্য অবৈধভাবে অর্থ আদায় করেন রাজউকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের জন্য জরিপ বাবদ ব্যক্তি পর্যায়ের গ্রাহক থেকে নেওয়া হয় দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা। রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের কাছ থেকেও একই পরিমাণ নেওয়া হয়। রাস্তা প্রশস্ত দেখানোর জন্য ব্যক্তির কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেয় রাজউক। দশতলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের জন্য ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র বাবদ ব্যক্তিকে দিতে হয় ১৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা। আর ডেভেলপারদের দিতে হয় এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা। দশতলার ঊর্ধ্বে ভবন নির্মাণের জন্য ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র বাবদ ডেভেলপারদের দিতে হয় তিন থেকে ১০ লাখ টাকা। দশতলা পর্যন্ত নকশা অনুমোদনের জন্য ব্যক্তিকে দিতে হয় ৫০ হাজার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা এবং ডেভেলপারদের দিতে হয় দুই থেকে দশ লাখ টাকা। দশতলার বেশি ঊর্ধ্ব ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য ব্যক্তিকে কত দিতে হয় সে তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের ঘুষ হিসেবে দিতে হয় ১৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা। বড় প্রকল্পের জন্য ডেভেলপারদের দিতে হয় ১৫ লাখ থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত। এছাড়া নকশা অনুমোদনের জন্য পরিদর্শনে গেলে রাজউক কর্মকর্তাদের দিতে হয় পাঁচ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।
রাজউকের প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ও টিআইবির গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, রাজউকে নবম থেকে বিশতম গ্রেড পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, স্বজনপ্রীতি, চেয়ারম্যানের ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া প্রেষণে নিয়ােগের ক্ষেত্রে কারিগরি পদে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয় না। কিছু ক্ষেত্রে রাজউকের স্থায়ী কর্মকর্তাদের পদোন্নতি না দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার সুবিধাজনক এলাকা বা জোনে পদায়ন ও বদলি এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রেও একই ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বিদ্যমান। পছন্দনীয় স্থান বা পদে দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৩০ হাজার থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত নিয়ম-বহির্ভূতভাবে লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।
টিআইবির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (গবেষণা ও পলিসি) ফাতেমা আফরোজ ও ফারহানা রহমান গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। এসময় টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়েরও উপস্থিত ছিলেন।









Discussion about this post