গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ত্রাণ শাখার মারা যাওয়া কর্মচারী মঞ্জুর হোসেন (৫৭) করোনা পজিটিভ বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার।
শনিবার ১৮ এপ্রিল রাতে মৃত ওই ব্যক্তির স্ত্রী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শামীম বেপারী স্বাক্ষরিত শোকবার্তায় জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সকাল নয়টায় সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ হসপিটাল লিমিটেড থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
ওই ব্যক্তির স্ত্রী বলেন, তাঁর স্বামীর মঞ্জুর হোসেন করোনার কোনো উপসর্গ ছিল না। তাঁর আগে ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিল। কিছুদিন ধরে করোনা পরিস্থিতির কারণে তাঁর কাজের অনেক চাপ যাচ্ছিল। তাই নিয়মিত ওষুধ খেতে পারেননি। বাড়িতে এলেই বলতেন শরীরটা দুর্বল লাগছে। গত বুধবার রাতে তাঁর পেটে গ্যাস চাপ দেয়। গ্যাসের ওষুধ খেলেও কমেনি। একপর্যায়ে তিনি দুবার পাতলা পায়খানা করেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকার বাড়ি থেকে তাঁকে সাইনবোর্ড প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ হসপিটাল লিমিটেডে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর স্বামীর সোয়াবের নমুনা করোনা পরীক্ষার জন্য রেখে দেয়। লাশ রাজধানীর খিলগাঁওয়ে দাফন করা হয়।।
গতকাল শুক্রবার রাতে তিনি মুঠোফোনে এসএমএস পান তাঁর স্বামীর করোনা পজিটিভ এসেছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করা হলে সেই রিপোর্ট আমরা জানতে পারব না।’
বুধবার ১৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে করোনা দুর্যোগে সরকারে নির্দেশনা বাস্তবায়ন , ঘরে ঘরে খাদ্য পৌছে দেওয়া, বাজার মনিটরিং , জনগণকে সচেতন, করোনা আক্রান্ত রোগীর বাড়ীর লকডাউন করা সহ যাবতীয় কাজ নারায়ণগঞ্জ প্রশাসন নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন। আর করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অদৃশ্য দানব করোনায় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের দুই জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট । তারা হলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (জেলা ই- সেবা কেন্দ্র) তানিয়া তাবাসসুম, সহকারী কমিশনার (গোপনীয় শাখা, সাধারণ শাখা, ব্যবসা বানিজ্য শাখা, লাইব্রেরী শাখা) আব্দুল মতিন খান। তারা দুইজন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে তানিয়া তাবাসসুমের স্বামী ও তার পরিবারের আরো একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তার বাসা ঢাকার বাসাবো এলাকায় । সেখানে তিনি কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা তাঁদের করোনা পজিটিভের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন গণমাধ্যম কে জানান, মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কোয়ারেন্টিনে আনতে হবে। তিনি বলেন, ‘যাঁদের করোনা ধরা পড়ছে, তাঁদের অনেক মানুষ ঘৃণা করতে শুরু করেছে। মনে করা হচ্ছে তিনি অনেক বড় অপরাধ করে ফেলছিলেন। অথচ আমাদের ওই মানুষগুলোকে আলাদা রেখে সাপোর্ট দিতে হবে। তাহলেই তাঁরা সুস্থ হয়ে উঠবেন।’ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের করোনা পজিটিভ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ও আগে থেকে অসুস্থ ছিল। তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু আমি অনেক দিন যাবৎ অফিসে যাই না, তাই বিষয়টি সঠিক বলতে পারছি না।’








Discussion about this post