২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারী থেকে ২০২৪ সালে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় অপকর্মের পর ব্যাপক আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনাসহ সকল নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। পতন ঘটে আওয়ামীলীগ সরকারের। সেই সাথে পালিয়ে যায় বিকেএমইএ এর বিতর্কিত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবীদার বারবার রাস্ট্র ক্ষমতাবলে দখলকারী নেতা সংসদ সদস্য ওসমান পরিবারের সকল সদস্যদের মতোই এমপি সেলিম ওসমান।
একই সাথে রাস্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে সেই সেলিম ওসমানের অত্যান্ত আস্থাভাজন নেতা সেলিম ওসমানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত রাজাকারপুত্র খালেদ হায়দার খান কাজল কে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের বিতর্কিত সভাপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হলেও সেও পালিয়ে যায় নানা অপকর্ম করেই ।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ব্যাপক প্রভাবের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে সেই পুরানো বিতর্কিত কায়দায় নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করেই বিকেএমইএ এবং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হিসেবে বিতর্কিত পন্থায় অধিষ্ঠিত করা হন সেই পলাতক সেলিম ওসমানের অত্যান্ত আস্থাভাজন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাতেম। একই সাথে চর দখলের মতো নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হিসেবে মডেল গ্রুপের কর্ণধার মো: মাসুদুজ্জামান দাডিয়ত্ব প্রহণ করেন।
রাস্ট্রীয় ক্ষমতার পট পরিবর্তনের রেশ কাটতে না কাটতেই এই দুই সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ও মো: মাসুদুজ্জামান গত সাত (৭) সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে আল্টিমেটাম প্রদান করেন, `ব্যবসায়ীদের উপর সন্ত্রাস চাঁদাবাজদের হুমকি, ধামকি চলছে। গত কয়েকদিনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ চেম্বার নিজেরাও আক্রান্ত। দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেছে, ৩ লাখ টাকা দিয়ে মিটিয়েছি। সাত লাখ টাকার জন্য চাপ আছে। ভয় ভীতি দেখিয়ে রপ্তানি মুখি তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমই এর কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা নিয়েছে। এক পয়সাও আর চাঁদা দিবো না চাঁদার টাকা ফেরত দিতে হবে। চাঁদা দিয়েছি চাঁদা ফেরত চাই। না হলে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শহীদ মিনারে লাল কার্ড দেখানো হবে। প্রয়োজনে শহর থেকে বের করে দেব। দলীয় প্রধানদের লিখিত অভিযোগ দেব। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজদের নারায়ণগঞ্জে কোন স্থান নেই।‘
এমন হুমকির ২২ দিনের মধ্যে এক (১) অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে ওসমান পরিবারের অত্যান্ত আস্থাভাজন ব্যবসাযী নেতা মোহাম্মদ হাতেম বিকেএমএই এর কার্যালয়ে বসে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ঘোষনা দেন নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর প্রভাবশালী চাঁদাবাজরা বিকেএমইএ এবং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স থেকে যে ৮ (আট) লাখ টাাক চাঁদা নিয়েছিলো তা ফেরত দিয়েছে ।
এক প্রকার ঢাকডোল পিটিয়ে এমন চাঁদা দেয়া এবং চাঁদা আবার ফেরত আনার সংবাদটি প্রকাশ করে গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুরে শহরের চাষাঢ়ায় ব্যবসায়ী সংগঠন বিকেএমইএ’র প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সভাপতি মো. মাসুদুজ্জামান।
এই সময় বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমসহ আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের মাসুদুজ্জামান জানান, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ এবং আরেকটি ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। পরে যারা চাঁদা নিয়েছিলেন তাদের কাছ থেকে টাকাগুলো ফেরত আনা হয়েছে। আমি তাদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, এটা ভালো কাজ না। তারা বুঝেছে এবং টাকা ফেরত দিয়েছে। এটা একটি শুভ সূচনা নারায়ণগঞ্জ তথা বাংলাদেশের জন্য। এ ধরনের কাজ যাতে আমরা আর না করি। আমরা ব্যবসায়ীরা কোনো দল করি না, আমাদের কোনো দলীয় পরিচয় নেই। আমরা ব্যবসা করি। আমাদের স্বস্তি, শান্তিতে থাকতে দেন। নারায়ণগঞ্জে ঝুটের জন্য বিকেএমইএ, চেম্বারের উপর বিভিন্ন ব্যক্তি চাপ সৃষ্টি করছে। যাতে আমরা এটি বন্টন করে দেই। কিন্তু এটা আমাদের কাজ না।’
এ সময় বিকেএমইএ এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘মাসুদ দায়িত্ব নেওয়ার পরই ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা পালন করেছেন। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরে চেম্বার থেকে ৩ লাখ এবং আরেকটি অ্যাসোসিয়েশন থেকে আমার মাধ্যমে আরও ৫ লাখ টাকা চাঁদা দেয়া হয়েছিল। মাসুদ দায়িত্ব নিয়ে সে টাকা ফেরত আনার ব্যবস্থা নেয়। যেদিন সে চেম্বারের দায়িত্ব নেয় সেদিনই সে বলেছিল, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে এবং চাঁদার টাকা ফেরত দিতে হবে। আল্টিমেটলি সেটা সে করেছে। সেজন্য মাসুদ এবং যারা টাকা ফেরত দিয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানাই। তারা বিষয়টি অনুধাবন করেছে এবং ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করে, তাদের পাশে থাকার মতো অবস্থান তৈরি করেছে।’
এমন সংবাদ সম্মেলনে নানা প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেন নাই এই নেতারা। কারা এই চাঁদা নিয়েছিলো সেই তথ্যও প্রকাশ করেন নাই ওসমান পরিবারের আস্থাভাজন সেই নেতা মোহাম্মদ হাতেম ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুজ্জামান।
এমন সংবাদ সম্মেলনের পর নগরীর অনেকেই কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “এই চাঁদাবাজির ঘটনা আবার নতুন করে অভিনব নাটক মঞ্চায়িত হলো। নগরবাসীকে নিজেদের খুব প্রভাবশালী বোঝানোর জন্যই এই নতুন নাটক ! নইলে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার অধিকারী সেনাবাহিনী থাকাবস্থায় কত বড় ক্ষমতাবান হলে বিকেএমইএ ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা নিতে পারেন, আবার তাদের কাছ থেকে সেই চাঁদা ফেরত আনা যা অত্যান্ত হাস্যকর। ধমকে চাঁদা দিলেন আবার ফের আনলেন ধমকেই !“ এমন নানা সমালোচনার ঝড় বইছে নগর জুড়ে।
Discussion about this post